সমস্যার সন্ধানে সৌম্য

সৌম্য সরকার
সৌম্য সরকার

‘সমস্যা’ শব্দটা বারবারই এল। কখনো প্রশ্নকর্তারা আনলেন, কখনো সৌম্য সরকার। সৌম্য কখনো বলেছেন ‘টেস্টে যেকোনো জায়গায় ব্যাট করতে সমস্যা নেই’, অন্য প্রসঙ্গে আবার বললেন ‘সমস্যাটা আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে...।’ তাঁর যে সমস্যা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা, সেটা দ্বিতীয়টি।

সৌম্যর সমস্যা নিয়ে আলোচনার আগে সৌম্যকে নিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হওয়া সমস্যাটার সুরাহা হওয়া দরকার। এমন নয় যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই সেঞ্চুরি-টেঞ্চুরি করে একাকার করে ফেলেছেন। ৩১ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি একটাই, তা-ও দশম ম্যাচে। সাত টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংস ৮৬ রানের। তবু জাতীয় দলে আবির্ভাবেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন সৌম্য। ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য, দুর্দান্ত স্ট্রোক প্লে, শুরুর দিকের ধারাবাহিকতা—তাঁর কাছে সবার প্রত্যাশাটা বাড়িয়ে দিয়েছে এসবই। যে ছেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই ও রকম ব্যাটিং করে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দ্যুতি নিশ্চয়ই আরও বাড়বে। সবাই ভুলে গেল, ক্রিকেটে খারাপ সময় বলেও কিছু আছে। সৌম্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভালো শুরু করেছেন বলে কখনোই খারাপ সময়ের স্রোতে পড়বেন না, তা তো নয়!

সৌম্যর ওপর এটি প্রথম চাপ। দ্বিতীয় চাপ হলো, কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাঁর ওপর অগাধ আস্থা রেখে চলেছেন, কিন্তু তিনি সেটির প্রতিদান দিতে পারছেন না। সৌম্য ফর্মে না থাকলেও তাঁকে কোচ যে পরিমাণ সুযোগ দিচ্ছেন, সেটা খুব কম ক্রিকেটারেরই ভাগ্যে জোটে। কিন্তু বারবার কোচের ‘স্নেহ’ পেয়েও তা কাজে লাগাতে না পারায় সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হচ্ছেন সৌম্য। তাঁর ভেতর জন্ম নিচ্ছে অনুশোচনা।

সৌম্যর সমস্যা হতে পারে সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। অথবা এ-ও হতে পারে যে ভেতরে জমা হওয়া হতাশা আর অনুশোচনাই তাঁকে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে দিচ্ছে না। সৌম্য নিজেও জানেন না কারণ আসলে কী, সমস্যা আসলে কোথায়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল ওয়ানডে ওপেনার বলছিলেন, ‘একদিন হয়তো ভালো করছি, একদিন হচ্ছে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে হয়তো খারাপ করেছি। তার আগের সিরিজটা আবার ভালো করেছি। সবাই এ নিয়ে বলছে। তবে আমি সবার কথা শুনছি না। আমার সমস্যা আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে।’

ফিটনেস ট্রেনিং বলে এই কদিন ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ণের (মাঝে) দায়িত্বেই চলেছে সবকিছু। কোর্টনি ওয়ালশ ছুটি শেষ করে চলে আসায় ফিটনেস ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি তাসকিনরা এখন আছেন পেস বোলিং ক্যাম্পের অপেক্ষায় l প্রথম আলো
ফিটনেস ট্রেনিং বলে এই কদিন ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ণের (মাঝে) দায়িত্বেই চলেছে সবকিছু। কোর্টনি ওয়ালশ ছুটি শেষ করে চলে আসায় ফিটনেস ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি তাসকিনরা এখন আছেন পেস বোলিং ক্যাম্পের অপেক্ষায় l প্রথম আলো

নিজেকে নিয়ে সৌম্যর কিছু বিশ্লেষণ আছে, যেটা তাঁর ব্যাপারে অন্যদের মতামতের সঙ্গেও মেলে। ব্যাটিং নিয়ে যেমন বললেন, ‘আমার খেলার ধরনটাই এমন। যখন রান করি, তখন হয়তো ব্যাটিংটা দেখতে ভালো লাগে। যখন রান না পাই, তখন হয়তো দেখতে বাজে লাগে।’ এখন পর্যন্ত সমাধান না পেলেও নিজের সমস্যার একটা ময়নাতদন্ত রিপোর্টও আছে তাঁর কাছে, ‘নিয়মিত যদি একই রকম আউট হতাম, তাহলে বুঝতাম সমস্যাও একই রকম। কিন্তু আউটগুলো তো এক রকম নয়। চেষ্টা করছি সমস্যাগুলোর সমাধান করতে। আমাকে রান করতে হবে। এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ সুযোগ পেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেই জিততে চান রান করার সে চ্যালেঞ্জ। সিরিজে যেহেতু শুধু দুটি টেস্টই হবে, দলে থাকলেও তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী হয়তো হবেন না সৌম্য। সেটা বুঝেই তাঁর মানসিক প্রস্তুতি দলের প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় নেমে ভালো খেলার।

যেকোনোভাবেও। অর্থাৎ ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি বোলার হিসেবেও কিছু করতে চান। অলরাউন্ডার পরিচয় নিয়ে জাতীয় দলে এলেও বল হাতে নিয়মিত দেখা যায় না সৌম্যকে। বোলিং প্রসঙ্গ উঠতেই অবশ্য মনে করিয়ে দিলেন, ‘জানি না কেউ দেখেছেন কি না, আমি কিন্তু নিয়মিত নেটে বোলিং করি।’ বাংলাদেশ দিনে দিনে তিন পেসারের দল হয়ে ওঠায় চতুর্থ পেসার হিসেবে বল হাতে নেওয়ার সুযোগ সৌম্যর বেশির ভাগ সময়ই হয় না। আর দেশের মাঠে খেলা হলে তো স্পিনাররাই করে ফেলেন বেশির ভাগ ওভার। তারপরও বোলিংয়ের অভ্যাস সৌম্য রাখছেন অলরাউন্ডার সত্তাটাকে টিকিয়ে রাখতে, ‘বোলিংয়ে এখনো আমি নিজেকে প্রমাণ করতে পারিনি। যেদিন সুযোগ পাব, চেষ্টা করব কিছু করে দেখানোর।’

পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গেও তাই টুকটাক কথা বলেন সৌম্য, ওয়ালশের পরামর্শগুলো টুকে রাখেন মনের খাতায়। যদি কোনো দিন সুযোগ হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলার সৌম্যকেও যেন পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন।

সেটি যেদিন হওয়ার হবে। আপাতত জরুরি সৌম্যর ব্যাটে সেই দ্যুতি ফিরে আসা, যা মাঠ আলো করে হতাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয় বোলারদের।