রিয়াল ছাড়লে কোথায় যাবেন রোনালদো?

রোনালদোর এমন উদ্‌যাপন কি স্মৃতি হয়ে থাকবে রিয়াল-সমর্থকদের জন্য? ছবি: রয়টার্স
রোনালদোর এমন উদ্‌যাপন কি স্মৃতি হয়ে থাকবে রিয়াল-সমর্থকদের জন্য? ছবি: রয়টার্স

আগামী ৯ আগস্ট মেসিডোনিয়ায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গায়ের জার্সিটা কোন রঙের থাকবে? সাদা, নাকি লাল!

এক সপ্তাহ আগেও অবান্তর মনে হতে পারত এ প্রশ্ন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে সেটি আর মনে হচ্ছে না। উয়েফা সুপার কাপে রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই ম্যাচের আগেই বদলে যেতে পারে দুই দলের স্কোয়াড। ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়ালের গোলবারে দেখা যেতে পারে ডেভিড ডি গিয়াকে, রিয়াল থেকে ‘রেড ডেভিল’ হয়ে যেতে পারেন হামেস রদ্রিগেজ ও আলভারো মোরাতা। রোনালদোর দলও কি বদলে যাবে?

রিয়াল ছাড়বেন রোনালদো? কিন্তু কীভাবে? নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে কি আর দলছাড়া করবে রিয়াল? এ তো অসম্ভব! কিন্তু স্পেনের কর কর্তৃপক্ষ যেভাবে রোনালদোর পেছনে লেগেছে, তাতে তাঁর রিয়াল ছাড়া এখন আর অসম্ভব কিছু নয়।

১৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইউরো কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে রোনালদোর বিরুদ্ধে। এমন সংকটের সময় ক্লাবের কাছ থেকে নাকি কোনো সহযোগিতা পাননি পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। নিজের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবিই তুলেছেন রোনালদো। পর্তুগিজ পত্রিকা আ বোলার এক সংবাদেই কেঁপে উঠেছে ইউরোপের দলবদলের বাজার। এই পত্রিকাকেই রোনালদো নাকি বলেছেন, কর-প্রশ্নে ক্লাবের অসহযোগিতার কারণে তিনি ক্ষুব্ধ। তাঁর নাকি আর স্পেনেই ফেরার ইচ্ছা নেই।

অনেকেই রোনালদোর এসব কথাবার্তাকে বেতন বাড়ানোর উপায় হিসেবে দেখছেন। ২০১২ সালেও সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে নতুন চুক্তি আদায় করেছিলেন রিয়ালের কাছ থেকে—রোনালদো আবারও ক্লাবকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করছেন কি না, সে প্রশ্নই উঠেছে। সংবাদমাধ্যমে রোনালদোর ক্লাব ছাড়ার এই গুঞ্জনের পর নড়েচড়ে বসেছে রিয়াল। নতুন করে রোনালদোর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে ক্লাব। জিনেদিন জিদান ফোন করে কথা বলেছেন, সার্জিও রামোসও। ছুটি সংক্ষিপ্ত করে রোনালদোর সঙ্গে বসে কথা বলবেন, জানিয়েছেন জিদান। কিন্তু ক্লাবের শক্ত অবস্থান এবার বিষয়টিকে গোলমেলে করে ফেলেছে। কারণ, রোনালদোকে সব সময় সমর্থন জানিয়ে আসা ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ জানিয়েছেন, দলের সেরা তারকাকে ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবেন তাঁরা। কিন্তু ক্লাব ছাড়ার কথা জানিয়ে যদি তাঁর ব্ল্যাকমেলের ইচ্ছে থাকে, তবে সেটি ভালো ফল এনে দেবে না।

এখানেই আসছে ইউনাইটেড প্রসঙ্গ। ম্যানচেস্টারই তো সৃষ্টি করেছে আজকের রোনালদোকে। ২০০৯ সালে রিয়ালে যোগ দিলেও ‘রেড ডেভিল’দের প্রতি ভালোবাসা কখনোই গোপন করেননি রোনালদো। ইউনাইটেডও অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছে এ শতাব্দীতে তাদের সেরা খেলোয়াড়টিকে আবারও ফিরিয়ে নিতে। বাজারে গুঞ্জন উঠেছে, রোনালদো ও মোরাতার সঙ্গে ডি গিয়ার পাল্টাপাল্টি করার প্রস্তাব দিতে পারে ইউনাইটেড। সঙ্গে ১৮০ মিলিয়ন ইউরোর লোভনীয় প্রস্তাব তো আছেই!

তবে প্রস্তাবটি ঠিক হালে পানি পাচ্ছে না। কারণ, রোনালদো যদি ক্লাব ছেড়েই দেন, তবে মোরাতার মতো পরীক্ষিত স্ট্রাইকারকে কখনোই বিক্রি করতে রাজি হবে না রিয়াল। এ ছাড়া অনেক দিন ধরেই ক্লাবের ওপর নাখোশ হামেসের বিক্রির বিষয়টি তো থাকছেই। মাঝখানে গুঞ্জন উঠেছিল বায়ার্ন মিউনিখ ও চায়নিজ সুপার লিগকে নিয়েও। কিন্তু এমন দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায় ছেড়ে রোনালদো কখনোই চীনে যাবেন না। 

তবে ইউনাইটেডের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। পিএসজির মালিক নাসের আল-খেলাফি বিরাট রোনালদো-ভক্ত। দুজনের মধ্যে সম্পর্কও বেশ উষ্ণ। রোনালদোকে দলে টানতে নাকি ১৫০ মিলিয়ন ইউরো বিনা তর্কে করতে রাজি। সদ্য রিয়াল ছেড়ে যাওয়া রোনালদোর পর্তুগিজ সতীর্থ পেপেও এবার পিএসজিতে যোগ দিচ্ছেন। ফলে পিএসজিও দৌড়ে টিকে আছে ভালোমতোই।

হোসে মরিনহোও পিএসজির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। রিয়ালের সাবেক এই কোচ এখন ইউনাইটেডের দায়িত্বে আছেন। মরিনহোর সঙ্গে রোনালদোর সম্পর্ক দা-কুমড়া না হলেও বেশ শীতল। আর এ কারণেই হয়তো পর্তুগিজ তারকার ইউনাইটেডে ফেরার সম্ভাবনাটা কমে যাচ্ছে।