'এটা ওর জন্মদিনের উপহার'

শামীমা আক্তার (লিজা)
শামীমা আক্তার (লিজা)

সর্বশেষ খেলেছিলেন গত জুনে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়ান ইনডোর গেমসে। প্রায় আট মাস বিরতির পর জাতীয় মহিলা দাবায় অংশ নিয়েই চ্যাম্পিয়ন শামীমা আক্তার (লিজা)। আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টারের এবারের লক্ষ্য মহিলা বিশ্বকাপে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো
 ২০০৫ সালের পর ২০১০। এরপর ২০১৪ সালে (গত বছরের প্রতিযোগিতা) চ্যাম্পিয়ন হলেন। মাঝখানে পারেননি কেন?
শামীমা আক্তার (লিজা): এর আগে দুবার চ্যাম্পিয়ন হতে হতেও হতে পারিনি। দেখা যেত, দু-এক পয়েন্টের জন্য চ্যাম্পিয়নশিপ হাতছাড়া করছি। এবার শুরু থেকেই স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছি। টেনশন করিনি। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়ে খুব ভালো লাগছে।
 আজ তো আন্তর্জাতিক জিএম টুর্নামেন্টে খেলতে ফ্রান্সের কানে যাচ্ছেন। এই সাফল্যটা নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে?
শামীমা: শুধু এই টুর্নামেন্টের জন্যই নয়, আগস্টে অলিম্পিয়াডে খেলব, মেয়েদের বিশ্বকাপে খেলব অক্টোবরে...এই সাফল্যটা সবখানে কাজে দেবে। গত বছর শ্রীলঙ্কায় এশিয়ান জোনাল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় প্রথমবারের মতো মেয়েদের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছি। সেখানে অবশ্যই ভালো কিছু করতে চাই।
 অনেক দিন তো খেলার মধ্যেই ছিলেন না। কোনো সমস্যা ছিল?
শামীমা: আসলে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার কারণে কোনো টুর্নামেন্টেই খেলিনি।
 ফেডারেশনে আসতেন বাবার হাত ধরে। সেই বাবাও মারা গেছেন ছয় বছর হলো। বাবার স্বপ্ন কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন?
শামীমা: এখনো দিনগুলো ছবির মতো ভাসে। বাবা এসে বসে থাকতেন খেলা দেখতে। আমি যে খেলতাম, এটা বাবা খুব পছন্দ করতেন। তবে কখনো চাপ দিতেন না। উনি স্বপ্ন দেখতেন, একদিন তাঁর মেয়ে জিএম হবে। সেটা এখনো হতে পারিনি। আমার ডব্লিউআইএম হওয়াটাও দেখে যেতে পারেননি। আমি দুই বছরের মধ্যে জিএম হতে চাই। বাবা যেখানেই আছেন, সেটা দেখে নিশ্চয়ই শান্তি পাবেন। হয়তো বলবেন, লিজা পেরেছে। ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা। বাবার পর আরেকজন আমাকে খুব সমর্থন করে।
 কে তিনি?
শামীমা: আমার স্বামী খোন্দকার মোহাম্মদ আলী। ও লিসবনে থাকে। কিন্তু যখনই ফোনে বা স্কাইপে কথা হয়, সবার আগে খেলার খোঁজ নেয়। আজ (গতকাল) ওর জন্মদিন। এই চ্যাম্পিয়নশিপটা ওর জন্মদিনের উপহার।
 মহিলা দাবায় তো ঘুরেফিরে সেই চেনা মুখগুলোই...
শামীমা: এটা সত্যি, এখনো আমরা আটকে আছি এক জায়গায়। আসলে নতুন যারা আসে, একসময় হাল ছেড়ে দেয়। এখানে এবার এনএসসির কোচিংয়ে দেখলাম অনেক মেয়ে এসেছে। দুই বছর পর হয়তো অনেককে দেখা যাবে না। এদের ধরে রাখতে একটা ব্যবস্থা দরকার। এ জন্য ফেডারেশনকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
 অনেক দিন দাবায় কোনো জিএম টুর্নামেন্ট নেই। বিষয়টা কতটুকু পীড়া দেয়?
শামীমা: খুবই খারাপ লাগে। আমরা সব সময় খেলার মধ্যে থাকতে চাই। কিন্তু জানি না, কেন হচ্ছে না। আগে দেখেছি, এখানে অনেক বিদেশি খেলোয়াড় আসত। জমজমাট টুর্নামেন্ট হতো। এসব খুব মিস করি।
 আন্তর্জাতিক সাফল্যে মেয়েরা বেশ পিছিয়ে। এটার কারণ কী?
শামীমা: ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের তুলনা করতে চাই না। ছেলেরা সব সময় দাবা নিয়েই থাকে। কিন্তু আমরা যে কয়জন খেলি, বেশির ভাগের সংসার আছে। এরপর বাড়তি সময় দাবাতে দিই। নতুন খেলোয়াড় আসে না, সেটা অবশ্য আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু এখনো যে ঘুরেফিরে কয়েকজন খেলে যাচ্ছে, সেটাই বেশি।
 তেমন কোচিংও তো পান না আপনারা...
শামীমা: কোচিংটা খুব প্রয়োজন আমাদের। অলিম্পিয়াডে যাওয়ার আগে আমাদের পাঁচজন মেয়েকে যদি এক মাস করেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, তাহলে অনেক উপকার হতো।