শান্তির শুভেচ্ছা

প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও
প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও

বড়দিনে আমরা প্রভু যিশুর জন্মদিন পালন করি। বাইবেলের বিবরণ অনুসারে যিশুর জন্ম এভাবে হয়েছিল:
মারিয়া তখন সন্তানসম্ভবা। বেথলেহেমে থাকতেই মারিয়ার প্রসবের সময় উপস্থিত হলো। তিনি প্রথমজাত পুত্রকে প্রসব করলেন। শিশুটিকে তিনি কাপড়ে জড়িয়ে একটি জাবপাত্রে শুইয়ে রাখলেন। কারণ, পান্থশালায় তাঁদের কোনো জায়গা জোটেনি। ...সেই অঞ্চলে একদল রাখাল ছিল।...স্বর্গদূত তাদের সামনে এসে বললেন, ‘ভয় পেয়ো না! আমি এক মহা আনন্দের সংবাদ তোমাদের জানাতে এসেছি; আর এ আনন্দে সমগ্র জাতির মানুষ আনন্দিত হবে। আজ দাউদ-নগরে তোমাদের ত্রাণকর্তা জন্মেছেন, তিনি সেই খ্রিষ্ট, স্বয়ং প্রভু।’ (লুক ২:৬-১১-এর অংশবিশেষ)।
যিশুর জন্মবার্তা ঘোষণা করে স্বর্গদূত বাহিনী বলেছিলেন, ‘জয়, ঊর্ধ্বলোকে পরমেশ্বরের জয়! ইহলোক নামুক শান্তি, তাঁর অনুগৃহীত সকল মানবের অন্তরে।’
শান্তি মানুষের প্রধান কাম্য; অথচ সেই শান্তির কত অভাব। বিগত মাসগুলোতে বিশ্বের ও আমাদের দেশের মধ্যে যেসব মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে, সেই সময়ে শান্তির কথা বলা বড় কঠিন। তথাপি অশান্ত এই পরিবেশে প্রভু যিশুর একটি কথা বারবার স্মরণ হয়; কথাটি হলো, ‘আমি তোমাদের শান্তি রেখে যাচ্ছি, আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি; অবশ্য জগৎ যেভাবে শান্তি দেয়, সেভাবে আমি তোমাদের শান্তি দিয়ে যাচ্ছি না।’
শান্তি হচ্ছে পরম করুণাময়ের একটি দান। এই দান গ্রহণ করার জন্য চাই মানুষের উদার ও সুন্দর মন। যখন আমরা পরম করুণাময়ের আদেশবাণী পালন করি, তখন আমাদের অন্তর থেকে সব শত্রুতা, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষভাব দূর হয়; আর অন্তরে উপলব্ধি হয় সম্প্রীতি ও শান্তি। আজ শান্তিরাজের আগমনে সব ধর্মবিশ্বাসীর সম্মিলিত প্রার্থনা হচ্ছে, ‘এসো প্রভু, তুমি নিয়ে এসো শান্তির মহাবর।’
অশান্ত আজ আমাদের দেশ ও সমাজ। জনগণ শান্তি চায়। আর নয় সন্ত্রাস, আর নয় প্রতিহিংসা, আর নয় ধ্বংস, আর নয় মৃত্যু। দেশের মানুষ শান্তি চায়। আসবে সেই শান্তি? প্রভু যিশুর আগমন ঘটবে? হবে তাঁর আগমন?

.
.

বর্তমান অন্ধকারময় পরিস্থিতিতেও যিশুর আগমনের ইঙ্গিত আমরা দেখতে পাই। বড়দিনের প্রকাশ বিভিন্ন মানুষের মধ্যে আজও ঘটছে। আমরা দেখি, নিরাশার মধ্যে কত মানুষের আশা, অন্ধকারের মধ্যে কত আলোকিত মানুষ, অন্যায় ও দুর্নীতির মধ্যেও কত ন্যায় ও সত্যবান ব্যক্তির প্রচেষ্টা, অনেক প্রতিহিংসার মধ্যে মানুষের কত ভালোবাসা, জোর করে জীবন কেড়ে নেওয়ার মধ্যে কত মানুষের স্বেচ্ছায় আত্মবিসর্জনের পবিত্র সাক্ষ্যদান। আমরা লক্ষ করি, পাপময়তার মধ্যে পুণ্যের সাধনা, মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর সংগ্রাম, ধ্বংসাত্মক প্রচেষ্টার মধ্যে নতুন কিছু গড়ার মহান প্রয়াস এবং ঘৃণার মধ্যে ক্ষমা ও ভালোবাসা। আমরা আরও দেখছি, ধর্মান্ধতার মধ্যে অসংখ্য মানুষের যথার্থ ধার্মিকতা, অশুভ চিন্তা ও শক্তির মধ্যেও যা কিছু শুভ, তার প্রতি আগ্রহ এবং ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে মানুষের বিশ্বাস ও সৎ সাহস।
অতএব, প্রভু যিশুর জন্ম সত্য, বড়দিন বাস্তব, বড়দিন এসেছে এবং বড়দিন পালিত হচ্ছে। সুতরাং, আমরা সবাইকে জানাতে পারি বড়দিনে শান্তির শুভেচ্ছা।
বড়দিনে আমাদের দেশের জন্য প্রার্থনা: হে প্রভু, গোশালঘরতুল্য আমাদের দেশ; তুমি আমাদের দেশকে ভালোবাসো। আমাদের বিশ্বাস, এই গোশালাতেই তুমি জন্মগ্রহণ করবে। আমাদের দীনদশায় তোমার আগমনে আমরা সবাই ধন্য হব, হব মহিমান্বিত। আমাদের প্রতি প্রকাশ করো তোমার ভালোবাসা, মুছে দাও সব গ্লানি, ক্ষমা করো আমাদের সব অপরাধ। এসো তুমি এসো, নিয়ে এসো তোমার ক্ষমা ও শান্তির মহাবর।
প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি: আর্চবিশপ, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ