এলিয়েনরা যখন ঢাবি ক্যাম্পাসে

আঁকা: তীর্থ
আঁকা: তীর্থ

ভিন গ্রহের ফুটবলার লিওনেল মেসি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস লিখেছেন:
‘ফ্রান্স, আমি তো ভিন গ্রহের ফুটবলার, অর্থাৎ এলিয়েন, তার মানে বহিরাগত। এর মানে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমিও অবাঞ্ছিত? প্লিজ ফ্রান্স, কমেন্ট করে জানাও!’
আমি সেই পোস্টে একটা ‘হাহা’ রিঅ্যাকশন দিয়ে ‘সহমত ভাই’ লিখে কমেন্ট করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কমেন্ট লোড হওয়ার আগেই ওয়াই-ফাই চলে গেল। নিশ্চয়ই পাশের বাসার ভাড়াটেরা ওয়াই-ফাইয়ের পাসওয়ার্ড আবারও বদলে ফেলেছে। আজকাল পাশের বাসার সুন্দরী বালিকার মন জয় করা সহজ, কিন্তু ওয়াই-ফাইয়ের পাসওয়ার্ড জয় করা অতটা সহজ নয়। রাগে-দুঃখে তাই বাসা থেকেই বের হয়ে চলে এলাম। যে বাসায় বসে পাশের বাসার ওয়াই-ফাই পাওয়া যায় না, সে বাসায় থাকার চেয়ে গৃহত্যাগী হওয়াই ভালো।
বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শাহবাগ মোড়ে গিয়েই পড়বি তো পড় একেবারে মালির ঘাড়ে, মানে একটা প্রতিবাদ সভার মাঝে গিয়ে পড়লাম। একদল এলিয়েনকে দেখলাম ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ করছে। ব্যানারে বড় করে লেখা, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ করতে দাও’। তার নিচে একটু ছোট করে লেখা, ‘প্রচারে: নিখিল গ্যালাক্সি এলিয়েন সমিতি’।
তার মধ্যে আবার এক দেশি কিশোর এক হাতে একটা হোমিওপ্যাথিক ওষুধের শিশি উঁচিয়ে আরেক হাতে সেলফিস্টিক ধরে সেলফি তুলছে। এলিয়েনদের মধ্যে দেশি কিশোরের সামনে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই ছেলে, এলিয়েনদের মধ্যে তুমি কী করো?’
আমার কথায় ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আরে মিয়া, আমার নাম বিলু, আর আমার হাতের এই শিশিতে আছে সুপার এলিয়েন টুকুনজিল। টুকুনজিলকে চেনেন না? ওই যে মুহম্মদ জাফর ইকবালের টুকুনজিল বইটা পড়েন নাই? অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কথা পড়েন নাই সেটাতে?’
ওসব বইপত্তরের জ্ঞান আমার মাথায় ঢোকে না। শরীরের ভেতর কলকবজাগুলো কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই আমার। তাপরও দিব্যি বেঁচেবর্তে আছি। ফলে অ্যান্ড্রোমিডার টুকুনজিল সম্পর্কে কিছু না জানলেও আমার জীবন চলে যাবে। কিশোরের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মিছিলের সামনে থেকে সরে এলাম আমি। বইপত্তরের প্যাঁচ থেকে বাঁচতে সোজা হাঁটা দিলাম সামনে। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে নীলক্ষেতে চলে এসেছি, টেরই পাইনি। বইয়ের ডোবা থেকে বাঁচতে একেবারে বইয়ের সমুদ্রে এসে পড়লাম, কী বিপদ! মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। ভাবলাম, এদিকে ঘোরাঘুরি না করে টিএসসির দিকে গিয়ে চা-পানি খাই। তাতে যদি মাথার চক্কর একটু বন্ধ হয়। সোজা হাঁটা দিলাম টিএসসির দিকে। কিন্তু মাঝামাঝি যেতেই দেখলাম, একদল এলিয়েন ভয়ার্ত মুখে ছুটে আসছে আমার দিকেই! তাদের পেছনে লাঠিসোঁটা হাতে একদল তরুণ তেড়ে আসছে ঝড়ের বেগে! আমাকে দেখে ছুটতে থাকা একটা এলিয়েন বলে উঠল, ‘ভাই, কাছা উঠায়া দৌড় লাগান! আমগো প্রতিবাদ মিছিল দেইখা তারা কোটা আন্দোলন ভাইবা বসছে। শরীরের হাড্ডি আস্ত রাখতে চাইলে ফোরজি স্পিডে দৌড় লাগান!’
আমি আর কোনো কিছু না ভেবে চোখ-মুখ আর ফ্রন্ট ক্যামেরা বন্ধ করে ছুটতে লাগলাম। ছুটতে ছুটতে কখন যে একটা দোকানে ঢুকে পড়েছি, টেরই পাইনি। একটু ধাতস্থ হতেই দেখলাম, দোকানে একটা ব্যানার টানানো। সেখানে লেখা, ‘এখানে বহিরাগতদের জন্য স্বল্পমূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসা তৈরি করা হয়।’