বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে 'বিগ থ্রি'

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ‘তিন বড় ভাই’ সাকিব, তামিম ও মুশফিক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ‘তিন বড় ভাই’ সাকিব, তামিম ও মুশফিক। ফাইল ছবি

গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ৭টি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুটি, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দুটি, ভারতের বিপক্ষে একটি আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র শেষ হওয়া সিরিজ। সাতটি টেস্টের পাঁচটিতেই বাংলাদেশ হেরেছে। অনেকের কাছে যা খুব স্বাভাবিক ফল। কিন্তু গত পাঁচ মাসের ব্যবধানে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অন্য মাত্রা দিচ্ছে। এই সাত টেস্টের প্রতিটিতেই আছে টেস্টেও বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছিল মাত্র ২২ রানে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে তো রানের পাহাড় গড়েছিল বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চেও ছিল খুঁজে নেওয়ার মতো অনেক কিছু। হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে হারলেও বাংলাদেশ কিন্তু ছেড়ে কথা বলেনি কোহলি-অশ্বিনদের।
গত পাঁচ মাসে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ বদলে যাওয়ার যে গল্পটা বলতে শুরু করেছে, সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আর বাংলাদেশের এই বদলে যাওয়ার পেছনে আছেন ‘বিগ থ্রি’!
ক্রিকেট ওয়েবসাইট উইজডেন ইন্ডিয়া বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের এই বদলে যাওয়া নিয়ে মূল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শিরোনাম : ‘বাংলাদেশের ধাপে ধাপে উন্নতির কেন্দ্রে আছে বিগ থ্রি’।
না, ক্রিকেটের সেই আলোচিত ‘তিন মোড়ল’ নয়। উইজডেন দেখিয়েছে, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার নেপথ্যে আছেন বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার—সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। এঁদেরই বলা হচ্ছে ‘বিগ থ্রি’। সাম্য দাশগুপ্ত বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে দেখিয়েছিলেন, কীভাবে দলের মূল তিন তারকা মেরুদণ্ড হয়ে আছেন।
তামিম বাংলাদেশের সর্বশেষ সাতটি টেস্টই খেলেছেন। সাকিবও। মুশফিক চোটের কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টটি খেলতে পারেননি। গত পাঁচ মাসে এই তিন ক্রিকেটার ব্যাট হাতে ছিলেন অসাধারণ। সঙ্গে সাকিবের বোলিং তো আছেই। তামিম তাঁর সর্বশেষ ১৪ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন একটি (১০৪ বনাম ইংল্যান্ড, ঢাকা)। পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন চারটি (৭৮, ৫৬, ৫৭ ও ৮২)। গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর পি সারা ওভালে পঞ্চম দিনের উইকেটে তাঁর ৮২ রানের ইনিংসেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি চল্লিশের ঘরে তাঁর ইনিংস আছে দুটি—৪০ ও ৪৯।
সাকিব এর মধ্যে করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। ওয়েলিংটন টেস্টে তাঁর ২১৭ রানের ইনিংসটি তো মহাকাব্য। সেই সঙ্গে ধরুন কলম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসে তাঁর ১১৬ রানের ইনিংসটি। সাকিবের সর্বশেষ ১৪ ইনিংসের মধ্যে ফিফটি আছে দুটি। চল্লিশের ঘরে গিয়েছেন একবার। বাঁ হাতি স্পিনে ২৯ উইকেট তুলে নিয়ে বারবারই বাংলাদেশের বড় আক্রমণ-অস্ত্র হয়ে উঠেছেন। কলম্বোয় তাঁর বদলে যাওয়া মূর্তি—একটু ধরে খেলা, একটু চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা প্রতিপক্ষের জন্য কতটা ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা হাড়ে হাড়ে তা টের পেল।
মুশফিক নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে পরপর দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংসটি ছিল ১৫৯ রানের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে ৮৫ রান করেছিলেন—১৫ রানের জন্য টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি করার কীর্তিটা করতে পারেননি। কিন্তু তাতে কী! তাঁর ব্যাট বড় ভূমিকা রাখছে টেস্টে বাংলাদেশের নতুন দিনের সূচনায়।
বিগ থ্রির এই মূল কাঠামোর ওপরে সাফল্যের সৌন্দর্যের পলেস্তারা বসিয়েছে তরুণ ক্রিকেটাররা। মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজদের পর দলে মোসাদ্দেক হোসেনের আবির্ভাব। উইজডেন এই দলটির নিউক্লিয়াস বলছে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। লেখক সাম্য দাশগুপ্ত বলছেন, ‌‘হাথুরু এমন একজন কোচ, যিনি দলের সব খেলোয়াড়ের সম্মান আদায় করে নিয়েছেন। হাথুরু খুব ভালো ধারণা রাখেন নিজের কাজটা সম্পর্কে। সবচেয়ে বড় কথা, দলের খেলোয়াড়দের প্রতি তাঁর নিয়ন্ত্রণ আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছে।’
সাম্যর মতে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অপেক্ষা করে আছে আরও দুর্দান্ত সব মুহূর্ত। দারুণ সব দিন। কেবল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত হিসেবেই নয়, শুভানুধ্যায়ী হিসেবে তাঁর ধারণা, দলটা সামনে আরও ধারালো হয়েই উঠবে।