ম্যামের মশাল ধরেই জীবনপথ এগিয়ে চলছে

কামরুন্নাহার। ছবি: লেখক
কামরুন্নাহার। ছবি: লেখক

আমার কৈশোর কেটেছে কুমিল্লা জেলার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাসে। ছাত্রীনিবাসের সুপার হলেন কামরুন্নাহার ম্যাম। আমি আজও ভাবি, তিনি আমার জন্য কী না করেছেন! মফস্বল থেকে কুমিল্লা শহরে পড়তে আসা আমি যেন কুয়োর ব্যাঙের মতো বিশাল সমুদ্রে এসে পড়লাম। নিজেই নিজেকে বুঝে উঠতে পারছিলাম না, খাপ খাইয়ে নিতে পারছিলাম না কিছুতেই। কোথাও যেন একটু ছন্দপতন হচ্ছিল। ম্যাম ব্যক্তিগত কিছু দুঃখ-কষ্ট থাকা সত্ত্বেও সব ভুলে মাতৃস্নেহে আমার সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিলেন। যে বাংলাকে আমার সবচেয়ে নীরস ও কাঠখোট্টা বিষয় বলে মনে হতো, ম্যামের আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি ও প্রাণবন্ততায় সেই বাংলাই আমার কাছে প্রিয় হয়ে উঠল। বাংলা আমার এতই প্রিয় সাবজেক্ট হয়ে গেল যে, বঙ্কিম, মানিক, বিভূতিভূষণ, শরৎ রচনাবলি হয়ে গেল আমার নিত্যকার সঙ্গী। এক সময় এটাও ভেবেছিলাম যে বড় হয়ে বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক হব। আমি স্কুলের সহশিক্ষা কার্যক্রমে একদমই অংশগ্রহণ করতাম না। শিশুতোষ নাটক ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা’য় ম্যামের কাছ থেকে আমার অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় এবং সেবার প্রতিযোগিতায় আমি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করি।

সরকারি গণগ্রন্থাগারের বইপাঠ প্রতিযোগিতা,খেলাধুলা, নাচগান, আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ম্যামের উৎসাহে অংশ নিই এবং একের পর এক পুরস্কার পেতে থাকি। তখন আমি নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হই। আমার জীবনের যা কিছু অর্জন, তাতে ম্যামের প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে। স্বাবলম্বী এবং মননশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি আমাদের পড়ালেখায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকে ম্যামের কড়া দৃষ্টি ছিল। আমাদের ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীদের দেখাশোনার কঠিন কাজটি তিনি অত্যন্ত নিপুণভাবে সম্পন্ন করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। তিনিই আমাকে জীবনে ঝুঁকি নিতে শেখান, আত্মোপলব্ধি করতে শেখান। তাঁর অম্লমধুর বকুনি, উপদেশ আজও আমার পরম পাথেয়। পড়ালেখার বাইরেও যে একটি সুন্দর রঙিন জগৎ আছে, যেখানে আত্মার বিকাশ ঘটে, এ আপ্তবাক্য ম্যামের কাছ থেকেই জানা।

লামিয়া হাসান তিথি। ছবি: লেখক
লামিয়া হাসান তিথি। ছবি: লেখক

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমার জীবনপথ পাল্টে দেওয়া শিক্ষক কামরুন্নাহারের প্রতি জানাই অজস্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ছাত্রীনিবাসের অনেক শিক্ষার্থী আজ ম্যামের জ্বালানো মশাল ধরেই জীবনপথে এগিয়ে চলছে। ম্যাম, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে আপনার অভাব গভীরভাবে অনুভব করছি। আমার জীবনে আবার আপনাকে চাই। ভালো থাকবেন ম্যাম আপনি, খুব ভালো থাকবেন।

লেখক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী