আপনি কেমন পথচারী?

পথচারীদের হাঁটাচলার ধরনের ওপর ভিত্তি করে নানা ভাগে ভাগ করলেন মো. মিকসেতু


লাটসাহেব পথচারী

সিগন্যালের পাশেই ওভারব্রিজ। কিন্তু ওদিকে তিনি তাকাবেনও না। আবার সিগন্যাল পড়া পর্যন্ত অপেক্ষাও করবেন না। এর মানে এই না যে তিনি হুট করে রাস্তা পার হয়ে বসবেন। ওই যে বলা হলো লাটসাহেব পথচারী। এই লাটসাহেব শ্রেণির পথচারী সিগন্যালে ঘাপটি মেরে থাকেন। যখন তাঁর আশপাশে অপেক্ষায় থাকা অন্য পথচারীরা হুট করে দৌড় দেন, তখন সেই মুহূর্তের সুযোগ নিয়ে তিনিও রাস্তার মাঝখান দিয়ে পার হয়ে যান।

নবাব সিরাজউদদৌলা পথচারী

এই শ্রেণির পথচারীরা একটু কল্পনাপ্রবণ। তাঁরা ভাবেন, আজ গাড়ি-ঘোড়া না থাকলেও তাঁদের দাদার দাদারা ছিলেন নবাব, রাজা, বাদশার বংশধর। কাজেই নবাবি ব্যাপারটা আচার-আচরণে প্রকাশ করে ফেলা তাঁদের বংশীয় দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব থেকেই তাঁরা ওভারব্রিজ, ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল, দ্রুতগতিতে আসা যানবাহন—সব উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছেমতো বাঁ হাত তুলে হেলেদুলে রাস্তা পার হতে শুরু করেন। তাঁদের আচমকা নবাবি আচরণে গাড়ির চালকদের কত কষ্ট করে ব্রেক করতে হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে কি না, সেসবে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

দাঁড়িয়াবান্ধা খেলোয়াড় পথচারী

এই পথচারীরা (নারী-পুরুষ উভয়ই) সম্ভবত ছোটবেলায় গ্রামের নামকরা দাঁড়িয়াবান্ধা বা বউছি বা গোল্লাছুট খেলোয়াড় ছিলেন। তাঁরা সড়কদ্বীপে দাঁড়ান। হিন্দি সিরিয়ালের চরিত্রের মতো চরম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে রাস্তায় পা ফেলেন। সামনে থেকে আসা মোটরসাইকেল বা অটোরিকশাচালক গতি মন্থর করে, বাঁয়ে সরে সেই পথচারীকে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। কিন্তু মোটরসাইকেল বা অটোরিকশা তাঁকে ডানে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে বাঁয়ে গেলে সেই পথচারী আতঙ্কিত চোখে ডানে না গিয়ে বাঁয়ে চলে যান। চালক আবার দিক পাল্টালে তিনিও দিক পাল্টান। এভাবে দু-তিনবার ডান-বাম, ডান-বাম করার পর কিছু একটা ঘটে।

ট্রেনযাত্রী পথচারী

সময়, স্রোত ও ট্রেন কারও জন্য অপেক্ষা করে না। কাজেই ট্রেনযাত্রীকে থাকতে হয় দৌড়ের ওপর। এই শ্রেণির পথচারীর ব্যস্ততা ঠিক ট্রেন ধরতে চাওয়া যাত্রীর মতো। একটুও দম ফেলার ফুরসত নেই। সড়কদ্বীপে দুই-এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখে সময় নষ্ট করতেও রাজি নন তাঁরা। যেন ঠিক এই মুহূর্তে রাস্তা পার না হলে তাঁর জীবন ব্যর্থ হবে। কাজেই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন রাস্তায়। চালক কীভাবে ব্রেক করবেন, সেটা ভাবতে তাঁর একটুও বয়ে যায়নি।

গালাগালে পারদর্শী পথচারী

এই শ্রেণির পথচারী ক্ষমতাবান দলের রাজনৈতিক নেতার মতো সব সময় বিপক্ষ দলের (চালকদের) ওপর দোষ চাপাতে ওস্তাদ। রাস্তাটাকে নিজের বাপ-দাদার সম্পত্তি ভাবতেও তাঁদের জুড়ি নেই। তাঁরা রাস্তা পার হবেন সিগন্যাল অমান্য করেই। ইচ্ছেমতো উসাইন বোল্টের মতো দৌড়াবেন, কখনো রাস্তা পার হবেন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করতে করতে কচ্ছপের মতো। এতে কোনো চালক যদি ব্রেক ধরতে ধরতে সেই পথচারীর গা ঘেঁষে দাঁড়ায় তাহলেই সেরেছে! মাঝরাস্তাতেই দাঁড়িয়ে চালককে যা ইচ্ছা গালি দেবেন এবং শার্টের হাতা গুটিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেবেন।