চ্যাম্পিয়নদের শুরু চ্যাম্পিয়নের মতোই

আগের দিন ঢাকা আবাহনী হেরেছে। আজ প্রথম ম্যাচে হেরেছে ঢাকা মোহামেডানও। তবে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে বাংলাদেশের আরেক ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনী আর হতাশ করেনি। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ আফগানিস্তানের চ্যাম্পিয়ন শাহীন আসমায়ী ক্লাবকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।

এই জয়ের জন্য দুটি নাম আলাদা করেই বলতে হয়। ফরোয়ার্ড অগাস্টিন ওয়ালসন ও গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা। অগাস্টিন দুটি গোল করেছেন, এনকোচা কিংসলের করা অন্য গোলটিও এসেছে তাঁর দুর্দান্ত থ্রু পাস থেকে। আর রানা? দ্বিতীয়ার্ধে একটা সময় ব্যবধান ২-১ হয়ে যাওয়ার পর চার-পাঁচটি দুর্দান্ত সেভ করে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন তো তিনিই।
এই দুজনের বাইরে প্রশংসা করতে হবে কোচ সাইফুল বারী টিটুর কৌশলেরও। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রথমার্ধে দলকে আক্রমণাত্মক খেলিয়েছেন, দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতে খেলিয়েছেন রক্ষণাত্মক। তবে যখনই ব্যবধান ২-১ হয়ে যায়, তখন আবার মিডফিল্ডার বদলে নামান উইঙ্গার, যেন প্রতিআক্রমণে সাফল্য পায় দল। হলোও তাই। ৮৩ মিনিটে অগাস্টিনের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোলটিতে যদিও আসমায়ী রক্ষণের ভুল আছে, তবে সেটি এসেছে তো প্রতিআক্রমণ থেকেই।
প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। বিশেষ করে অগাস্টিন। আক্রমণে বাঁ প্রান্তে যেন ঝড় তুলেছেন। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই তাঁর ফ্রি কিক লাগে বারে লাগে, ২০ মিনিটে তাঁর পাস পেয়েও গোল করতে পারেননি এনকোচা কিংসলে। এ জন্যই কি না, চার মিনিট পর নিজেই নিয়ে নিলেন গোল করার দায়িত্ব। বক্সের ঠিক বাঁ প্রান্তে অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের পাস পেলেন, সেটি ধরেই ঢুকে গেলেন বক্সে। এরপর গোলকিপারের পাশ দিয়ে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিং!
৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনী দ্বিতীয় গোলটি পায়, সেটিতেও তাঁর অবদান। প্রতিআক্রমণে নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে এক দৌড়ে চলে আসেন শাহিন আসমায়ীর বক্সের কাছাকাছি। এরপর তিন ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে দুর্দান্ত থ্রু পাঠালেন স্ট্রাইকার এনকোচা কিংসলের দিকে। কিংসলেও করলেন দুর্দান্ত! শাহীন এফসির গোলকিপার এগিয়ে আসছিলেন, তাঁর মাথার ওপর দিয়ে আলতো করে বলটাকে তুলে দিলেন। প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্তভাবে ফিরে আসার চেষ্টা চালায় আফগান ক্লাবটি। একের পর এক আক্রমণও করতে থাকে। কখনো মাঝমাঠ দিয়ে, কখনো দুই উইং ব্যবহার করে ‘সাঁড়াশি’ আক্রমণ চালাতে থাকে স্বাগতিক দলের ওপর। ফলও পায় ৫৬ মিনিটে। মাঠে আসা জনা পঞ্চাশেক আফগান দর্শককে খুশি করে দেওয়ার মতোই গোল। যেন টিকি-টাকা! বক্সের ভেতর ও আশপাশে চারবার দ্রুত বল দেওয়া-নেওয়ার পর গোল করেন নাসির হোসাইনি। এমনই আক্রমণ, চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডাররাও যেন কোনো চ্যালেঞ্জ করতে ভুলে গেলেন।
ব্যবধানটা এক গোলে নেমে আসার পর যেন আরও স্নায়ুচাপে পড়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী, ওদিকে আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে আসামায়ী। এরপরও যে আফগান দলটি গোল পায়নি, সেটির কৃতিত্ব আবাহনী গোলকিপারের। দ্বিতীয়ার্ধেই অন্তত চারটি গোলমুখী শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন। তবে চট্টগ্রামের দলটির সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেছে ৮৩ মিনিটে। দূর করলেন কে? অগাস্টিন ওয়ালসন। আসাময়ীর ডিফেন্ডার ও গোলকিপারের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে।

ক্যাপশন: অগাস্টিন ওয়ালসন: জোড়া গোল করে চট্টগ্রাম আবাহনীকে এনে দিয়েছেন দারুণ এক জয়। ছবি: প্রথম আলো