চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭

বৃষ্টির উৎপাত। দু-একটি একপেশে ম্যাচ। টুর্নামেন্টটা শুরুতে খুব একটা আগ্রহ জাগাতে পারেনি। কিন্তু পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের কল্যাণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জমে উঠল। তা এতটাই যে, শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট পেয়ে গেল ক্রিকেট বিশ্বের কাছে চিরকাঙ্ক্ষিত ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আসলে কেমন গেল সেটি বোঝাবে এই খণ্ডচিত্রগুলি

বৈরী আবহাওয়া

এই বৃষ্টি তো এই রোদ। ইংল্যান্ডের অননুমেয় আবহাওয়া বাগড়া দিতে পারে, এটা কিছুটা অনুমেয়ই ছিল। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ফলে যা হওয়ার তা-ই হলো। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড আর বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া দুটি ম্যাচই ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। ফাইনালের আগে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে আরও তিনটি ম্যাচের ফল নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছে বৃষ্টি। ২০১৯ বিশ্বকাপও এই ইংল্যান্ডেই, প্রায় একই সময়ে। এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তাই একটা আগাম সতর্কতা দিয়ে রাখল আয়োজকদের। বিশ্বকাপে রিজার্ভ ডে রাখার কথা তারা এখন ভাবতেই পারেন।

শেষ চারে বাংলাদেশ

যে গ্রুপে ছিল বাংলাদেশ, সেখান থেকে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নটা বাড়াবাড়ি মনে হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাশরাফিদের অবিশ্বাস্য সেই জয় হিসাব দিল পাল্টে। সঙ্গে কিছুটা ভাগ্যের সাহায্য (পড়ুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয়) প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো বৈশ্বিক আসরে সেমিফাইনালে তুলে দেয় বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালটা অবশ্য প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে মাশরাফির দল। কিন্তু বড় মঞ্চে এত দূর যাওয়ার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের টুর্নামেন্টগুলোয় নিশ্চিতই জোগাবে আত্মবিশ্বাস।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর একটা সত্যই বলে ফেলেছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ—‘কেউই ভাবেনি আমরা ফাইনালে উঠব।’ একে তো তারকাহীন দল, তার ওপর দলের বেশির ভাগ সদস্যই নবীন। ফখর জামান, ফাহিম আশরাফ ও রুম্মান রাইসের পাকিস্তান দলে অভিষেক এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেই। যাদের নিয়ে বাজি ধরার লোকই ছিল না, সেই দলটিই মাতিয়ে দিল টুর্নামেন্ট। গ্রুপ ম্যাচে ভারতের কাছে হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। অননুমেয় বিশেষণটি ধরে রেখে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে হারিয়েছে ফেবারিট ইংল্যান্ড ও ভারতকে।

চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা

বর্ণবাদের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর প্রায় ২৬ বছর পেরিয়ে গেছে। আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার সখ্য হয়নি এখনো। ১৯৯৮ সালে ঢাকার মিনি বিশ্বকাপ (চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আদি নাম) বাদ দিলে গল্পটা কমবেশি একই। কখনো অদ্ভুতুড়ে বৃষ্টি আইনে তাদের কপাল পোড়ে, কখনো ব্রায়ান লারা একাই ম্যাচ কেড়ে নেন, কখনো ক্লুজনার-ডোনাল্ডের ভুল-বোঝাবুঝিতে লেখা হয় তাদের ট্র্যাজেডির গল্প, কখনো ডাকওয়ার্থ-লুইসের রান হিসাব করতে ভুল করে ফেলেন পোলক-বাউচাররা। এবারও পাকিস্তান ও ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে প্রোটিয়ারা বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্বেই।

অযথাই কন্ডিশনভীতি

অনেকেই বলেছিলেন ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না উপমহাদেশের দলগুলো। ইংলিশ কন্ডিশনটা মাথায় রেখেই কেউ কেউ বাংলাদেশ, পাকিস্তানকে তো নয়ই, ভারতকেও হিসাবে রাখতেও দ্বিধান্বিত থেকেছে। ব্রায়ান লারার সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বলেছিলেন ইংল্যান্ডকে। অথচ সব হিসাব-নিকাশ ওলটপালট করে দিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলল উপমহাদেশের তিন দল—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান। আর তিন দলেরই খেলায় মনে হয়নি তারা বিরূপ কন্ডিশনে খেলছে!

ফিল্ডিংয়ে লঙ্কা-বিপর্যয়

একটা সময় ছিল যখন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা দুর্দান্ত ফিল্ডিং করলে টিভির ধারাভাষ্যকারেরা বলে উঠতেন, শুধু শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিং দেখার জন্যই মাঠে আসা যায়! চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেই শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিংই হয়েছে যাচ্ছেতাই। বিশেষ করে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে অলিখিত ‘কোয়ার্টার ফাইনাল’টা তারা হেরেছে বলতে গেলে ফিল্ডিংয়ের কারণেই। ম্যাচ যখন পেন্ডুলামের মতো দুলছে, লাসিথ মালিঙ্গার পরপর দুই ওভারে সরফরাজের দুটি সহজ ক্যাচ ফেলে দেয় শ্রীলঙ্কা। মোট তিনটি ক্যাচ ফেলার মাশুলই দলটি গুনেছে ম্যাচ হেরে।

ইংল্যান্ডের হতাশা

ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব মিলিয়েই অসাধারণ এক দল। দুই বছর ধরে সীমিত ওভারে ইংল্যান্ড খেলছিলও অসাধারণ। তার ওপর টুর্নামেন্টটা নিজের দেশে। অনেকেই তাই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে দেখছিলেন ইংল্যান্ডকে। গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই দাপটের সঙ্গে জিতে সেই আভাসও দিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু সেমিফাইনালে পাকিস্তানের কাছে কী অসহায় আত্মসমর্পণ করল এউইন মরগানের দল এবং মনে করিয়ে দিল চোকার্সের আদি তকমাটা ছিল তাদের গায়েই।