বিদায়ে জয়, গর্বিত মাশরাফি

সাইফউদ্দিনের বলে ভিকুম সঞ্জয় আউট হতেই শ্রীলঙ্কা শেষ। বাংলাদেশ জিতল ৪৫ রানে। শহীদ আফ্রিদির মতো তর্জনী মেলে দুহাত বাড়িয়ে দিলেন সাইফ। কিন্তু তাঁর উদ্যাপন কজনের দৃষ্টি কেড়েছে সংশয় আছে! এ ম্যাচ তো মাশরাফি বিন মুর্তজার। এ বিজয় তো বিদায়ী অধিনায়ককে উৎসর্গীকৃত। সুতরাং সবার চোখ খুঁজে ফিরল মাশরাফিকে। অধিনায়ক মাথার টুপিটা খুললেন। শচীন টেন্ডুলকারের মতো দৃষ্টি মেললেন আকাশের দিকে। ওপরে যিনি আছেন, তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আর কি!
সবার পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে কাল মাশরাফি নিজেই জানিয়ে গেলেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই ওভাবে আকাশ পানে তাকানো, ‘আমি সব সময় বিশ্বাস করি, ভাগ্য বলে কিছু আছে।’
ভাগ্য বলে কিছু একটা আছে, তবে কাল সেই ভাগ্যকে বাংলাদেশ দল পক্ষে টেনে এনেছে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে, প্রতিপক্ষকে তিন বিভাগেই স্পষ্ট ব্যবধানে হারিয়ে দিয়ে। এ জয় বড় তৃপ্তির। ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেটি এল বলে মাশরাফির কাছে মনে হচ্ছে বিশেষ কিছু, ‘আমার খুব গর্ব অনুভূত হচ্ছে, শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে জিতলাম। তবে এই জয় সম্ভব হয়েছে আমার সতীর্থদের জন্য। সব কোচিং স্টাফের জন্য। এবং আপনারা যাঁরা সমর্থক, তাঁদের আকাঙ্ক্ষার জোরে। আমি আশা করব আপনারা সব সময়ই এভাবে বাংলাদেশ দলের পাশে থাকবেন।’
ক্ষুদ্রতম সংস্করণের ক্রিকেটে মাশরাফি নামের একটি অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। এটা ভাবলে কতটা আবেগ ছুঁয়ে যায় তাঁকে? পরিষ্কার দেখা গেল মাশরাফির কণ্ঠনালি একটু মোচড় দিয়ে উঠল। কোথায় যেন একটা ব্যথা! তবে এই আবেগকে পাত্তা না দিয়ে বলে গেলেন, ‘একটা পর্ব শেষ হয়ে গেল, একটু খারাপ তো লাগবেই। তবে ওয়ানডেতে আরও কিছুদিন আছি। এই অসাধারণ ছেলেগুলির সঙ্গে আরও কিছুদিন খেলার সুযোগ থাকছে।’
মাশরাফি তাঁর মতো করেই আরও বলে যান, ‘অমি নিজেকে খুব ভালোভাবেই সামলেছি। তবে আমার সতীর্থদের সামলাতে একটু বেগ পেতে হয়েছে। ওদের অনেকের চোখেই ছিল জল।’
অনেক কথা বলার ছিল। সবকিছু বলার সময় কোথায়? ভোরেই ঢাকাগামী বিমানের ফ্লাইট ধরতে হবে। এরপর আবার কোচ দূত পাঠিয়েছেন, টিম মিটিং আছে! মাশরাফি দ্রুত চেপে বসলেন লিফটে। সেখানেই শার্ট উঁচিয়ে যেন সবার সমর্থন কামনা করলেন, ‘কি, শরীরটা ফিট আছে না! আরে ওয়ানডে তো এখনো খেলব।’ হাসিমুখে শেষ করলেন কথা, কিন্তু এই হাসির মধ্যে কোথায় যেন টুকরো টুকরো কিছু ব্যথা থাকল ছড়িয়ে।
মাশরাফির আগে এসেছিলেন ম্যাচসেরা সাকিব। টানা আট ম্যাচ হারের পর টি-টোয়েন্টিতে জয় পেয়ে খুশি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সহ–অধিনায়ক। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ ড্র করার পর বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টি সিরিজেও করল ড্র। শ্রীলঙ্কায় এসে খুব বেশি দল এমনটা করতে পারেনি। এ জায়গায় সাকিবের মনে হচ্ছে বাংলাদেশ বড় একটা চ্যালেঞ্জ এতে জিতেছে। মাশরাফির বিদায় সাকিবের হৃদয়ের একটা সূক্ষ্ম তারেও টোকা দিয়েছে। সাকিব বললেন, ‘অবশ্যই আমরা মাশরাফি ভাইকে খুব মিস করব। কারণ, ড্রেসিংরুমে তাঁর উপস্থিতিটাই অন্য রকম। তবে উনি তো এখনো ওয়ানডে দলের একটা বড় অংশ হয়ে আছেন।’ মাঠে কাল দলের দেহভাষাটাই ছিল অন্য রকম, মাশরাফিকে বিদায়ী উপহার দিতেই কি এমন অনুপ্রাণিত ছিল দল? সাকিব বলে যান, ‘সেই অনুপ্রেরণা তো একটু ছিলই। তবে আসল কথা জয়। আমরা জিতে সিরিজটা ড্র করতে চেয়েছি।’
উইকেট দুর্দান্ত ছিল। এখানে দলের ভালো বোলিংই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন সাকিব।
কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেসহ কোচিং স্টাফের কেউ ঢাকা ফিরছেন না। আজ ভোরে কলম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পথ আলাদা হয়ে যাবে সাকিব আল হাসানের। তিনি সরাসরি চলে চলে যাচ্ছেন ভারতে আইপিএল খেলতে। দলের বাকিরা দারুণ এক গর্ব নিয়ে ফিরবেন ঢাকায়। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি কোনো সিরিজেই শ্রীলঙ্কাকে জিততে দেয়নি বাংলাদেশ!
এটাই খারাপ লাগছে শ্রীলঙ্কার ম্যানেজার অশাঙ্ক গুরুসিনহার কাছে, ‘ঘরের মাঠে আমরা কোনো সিরিজ জিততে পারলাম না, এটা বড় হতাশার। বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে তারা।’