দ্বীপদেশে সোনালি ট্রফি

কনফেত্তি উড়ছে, চারদিকে আলোর রোশনাই। আলোকিত টিসি স্পোর্টসের ফুটবলার-কোচের মুখগুলোও। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার পোচন এফসিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের শিরোপা জিতেছে মালদ্বীপের ক্লাবটি l সৌরভ দাশ
কনফেত্তি উড়ছে, চারদিকে আলোর রোশনাই। আলোকিত টিসি স্পোর্টসের ফুটবলার-কোচের মুখগুলোও। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার পোচন এফসিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের শিরোপা জিতেছে মালদ্বীপের ক্লাবটি l সৌরভ দাশ

আদনান মুরুথালার শট জালে জড়াতেই গ্যালারিজুড়ে উল্লাস। মাঠে খেলা দেখতে আসা মালদ্বীপের স্থানীয় ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই, বাংলাদেশের দর্শকেরাও আনন্দে নেচে উঠল। ডাগআউটে কাঁধে হাত রেখে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা সতীর্থরা ছুটে গেলেন মাঠের মধ্যে। গোলরক্ষক লিম্বু কিরণ কুমারকে জড়িয়ে ধরে সেকি উচ্ছ্বাস! একটু পরই বলটা জার্সির ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন টিসি স্পোর্টসের গোলকিপার। মাঠের মধ্যে পাতা লালগালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে এলেন খানিকক্ষণ। সবাইকে অভিবাদন জানালেন কুর্নিশ করে। যেন যুদ্ধ জয় করা এক রাজকুমার!
তা রাজকুমারই তো! মালদ্বীপের ক্লাব টিসি স্পোর্টসকে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা উপহার দেওয়ার অন্যতম কারিগর এই নেপালি যুবক। কাল টাইব্রেকারে কোরিয়ার পোচন এফসির মূল্যবান দুটি শট ঠেকিয়েছেন। এর আগে নির্ধারিত সময়ে ঠেকিয়েছেন আরও তিনটি দুর্দান্ত শট। শেষ পর্যন্ত দলকে এনে দিলেন শেখ কামাল ক্লাব কাপ টুর্নামেন্টের কাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। মালদ্বীপের ফুটবল ইতিহাসেও স্মরণীয় সন্ধ্যা ছিল কাল। মালদ্বীপের কোনো ক্লাবের এটিই যে প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা!
ম্যাচ শেষে মালদ্বীপের পতাকা হাতে পুরো স্টেডিয়ামে ল্যাপ অব অনার দিলেন খেলোয়াড়েরা। কোচ নিজাম মোহামেদকে চ্যাংদোলা করে কাঁধে তুলে নাচলেন কিছুক্ষণ।
টুর্নামেন্টের ফাইনালটা হয়েছে ফাইনালের মতোই। নির্ধারিত সময়ে ক্ষণে ক্ষণে রং বদলেছে ম্যাচের। ৮২ মিনিট পর্যন্ত ২-১-এ এগিয়ে থেকেও জিততে পারেনি পোচন এফসি। হৃদয় ভাঙার বেদনা নিয়ে কাল রাতেই চার্টার্ড বিমান ধরে দেশে ফিরেছে কোরিয়ানরা।
ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে শুকনো মুখে এসেছিলেন পোচন এফসির কোচ কিম জা উং। তীরে এসেও এভাবে তরি ডোবায় ভীষণ হতাশ তিনি, ‘এগিয়ে যাওয়ার পর এভাবে হারা খুবই হতাশার। মালদ্বীপ ভালো দল, আসলে ফুটবলে যারা বেশি গোল করবে ওরাই তো জিতবে।’
১৮ মিনিটে গোল করে প্রথমে এগিয়ে যায় টিসি স্পোর্টস। হাসান নাইজের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল হানিফ আবদুল্লাহর মাথা ছুঁয়ে ঢোকে জালে। উল্লাসে মেতে ওঠে টিসি স্পোর্টস। কিন্তু গোল খেয়ে হুঁশ ফেরে পোচনের। জায়গা বদলে মুহুর্মুহু আক্রমণে উঠেছে এরপর থেকে। ৪৩ মিনিটে জি কিউং ডিউকের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল জা ইয়ং ইক জালে জড়ান। ৫৩ মিনিটে আবারও কর্নার থেকে গোল করে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পোচন। জি কিয়ং ডিউকের কর্নার টিসির ডিফেন্ডার ফারাহ আহমেদের মাথা ছুঁয়ে জালে, স্কোরলাইন হলো ২-১। ৮৩ মিনিটে টিসির আজম মোহামেদের গোলে আবারও ম্যাচে ফেরে টিসি স্পোর্টস। নির্ধারিত সময় ছিল ২-২-এ সমতা। এরপর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে চেষ্টা করেও কোনো দল আর গোল করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ম্যাচের নিষ্পত্তি।
ম্যাচ শেষে সোনালি পদকটা হাতে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এলেন টিসির কোচ নিজাম মোহামেদ। এই জয়ের পুরো কৃতিত্ব দিলেন ফুটবলারদের, ‘আমি জানতাম ম্যাচটা মোটেও সহজ হবে না। এটা বিশাল এক জয়। ছেলেদের অভিনন্দন।’ আলাদা করে প্রশংসায় ভাসালেন গোলরক্ষক লিম্বুর, ‘গোলকিপারের ওপর আস্থা রেখেছিলাম। ও অনুশীলনে অনেক পেনাল্টি শট ঠেকিয়েছে। আজ আস্থার প্রতিদান দিল।’
মালদ্বীপের ক্লাব ফুটবলে এমন খুশির রাত আর আসেনি। একটা ট্রফি যেন মালদ্বীপের ফুটবলকে নিয়ে গেল আরও উচ্চতায়।
এক নজরে
চ্যাম্পিয়ন
টিসি স্পোর্টস
রানার্সআপ
পোচন এফসি
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট
হাং জি সাং
ম্যান অব দ্য ফাইনাল
আজম মোহামেদ
সর্বোচ্চ গোলদাতা
আমিরদিন শরিফি
(৪ গোল, শাহিন আসমাই)
ফেয়ার প্লে ট্রফি
টিসি স্পোর্টস