সূর্যজ্যোতির পাখি

>

উনসত্তরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে মেহেরুন্‌নেসা পড়েছিলেন তাঁর সেই অবিনাশী কবিতা—‘প্রভু নয় বন্ধু কে’

প্রথম শহীদ বাংলাদেশের মেয়ে

দুটি ভাই আর মায়ের তপ্ত বক্ষ রক্তে নেয়ে

                দেশের মাটির পরে

গান গাওয়া পাখি, নীড় হারা হয়ে

                লুটালি প্রবল ঝড়ে।

ঝড় থেমে গেছে বাংলাদেশের

                কেটেছে অন্ধকার।

সোনা ঝরা এই রোদের আলোকে তুই

                ফিরবি না আর।

—‘মেহেরুন্‌নেসা’, সুফিয়া কামাল

মেহেরুন্‌নেসা জন্ম: ১৯৪২, মৃত্যু: ২৭ মার্চ ১৯৭১
মেহেরুন্‌নেসা জন্ম: ১৯৪২, মৃত্যু: ২৭ মার্চ ১৯৭১

মেহেরুন্‌নেসা তাঁর মাত্র বছর উনত্রিশের জীবনেই তাঁকে নিয়ে বিস্তৃত লেখার পরিসর তৈরি করে দিয়ে গেছেন; কবি হিসেবে, একজন স্বাধীনচেতা নারী হিসেবে, সর্বোপরি দেশপ্রেমিক একজন মানুষ হিসেবে। জন্ম ১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের খিদিরপুরে। মা নূরননেসা ও বাবা আবদুর রাজ্জাক। চার সন্তানের এই পরিবারের কনিষ্ঠা কন্যা মেহেরুন। বড় বোন মোমেনা খাতুন, ছোট দুই ভাই রফিকুল ইসলাম বাবলু ও শহিদুল ইসলাম টুটুল। শৈশব কেটেছে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে। ছোটবেলা থেকেই যেন বহিঃপৃথিবীর প্রতি আগ্রহ প্রবল ছিল তাঁর। তাই বাবার সঙ্গে ছোট্ট মেয়েটি কয়লার দোকানে বসতেন। হয়তো উত্তরকালে কয়লাখনির মানুষদের নিয়ে কবিতা লেখার বীজ বপন হয়েছিল এই সময়েই:
কয়লা খনির গভীরে দেখেছি জ্বলতে
জ্বালানীবিহীন মহাজীবনের সলতে
তবুও কখনো ওদের শুনিনি বলতে
আমরাও জানি জীবন নাট্যঘরে
বাঁচার খেলা খেলতে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে দাঙ্গায় উদ্বাস্তু হয়ে মেহেরুনদের পরিবার ১৯৫০ সালে ঢাকা চলে আসে। বেগম রোকেয়ার বোন যেমন করিমুন্নেসা, মেহেরুন্‌নেসার বোনও তেমনি মোমেনা খাতুন। স্বভাব-ছড়াকার কবি মেহেরুন্‌নেসা বোনের সাহচর্যে বই পড়তেন, মুখস্থ রাখতেন অসংখ্য ছড়া ও কবিতা। বর্ণপরিচয়, আদর্শলিপি, মাইকেলের সহজপাঠ, রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা, সুকান্ত, নজরুলের সঞ্চিতা, জসীমউদ্দীনের কবিতা—এসব ছিল মেহেরুন্‌নেসা রানুর প্রিয় পাঠ্যতালিকায়। খেলাধুলাতে ছিলেন নিমগ্ন ভীষণ। সুর তুলতেন গানে, বিশেষ পারদর্শী ছিলেন হাতের কাজে।
পুরান ঢাকার নানান এলাকায় বাস করে ১৯৬৫ সালে তাঁদের পরিবার থিতু হয় মিরপুরে। ‘চাষী’ শিরোনামে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় হাবীবুর রহমান সম্পাদিত খেলাঘর-এর পাতায় (১৯৫৩-৫৪)। ১৯৫৪ সালে বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতায় আমরা উচ্চারিত হতে দেখি অন্য এক মেহেরুন্‌নেসাকে:

তোমার ছন্দ বাণীতে জ্বলুক

        শত দুঃখের চিতা

জীবন সারথী তোমারে পেয়েছি

        ব্যথিত মনের মিতা।

কবিজীবনের ঊষাকালেই কবিতাকে নিজস্ব গহন দুঃখের মিতা মেনে নিয়েছেন কবি; ভবিষ্যতে যে কবিতা ব্যক্তিগত আর্তির বলয় ভেদ করে বৃহৎ মানুষের আর্তনাদের ভাষা হয়ে উঠেছে। এ কথা ঠিক, ধর্মীয় চেতনায় কিছুটা আচ্ছন্ন ছিল তাঁর প্রাথমিক কবিতাজগৎ। পরে যুগের দাবিতে তা এসে মেশে সামাজিক অঙ্গীকারের দাউ দাউ মশালে। সমষ্টি মানুষের কথায় মুখর হয়ে ওঠে ব্যক্তি কবিমানুষের নির্জন কলম।

১৯৫৪ সালে ‘রাজবন্দী’ শিরোনামের কবিতায় ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’-এর মতো বক্তব্যের জেরে গোয়েন্দাদের নজরে পড়েন। এ সময় থেকেই তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতে শুরু করে ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তান, মাসিক মোহাম্মদী, কৃষিকথা, ললনাসহ মূলধারার পত্রপত্রিকায়। বিস্ময়ের বিষয় এই যে যখন রবীন্দ্রনাথ মূঢ় পাকিস্তানি নিষেধাজ্ঞার শিকার, তখন মেহেরুন্‌নেসা রবীন্দ্রনাথকে আপন করে নিচ্ছেন বাংলার মানুষের গণবিষাদের অনুষঙ্গে:

শুনবে না তুমি আমার গীতাঞ্জলী?

        আমার গীতবিতান?

শুনবে না তুমি? বল না রবিঠাকুর?

জলোচ্ছ্বাস আর করাল ঘূর্ণিঝড়

এই তো আমার সঞ্চয়িতার

        ভরে আছে অম্বর।

রবীন্দ্রনাথের মতো তাঁর চেতনায় অধিষ্ঠান ছিলেন বিদ্রোহের বুলবুল নজরুলও:

শোন নজরুল! তেরোশত এই

        নতুন চুয়াত্তরে

উঠে এসো তুমি,

        ক্ষুব্ধ বঙ্গ আকাশে ভয়াল—

        করাল মূর্তি ধরে।

যত কান্নাকে যত বেদনাকে

        যত হাহাকার ঠেলে

এসো ধূমকেতু রুদ্র মাতম,

        অগ্নিকেতন মেলে।

দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি প্রবল ভালোবাসার বোধেই বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখে তাঁর কবিমন হয়ে উঠেছে ব্যথাতুর। তেমনি ১৯৬৯, ১৯৭০ ও ১৯৭১-এর স্বাধীনতামুখিন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তাঁকে দারুণ আলোড়িত করেছে। মকবুলা মনজুর জানাচ্ছেন:

মেহেরুন্‌নেসা উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে, সত্তরের মিছিলে, একাত্তরের অসহযোগে আগুনের শিখা হয়ে জ্বলেছেন। উনসত্তরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে মেহেরুন্‌নেসা পড়েছিলেন তাঁর সেই অবিনাশী কবিতা—‘প্রভু নয় বন্ধু কে’। প্রশ্নের শাণিত তরবারি হয়ে সেদিন তাঁর কবিতা আয়ুবশাহীর নিরেট ভিত্তিকে চিরে চিরে দেখতে চেয়েছিল। শুধু এই কবিতাটিই নয়, আরও অনেক কবিতা মেহেরুন্‌নেসা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আগুনের ফুলকির মতো। (দৈনিক বাংলা, জুন ১৯৭২)

মূলত ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ছয় দফাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া গণ-আন্দোলনের আভা তাঁর কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিতে বেশ কিছু কবিতা রচনা করেন। ভাষাশহীদ স্মরণে তাঁর উচ্চারণ ছিল এমনই অভীক এবং সমকালীন সংগ্রামের ইঙ্গিতে দীপ্র:

শহীদ ভাইরা! স্বর্গ শিখর হোতে

চোখ মেলে দ্যাখো আজ বাংলার

পীচমোড় কালো পথে

তোমাদের যতো উত্তরসূরী

        বুলেটের মুখে হাসে।

...

আজ ফাল্গুনী স্মৃতির তীর্থে

        নতুন কুচকাওয়াজ

মাটির আকাশে লক্ষ সূর্য

        আগুন জ্বেলেছে আজ।

মেহেরুন্‌নেসা অনুলেখক হিসেবে কাজ করেছেন বাংলা একাডেমি ও ইউসিস লাইব্রেরিতে। পত্রিকা অফিসে করেছেন প্রুফ সংশোধনের কাজ। ‘রানু আপা’ ছদ্মনামে লিখেছেন ফিচার। বাবার উপার্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় যুক্ত হয়েছেন ফিলিপস ওয়ার্কশপ নামে বিদেশি রেডিও তৈরির কারখানায়। এতসব সামলে বাংলা একাডেমিতে, লেখক সংঘ, বেগম অফিসসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন সাহিত্যসভায়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসরে ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। চাকরিজীবনেও সংগ্রাম করেছেন মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য। ফিলিপস কোম্পানি থেকে ইংরেজি ও উর্দু ম্যাগাজিন ছাপা হতো। মেহেরুন্‌নেসা সে কোম্পানির চাকরিতে যোগ দিয়ে ব্যক্তিগত চেষ্টায় ম্যাগাজিনের বাংলা বিভাগ চালু করেন।

অবাঙালি-অধ্যুষিত মিরপুর এলাকায় নিজেদের স্বাধীন সত্তা নিয়ে বেঁচে থাকার চিন্তা থেকে ১৯৬৯-এ বাঙালিদের উদ্যোগে গঠিত হয় ‘অ্যাকশন কমিটি’। মহান মুক্তিযুদ্ধ ক্রমশ জোরদার হতে থাকলে অ্যাকশন কমিটির কার্যক্রমের ধরনেও আসে আমূল পরিবর্তন। যে কমিটি একসময় সামাজিক শৃঙ্খলারক্ষায় কাজ করেছে, উত্তাল মুক্তিযুদ্ধের তরঙ্গে সে অ্যাকশন কমিটিও একাত্ম হলো জনতার সমুদ্রে। অন্য অনেক মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে এই কমিটির সভায়-মিছিলে মেহেরুন্‌নেসাও ছিলেন অগ্রভাগে। পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর মিরপুরের অবাঙালি বিহারি সম্প্রদায়ের কুচক্রিরা তখন বাঙালিবিরোধী ঘৃণ্য নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপনে বাধা দিয়েছে আর শকুনের মতো খোঁজ রেখেছে কে কোথায় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ত্বরান্বিত করতে কাজ করছে। তারা ঠিকই জেনেছে মেহেরুন্‌নেসাসহ মিরপুরের অ্যাকশন কমিটির বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি ৭ মার্চ ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জনসভায় অংশ নিয়েছেন, শপথ নিয়েছেন মুক্তি ও স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে।

এরই মধ্যে ২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে বেগম পত্রিকায় এই কবি লিখলেন তাঁর শেষ কবিতা ‘জনতা জেগেছে’:

গণতন্ত্রের দীপ্ত শপথ কণ্ঠে কণ্ঠে সাধা

আমরা ভেঙেছি জয় বাংলার

        যতো বিজয়ের বাঁধা।

...

আনো দেখি আনো সাতকোটি

        এই দাবীর মৃত্যু তুমি,

চির বিজয়ের অটল শপথ

        ‘জয় এ বাঙলা ভূমি’।

বাঙালির মুক্তির দৃপ্ত উচ্চারণে লেখা এই কবিতা কবি মেহেরুন্‌নেসা দাঁড় করিয়ে দেন বাঙালিবিরোধী অপশক্তির মুখোমুখি।

হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দ্বিতীয় খণ্ড (নভেম্বর ১৯৮২) থেকে জানা যাচ্ছে, একাত্তরের এই ২৩ মার্চেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে লেখক সংগ্রাম শিবির আয়োজিত বিপ্লবী কবিতাপাঠের আসরে হাসান হাফিজুর রহমান, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হুমায়ুন কবিরসহ অন্যান্য কবিদের সঙ্গে স্বরচিত কবিতাপাঠে অংশ নেন মেহেরুন্‌নেসা। কবিতাপাঠের এ আসরে সভাপতিত্ব করেছিলেন ড. আহমদ শরীফ।

২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে মেহেরুন্‌নেসা ও তাঁর দুই ভাই মিরপুর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য রফিক ও টুটুল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মিরপুরে নিজ বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন, যা স্থানীয় বাঙালিবিরোধী শক্তির আক্রোশের কারণ হয় ২৫ মার্চ ইতিহাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ মিরপুরসহ গোটা ঢাকার বুকে চলেছে পরপর আরও কয়েক দিন।

অতঃপর ২৭ মার্চ ১৯৭১। মেহেরুন্‌নেসার বন্ধু কবি কাজী রোজী রচিত জীবনীগ্রন্থে মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনের ডি ব্লক, ১২ নম্বর রোডের ৮ নম্বরে মেহেরুন্‌নেসাদের বাড়ি আক্রমণ ও তাঁর শাহাদতবরণের তথ্য উঠে এসেছে এভাবে:

২৭ মার্চ মেহেরদের বাড়িতে অবাঙালিরা অতর্কিতে আক্রমণ করে। মেহেরের দুই ভাই রফিক ও টুটুলকে প্রথমেই মেরে ফেলার উদ্যোগ নেয়। মা বাধা দিতে গেলে ধাক্কা মেরে দূরে ফেলে দেয়। মেহের বুকে কোরআন শরিফ চেপে বলে, ‘আমরা তো মুসলমান আমাদের মারবে কেন?...আর যদি মারতেই হয় আমাকে মারো। ওদের কোনো দোষ নেই। ওদের ছেড়ে দাও।’

‘ওই নিষ্ঠুর পাষণ্ডদের মন তাতে গলেনি। শহীদ হলো রফিক ও টুটুল। ধড় থেকে ওদের মুণ্ডু আলাদা করে ফেলল ওরা। শহীদ দুই ভাই ধড়ফড় করতে করতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করল। ওদের এভাবে মরতে দেখে মা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন। এজিদেরা মাকেও কেটে ফেলল। শহীদ হলেন মা। এরপর ওরা মেহেরের ওপর আক্রমণ চালাল। বাঁচতে পারল না মেহের। মাথাটা দেহ থেকে আলাদা করে লম্বা চুলের বেণি দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখল। পৈশাচিক নৃত্য করতে থাকল, উল্লাস করতে থাকল। ওদের সেই তাণ্ডব নৃত্য দেখে প্রত্যক্ষদর্শী একজন প্রতিবেশী (অবাঙালি) পরে জানিয়েছেন, জীবনে এ রকম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ তিনি কখনো দেখেননি।’ (শহীদ কবি মেহেরুন্‌নেসা, কাজী রোজী, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১১)

মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের মধ্য দিয়ে যুগপৎ গণহত্যা ও প্রতিরোধের মার্চ পৌঁছে যায় বিজয়ী ডিসেম্বরে। যে স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত পতাকায় আরও অনেক শহীদের মতো লেগে আছে ২৯ বছরের তরুণী কবি মেহেরুন্‌নেসার রক্তের লাল, সেই বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মানে, কবিতার অব্যর্থ অক্ষর-অস্ত্রে আগুয়ান এক শহীদ নারী মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ। মেহেরুন্‌নেসাকে স্মরণ মানে একই সঙ্গে স্মরণ সেই দায়বদ্ধ অদম্য তারুণ্যকে, যে তাঁর প্রিয় জীবনের প্রথম ৩০ পেরোনোর আগেই স্বদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নে একাকার করে দিতে পারে তাঁর সমূহ ব্যক্তিগত স্বপ্নসাধ।

শতাধিক কবিতার রচয়িতা মেহেরুন্‌নেসা লিখেছেন কিছু মিষ্টি গানও। একটি গানের বাণীর শেষাংশে দৃষ্টি দিলে মনে হবে যেন নিজের আসন্ন আগামী অন্তর্গত ভাবনায় ছিল তাঁর:

দু’কূলে আমার রচে ইতিহাস

        আমি বয়ে যাব প্রিয়

আগামী অতীতে আমার কাহিনী—

        হয়ে রবে স্মরণীয়

কবি মেহেরুন্‌নেসার স্বপ্ন ছিল তাঁর কবিতার বইয়ের নাম হবে সূর্যজ্যোতির পাখি। মৃত্যুর প্রগাঢ় অন্ধকার বই প্রকাশের সুযোগ তাঁকে দেয়নি কিন্তু শহীদ মেহেরুন্‌নেসার কবি-আত্মার নিশ্চয়ই কোনো খেদ নেই তাতে। কারণ তাঁর পবিত্র তরুণ রক্তে ভেজা স্বাধীন বাংলাদেশই তো এক শাশ্বত সূর্যজ্যোতির পাখি হয়ে গান গেয়ে চলে নিরন্তর।

পিয়াস মজিদ: কবি