ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না

পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দী কয়েকজন সদস্য, ১৩ িডসেম্বর ১৯৭১। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দী কয়েকজন সদস্য, ১৩ িডসেম্বর ১৯৭১। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান ভাঙনের আগের কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ মাস আমি তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এর মধ্যে আমি পদোন্নতি পেয়ে মেজর হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করি। প্রথমে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ও পরবর্তীকালে কমান্ডার হিসেবে তিনটি কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সঙ্গে কাজ করি আমি।
১৯৭১ সালের এপ্রিলের মধ্যভাগে আমি প্রথম অভিযানে যাই। আমার প্রতি নির্দেশ জারি হয়, ‘এটা মুজিবুর রহমানের নিজ জেলা। এলাকাটা দুর্গম। ওখানে যত বেশি পারবেন তত বেশি বেজন্মাকে হত্যা করবেন। আর এটা নিশ্চত করার চেষ্টা করুন, যাতে কোনো হিন্দু জীবিত না থাকে।’
আমি উত্তর দিলাম, ‘যদি আমাকে কেউ গুলি না করে তাহলে নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষকে আমি হত্যা করি না।’ এর প্রত্যুত্তরে আমাকে বলা হলো, ‘হিন্দুদের শেষ করে দাও, এই আদেশ সবাইকে দেওয়া হয়েছে। কমান্ডো হিসেবে আমাকে তোমার সূক্ষ্মতা দেখিয়ো না।’
এরপর প্রথম অভিযানের জন্য উড়াল দিলাম। আমাকে ফরিদপুরের পেছনে নামিয়ে দেওয়া হলো। আমরা সেখানে নেমে চারদিকে গুলি ছুড়তে শুরু করি। সৌভাগ্যবশত, ওখানে গুলি করার মতো লক্ষ্যবস্তু ছিল না। এরপর হঠাৎ দেখলাম, কিছু বেসামরিক মানুষ আমাদের দিকে দৌড়ে আসছে। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল না। আমি নির্দেশ দিলাম, ‘গুলি বন্ধ করো!’ চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কী চায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা জবাব দিল, ‘স্যার, আমরা আপনাদের জন্য খাবার পানি এনেছি!’
অধস্তনদের হাতিয়ার রেখে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চা-বিরতির আদেশ দিলাম। আমরা সেখানে কয়েক ঘণ্টা ছিলাম। এর মধ্যে কেউ একজন পাকিস্তানি পতাকা তুলল। গ্রামবাসীদের বললাম, ‘গতকাল আপনাদের গ্রামে তো শুধু আওয়ামী লীগের পতাকা দেখেছি।’ এটাই সত্যি। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে হাসব না কাঁদব। এরপর সেনাদের বড় দলটা যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। তারা চারদিকে মেশিনগানের গুলি ছুড়তে ছুড়তে হাজির হলো। দেখলাম, পেছনের গ্রামগুলো থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে। কর্নেল জিজ্ঞাসা করলেন, ‘স্কোর কত?’ তাঁকে জানালাম, ‘আমরা কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়িনি, তাই কাউকে মারিনি।’
তিনি মেশিনগান বের করে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। ফলে যে গ্রামবাসী আমাদের জন্য পানি নিয়ে এসেছিল, তাদের অনেকেই মারা পড়ল। এরপর তিনি আমার মতো বেচারা মেজরকে বললেন, ‘ছোকরা, এভাবেই সব করতে হয়।’
এপ্রিলের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমি ওখানে কাজ করেছি। সেখানে সব ঘটনার কেন্দ্রে আমরাই ছিলাম। ওদিকে আমার ইউনিটের একটি দল ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে বাসা থেকে ধরে আনে। আমরা সরাসরি পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধীনে ছিলাম। এসএসজি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হিসেবে আমি জেনারেল নিয়াজি, জেনারেল রহিম ও পরবর্তীকালে ১৪ ঢাকা ডিভিশনের জেনারেল কাজি মজিদের অধীনে ছিলাম।
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে আমি পদোন্নতি পেয়ে লে. কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যাই। আমার মূল বিভাগ অর্ডন্যান্সেই পদায়ন হয়। তবে সে বছরের ডিসেম্বর মাস থেকেই আমার স্মৃতিভ্রম শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। পরবর্তীকালে চিকিৎসার পর আমি স্মৃতি ফিরে পাই এবং পাঞ্জাবি লেখক হিসেবে নতুন জীবন শুরু করি। ১৯৭১ সালের পর থেকে প্রতিটি ঘটনাই আমার স্মরণে আছে।
অভিযান ও অধীন ইউনিট পরিদর্শনের জন্য আমি সারা পূর্ব পাকিস্তান ঘুরে বেরিয়েছি। আমি কখনো কাউকে হত্যা করিনি অথবা হত্যার নির্দেশ দিইনি। সৌভাগ্যবশত, কোনো হত্যাযজ্ঞও আমাকে দেখতে হয়নি। কিন্তু অন্যান্য সেক্টরে কী হচ্ছিল সে বিষয়ে আমি ওয়াকিবহাল ছিলাম। হাজার হাজার মানুষকে মারা হচ্ছিল আর লাখে লাখে মানুষ ঘরছাড়া হচ্ছিল। ৯০ লাখের বেশি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে চলে যায়। হিন্দুদের মারার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই নির্দেশ আমি অনেকবার পেয়েছি, আবার বেশ কবার আমাকে এটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা এটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করত। হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনে এটি উল্লেখ আছে। ভারতে যে ৯৩ লাখ শরণার্থী গিয়েছিল তাদের মধ্যে ৯০ লাখই ছিল হিন্দু। ফলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যম আমাদের সমালোচনা করে, যা আমাদের নৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করে দেয়। অদক্ষ সামরিক নেতৃত্বের কারণে যুদ্ধে আমাদের পরাজয় নিশ্চিত হয়। শুধু উত্তরাঞ্চলের কিছু ব্যাটালিয়ন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, মেজর আকরামের ইউনিটের কথা বলা যায়, যাকে সর্বোচ্চ সামরিক পদক নিশান-ই-হায়দার দেওয়া হয়েছিল। তিনি লড়াই করতে করতে প্রাণ হারান।
পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের হাজার মাইল দূরে। জন গান্টার ইনসাইড এশিয়া টুডেতে বলেছেন, এটি ছিল ‘ভৌগোলিক ও রাজনৈতিকভাবে অর্থহীন’ প্রপঞ্চ। পাকিস্তানের ফেডারেল রাজধানী ছিল ইসলামাবাদে। পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের ভাষায় পাঞ্জাবি সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানিরা মনে করত, তারা ঔপনিবেশিক শাসকের প্রজা।
১৯৪৭ সালের পর থেকেই ব্যাপারটা তাদের মনঃপূত হয়নি। সেই ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে আমার বাঙালি সহকর্মীরা পরস্পরকে জেনারেল বলে ডাকত। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলে পরেই তারা কেবল ওই পদে উন্নীত হয়। তবে আমরা সবাই ব্যাপারটা রসিকতা হিসেবেই নিতাম। কিন্তু ১৯৭১ সাল তামাশা ছিল না। তখন প্রত্যেক বাঙালিই নিজেকে নিপীড়িত মনে করতেন। যাদের তাঁরা ‘শালা পাঞ্জাবি’ বলে গাল দিতেন, তাদের হাতেই তখন বাঙালিদের জীবন-মৃত্যু।
২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি ১৯৭১ সালের স্মৃতিচারণ করে বিবিসি উর্দু বিভাগকে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সেই সাক্ষাৎকারের একটি অনুলিপি চেয়েছিল। কিন্তু ওটা এত বড় ছিল যে আমার পক্ষে তা ট্রান্সক্রাইব, অনুবাদ ও টাইপ করা কঠিন ছিল। এই লেখায় আমি তার কিছু স্মরণ করার চেষ্টা করব।
আমি কেন পাগল হয়ে গেলাম? মনে হতো, সেনাবাহিনীর সম্মিলিত অপরাধের ভাগ আমারও আছে। খুব বেশি হলে সেনাবাহিনীর তৎপরতা এপ্রিলেই শেষ হওয়া উচিত ছিল। এরপর পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে দেখলাম, পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছে বা ঘটছিল তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে খুন করা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হচ্ছে, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান একেবারে ভাবলেশহীন। ব্যাপারটা এভাবেই চলছিল। জেনারেল টিক্কা খানকে ‘বাংলার কসাই’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি বড়জোর দুই সপ্তাহ নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমনকি সেই দুই সপ্তাহে প্রকৃত নেতৃত্ব ছিল তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড জেনারেল মিঠ্ঠার হাতে। জেনারেল মিঠ্ঠা আক্ষরিকভাবেই বাংলার প্রতিটি ইঞ্চি চিনতেন। জেনারেল নিয়াজি পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তিনিই সব অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই পর্যায়ে জেনারেল মিঠ্ঠা জিএইচকিউয়ে ফিরে যান। গভর্নর হিসেবে জেনারেল টিক্কা ভালো প্রশাসক ছিলেন। সব সেবা যাতে চালু থাকে তিনি সেটা নিশ্চিত করেন। ট্রেন, ফেরি, ডাক সেবা, টেলিফোন লাইন—সবই চালু ছিল। অফিস খোলা ছিল। অন্যদিকে মে মাস নাগাদ পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্যেরও অভাব ছিল না। সার্বিকভাবে বলা যায়, তখনকার প্রশাসনিক পরিস্থিতি আজকের পাকিস্তানের চেয়ে ভালো ছিল! কিন্তু আজকের পাকিস্তানের মতো তখনো কেউ সংখ্যালঘু ও গরিবদের নিয়ে মাথা ঘামাত না। আমার নাতনি এখন উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে নাকি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে তা নিয়ে আমার উদ্বেগ হয়। কিন্তু আমার নিজের গ্রামে বা লাহোরের উর্দু মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা হয় না, সেটা আর এখন আমার বা অন্য কারও উদ্বেগের কারণ নয়। অথচ আমি ৪০ বছর লাহোরে সচেতন নাগরিক হিসেবে দিনাতিপাত করেছি।
ঢাকায়ই আমি বেশি সময় ছিলাম। সেখানে ১৯৭১ সালের মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত ভুতুড়ে পরিবেশ ছিল। যে ছোট মহলে আমি চলাফেরা করতাম, সেখানে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে: সেনানিবাস, ঢাকা ক্লাব, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ও নিউ মার্কেটের কাছাকাছি এক চায়নিজ রেস্তোরাঁ। অধিকাংশ মানুষের মতো আমার দৃষ্টিও নিজের চৌহদ্দির বাইরে যায়নি। তবে শহরের নানা জায়গায় আমার যাতায়াত ছিল। আমার ভায়রা রিয়াজ আহমেদ সিপ্রা ঢাকার এসএসপি ছিলেন। আমাদের প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতো। আমি নানা জায়গায় গেলেও বাঙালিদের হৃদয়ের ভেতরে আমার দৃষ্টি যেত না। তারা নির্বাক থাকলেও নিপীড়িত বোধ করত। বাঙালিরা এটাও জানত, উর্দিধারীদের হাতেই তাদের জানমালের ভাগ্য। বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে মুসলিম লিগের নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও মওলানা ফরিদ আহমেদের সঙ্গে দেখা হতো। অন্যদিকে অধ্যাপক গোলাম আযম ও চৌধুরী রহমত এলাহি ভারতীয় সীমান্তে অন্তর্ঘাত চালানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী সরবরাহ করতে আমার সঙ্গে দেখা করতেন। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাদানরত ভারতীয় পণ্ডিত ড. ইয়াসমিন সাইকিয়া আমাকে একবার এক সত্য কাহিনি বলেছিলেন। তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ১৯৯০-এর দশকে তিনি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের খুঁজতে গিয়ে সহযোগিতা পাননি কেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, এক ধর্ষিতা নারী তাঁকে বলেছিলেন, ‘যারা তাঁদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিত, তাঁরাই এখন শাসক।’
কেউ গল্প বলতে পারেন, গল্পের কাহিনির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। ইতিহাসে না বলা কথারও গুরুত্ব আছে। আমি একবার দুই বাঙালি সেনাকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম, তঁাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে ইউনিফর্ম ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে তারাও যুদ্ধবন্দী হয়। তারা তিন বছর ভারতীয় কারাগারে ছিল। ১৯৭৬ সালে লাহোরে এদের একজনকে আবিষ্কার করলাম, সে তখন বাবুর্চির কাজ করত। তাকে দেখে আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘কামাল-উদ-দিন, তুমি।’ সে জবাব দিল, ‘স্যার, আপনিই আমাকে এসবের মধ্যে এনেছেন।’ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের ছুড়ে ফেলেছে। তাদের মধ্যে আরেকজন এখন ঢাকায় শিক্ষকতা করে।
না বলা কথাটি হচ্ছে, একদিন আমি কমান্ডো ইউনিটের এক প্রিয় সৈনিক সম্পর্কে সুবেদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি অপ্রস্তুতভাবে বললেন, ‘স্যার, আজিজ-উল-হককে হত্যা করা হয়েছে।’ সেই সময় কাউকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করা সমীচীন না হলেও আমি তা জিজ্ঞাসা করে বসলাম। সুবেদার বললেন, ‘প্রথমে তাদের একটি সেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারপর গুলি করা হয়।’ আজ ৪০ বছর পরও আমি সবচেয়ে বাজে যে দুঃস্বপ্নটি দেখি তা হলো, আমার সহকর্মী সেনাদের কারাকক্ষে গুলি করে মারা হচ্ছে। আমার এরপরের প্রশ্ন ছিল: ‘কতজনকে মারা হয়েছে?’ সুবেদার জানালেন, ‘সেখানে ছয়জন ছিল, তবে দুজন বেঁচে গেছে। তারা মরার ভান করে পড়ে ছিল।’
বললাম, ‘তারা এখন কোথায়।’
‘কুমিল্লায়, হেফজাতে আছে।’
আমি ঢাকা থেকে কুমিল্লায় উড়ে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, দুটি ভূত, তাদের প্রায় চেনা যায় না বললেই চলে। একজন সৈনিকের কাছে এর মানে কী তা যদি কেউ জানত! এটা হাজার হাজার মৃত্যুর ঝাপটা সহ্য করা বা হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটানোর চেয়েও বেশি কিছু। আমি তাদের বের করে আনলাম। তাদের ইউনিফর্ম ও হাতিয়ার দেওয়ার নির্দেশ দিলাম। বললাম, বেতন নিয়ে তারা যেন ১০ দিন পর ফিরে আসে। তারা ফিরে এসে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করল। এরপর তারা যুদ্ধবন্দী হয়। অনেক ঝামেলার পর ১৯৭৬ সালে তারা দেশে ফিরে গেল। এই গল্পগুলো কথকের ওপর নির্ভর করে।
স্বেচ্ছায় পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়াটাই আমার অপরাধ। কারণ, সব সেনাসদস্যই তো একই পোশাক পরে। ঢাকার এয়ারফোর্স মেসে দেখেছি, সহকর্মীরা কত মানুষ মেরেছে তা নিয়ে গর্ব করত। টনি নামের এপিপির এক সাংবাদিক লন্ডনে পালিয়ে গিয়ে টাইমস অব লন্ডন-এ সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসতার বিবরণ প্রকাশ করেছেন। এসব পড়ে আমার অপরাধবোধ বেড়ে গেছে। আমরা সবাই একই অপরাধের ভাগী। আমরা অনেকেই হয়তো সরাসরি কাউকে হত্যা করিনি। কিন্তু আমরা চোখ বুজে ছিলাম। ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ প্রতীক বর্ধন

সূত্র: পাঞ্জাবি লেখকদের ব্লগ https://uddari.wordpress.com/2011/03/30/liberation-war-historicizing-a-personal-narrative-by-col-nadir-ali/
নাদির আলি: অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা, ১৯৭১-এ বাংলাদেশে কর্মরত; পাঞ্জাবি কবি ও ছোটগল্পকার।