ভূমিকম্পের ঝুঁকি আছে, বাড়ি নির্মাণে নিয়ম মানতে হবে

এ এম এম সফিউল্লাহ, উপাচার্য, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এ এম এম সফিউল্লাহ, উপাচার্য, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়ে অধ্যাপক সফিউল্লাহ বলেন, ভূমিকম্প ‘প্লেট টেকটোনিকসের’ ব্যাপার। প্লেটের নড়াচড়ার কারণে প্রচুর শক্তি জমে। পরে একসময় রিলিজ হয়ে যায়। এই শক্তি মুক্ত (রিলিজ) হওয়ার সময় যে ঝাঁকুনি হয়, সেখান থেকে ভূমিকম্প হতে পারে। বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মধ্যম পর্যায়ের। জাপানের মতো এত ব্যাপক না, তবে ঝুঁকি আছে। এটা মূলত প্রাকৃতিক ভূকাঠামো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।

ভূমিকম্প সচেতনতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এম এম সফিউল্লাহ প্রথম আলোকে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্প নিয়ে তিন পর্যায়ে কাজ করার আছে। ভূমিকম্প হওয়ার আগে, ভূমিকম্প হওয়ার সময় এবং ভূমিকম্প–পরবর্তী সময়ে।

অধ্যাপক সফিউল্লাহ বলেন, ইটের তৈরি বাড়িতে (ব্রিক বিল্ডিং) ভূমিকম্পের সময় ঝাঁকুনি বেশি হয়। তাই ঝুঁকি বেশি। তবে এগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। এতে বাড়িগুলো ভূমিকম্পের সময় ভেঙে গেলেও পুরোপুরি ধসে পড়বে না। তিনি বলেন, জলাশয় ভরাট করে বাড়ি করা হলে লিকুইফ্যাকশন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঝাঁকুনি হলে বাড়ি দেবে যাবে। কারণ, যখন ভূমিকম্পের সময় ঝাঁকুনি হয়, তখন মাটির ভেতর পানির চাপ থাকায় মাটির শক্তি কমে যায়। এখন জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে মূলত ভিটি বালু দিয়ে। এ কারণে জায়গাগুলো আলগা বা ঢিলে অবস্থায় থাকে। এভাবে বালু দিয়ে জায়গা ভরাট করলে বাড়ি মজবুত হলেও ধসে পড়তে পারে। এটা থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো মাটি ভরাটের সময় ঘনত্ব বাড়িয়ে পরিপূর্ণভাবে জায়গা ভরাট করা।

অধ্যাপক সফিউল্লাহ বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণের প্রবণতা বাড়ছে। তবে এতে কোনো সমস্যা নেই, যদি নকশা ঠিকমতো করে নিয়মনীতি অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণ করা হয়। তিনি বলেন, বাড়ি তৈরির জন্য ব্যবহার করা রড কত সাইকেল লোড নিতে পারবে, তা পরীক্ষা করে নিতে হবে। সাইক্লিং লোডিং ছাড়াও বাড়িতে আগুন লাগলে রডের প্লাস্টার সরে যায়। রডের কম্পোজিশন ও ফায়ার রেসিসট্যান্স জানা থাকতে হবে। রডের ওপরের প্রলেপ পুরু কি না দেখতে হবে।

 সফিউল্লাহ বলেন, বিদ্যমান জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জানতে হবে ভূমিকম্প কতটা ব্যাপক হতে পারে, কীভাবে বাড়ি তৈরি করতে হবে ও কোন জায়গায় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা বেশি, সেখানকার তথ্য সরবরাহ করে রাখতে হবে। আগে এ বিষয় সম্পর্কে সরকারি–বেসরকারিভাবে জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

অধ্যাপক সফিউল্লাহ আরও বলেন, ভূমিকম্পের সময় মাটির নিচের অংশ (বেজমেন্ট) থাকে সবচেয়ে নিরাপদ। বরং ওপরেই ঝুঁকি বেশি। এ কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে মাটির নিচে রেললাইন করছে। ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজে পরিকল্পনা ও শৃঙ্খলা থাকতে হবে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। প্রস্তুতি ঠিক থাকলে জীবন বাঁচানো ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।