গ্রাহকের মনটাও ছুঁতে চাই

কানিজ আলমাস খান
কানিজ আলমাস খান
>কিছু একটা করার ইচ্ছে থেকে সৌন্দর্য সেবাকেন্দ্রের ব্যবসায় এসেছিলেন কানিজ আলমাস খান। পারলারের নাম দিলেন গ্ল্যামার। সেটা ছিল কলাবাগানে। ধীরে ধীরে গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চলে এলেন মূল সড়ক লাগোয়া জায়গায়। ১৯৯৮ সালের ৯ মার্চ বন্ধু রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিলের সঙ্গে মিলে খুলে ফেললেন পারসোনা। পরে দুজনের ব্যবসা আলাদা হয়ে যায়। তিন–চার বছর পরে কানিজ আলমাস খান বড় একটা জায়গায় চলে আসেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

২০ বছর পার করে এখন সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা কেমন আপনার?

কানিজ আলমাস খান: পারলারে এলেই সেজেগুজে বের হতে হবে—এমনটি আর নয়। অনেক সময় গ্রাহকেরা চলে আসেন শুধু এক কাপ কফি খেতে। কারণ এখানে এলে তাঁদের ভালো লাগে। আমরাও চেষ্টা করি তাঁদের স্বস্তি দিতে। যেন তাঁর মনটাও ছোঁয়া যায়, সেভাবেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

পারসোনার সেবা কীভাবে দিচ্ছেন? কর্মীই–বা কতজন?

কানিজ আলমাস খান: পারসোনার সেবাগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। চুল কাটা, ত্বক পরিচর্যা, চুল পরিচর্যা ও মেকআপ। প্রতিটি বিভাগেই ৫ জন করে কার্যনির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন। পুরো বাংলাদেশে পারসোনার ১১টি শাখায় এখন কাজ করছেন ২ হাজার ৮০০ কর্মী।

২০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু হয়েছিল পারসোনার যাত্রা। ১৭০০ বর্গফুট তিন বছর পর সেজে ওঠে ৩৪০০ বর্গফুটে। প্রথম দিকে প্রতিটি বিভাগে ৭-১০টি সেবা দেওয়া হতো। চেয়ারের সংখ্যাও ছিল কম।

ছেলেদের জন্য প্রথম যে শাখা (পারসোনা অ্যাডামস) শুরু হয়েছিল, সেটারও বয়স ১০ বছর হয়ে গেছে। ভারতীয় হেয়ার স্টাইলিস্ট জাভেদ হাবিবের সঙ্গে মিলে কাজ করা শুরু করলেও দুই বছর পর আর চুক্তি নবায়ন করিনি। পরে নিজেদের মতো করেই বাড়িয়ে নিয়েছি ছেলেদের পারসোনা। ছেলেদের জন্য ঢাকায় আছে ৫টি শাখা। এর বাইরে সিলেটেও ছেলেরা পারসোনার সেবা পাচ্ছেন। শিশুদের জন্যও আছে আলাদা চুল কাটার ব্যবস্থা।

পারসোনার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো কী?

কানিজ আলমাস খান: পারসোনায় বিভিন্ন পর্যায়ে পদ তৈরি করা হয়েছে। অভ্যর্থনায় বসার জন্য আলাদা দল, ক্যাশ কাউন্টার সামলানোর জন্য আলাদা দল, পরামর্শ বিভাগ, এক্সিকিউটিভ হাউস কিপিং বিভাগ, শাখা ইনচার্জ, ফ্লোর অ্যাটেনটেন্ড, মানবসম্পদ বিভাগ, বিপণন বিভাগ, আইটি বিভাগ, হিসাব বিভাগ, লন্ড্রি ইত্যাদি বিভাগ আছে আমাদের। বেতনের বাইরে কর্মীরা বাড়ি ভাড়া, ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি, ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চা নিয়ে কাজে আসতে পারার মতো সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন।

পারসোনার এগিয়ে যাওয়া শুধু পারলার কেন্দ্র করেই নয়। আছে স্পা সেবা নেওয়ার সুযোগও। চট্টগ্রাম, ধানমন্ডি, উত্তরা, গুলশান, মিরপুর, কাকরাইল, ওয়ারী, প্রগতি সরণিতে পারলার সেবার পাশাপাশি পাওয়া যাবে স্পা–এর ব্যবস্থা। অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে পারসোনা জিম ও পারসোনা ইনস্টিটিউট।

পারসোনার বড় অর্জন কী কী মনে করেন?

কানিজ আলমাস খান: গ্রাহকদের ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় অর্জন। এ পেশাকে সম্মানজনক একটি জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছি। এখানে অনেক মেয়েকে জড়িত করতে পেরেছি। এটা একটা ভালো পেশা। এই পেশায় মানুষকে সন্তুষ্ট করা যায় সেবা দিয়ে। তাদের মন জয় করা যায়। মন ছোঁয়া যায়। আমাদের মেয়েরা নিজেদের নিয়ে ভাবতেন না। এখন ভাবেন। তাঁরা যে আলাদা একজন মানুষ, তাঁরও যে কিছু আরাম দরকার। এই ধারণাগুলো তাঁদের মধ্যে এসেছে। তাঁরা নিজেদের জন্য কিছু করতে চান। আমরা এই পেশাটাকে একটা সম্মানের জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছি। মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে, নিজে রোজগার করছে। একটা সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের অর্জন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: রয়া মুনতাসীর