অটোগ্রাফ পাননি, সেই রাগে...

ইউএস ওপেনের শিরোপা হাতে মুক্তোদানার হাসি স্টিভেনসের। ছবি: এএফপি
ইউএস ওপেনের শিরোপা হাতে মুক্তোদানার হাসি স্টিভেনসের। ছবি: এএফপি

চোটের কারণে ১১ মাসের নির্বাসন শেষে স্লোন স্টিভেনস টেনিস কোর্টে ফেরেন গত জুলাইয়ে। গত মাসের শুরুর দিকেও র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁর অবস্থান ছিল ৯৫৭তম। তখন কে জানত, স্টিভেনসের দুয়ারে কড়া নাড়ছে গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা! 

স্টিভেনস ঘুণাক্ষরেও জানতেন? প্রথম নারী হিসেবে র‍্যাঙ্কিংয়ের বাইরে থেকে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা (ইউএস ওপেন) জয়ের পর ২৪ বছর বয়সীর সরল স্বীকারোক্তি, ‘এটা অবিশ্বাস্য। আমার এখন অবসর নেওয়া উচিত। গত ২৩ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার করাই। তখন কেউ যদি বলত, আমি ইউএস ওপেন জিতব, তাহলে বলতাম, এটা অসম্ভব, স্রেফ অসম্ভব।’
ইউএস ওপেনে গতকাল মেয়েদের ফাইনালে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন স্টিভেনস। ফ্লাশিং মিডোয় ১৫ বছর পর অল-আমেরিকান ফাইনালে ৬-৩, ৬-০ গেমে হারিয়েছেন দীর্ঘদিনের বন্ধু ম্যাডিসন কিজকে। ১৯৭৫ সালে ইউএস ওপেনে কম্পিউটার র‍্যাঙ্কিং চালু হওয়ার পর কিম ক্লাইস্টার্সের পর দ্বিতীয় অবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জিতে হইচই ফেলে দিয়েছেন স্টিভেনস। মেয়েদের টেনিস ইতিহাসেই অবাছাই হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জেতা পঞ্চম খেলোয়াড় তিনি। তা, কে এই স্টিভেনস?

শরীরে অ্যাথলেট রক্ত
১৯৯৩ সালে ফ্লোরিডায় জন্ম স্টিভেনসের। তাঁর মা সিবিল স্মিথ বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সেরা সাঁতারু। প্রথম আফ্রো-আমেরিকান নারী হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন অল-আমেরিকান সাঁতার দলেও। স্টিভেনসের বাবা জন স্টিভেনস খেলেছেন রাগবি। এনএফএলে তাঁর দল ছিল নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়টস। ১৯৮৯ সালে এনএফএলেরই এক ম্যাচে তাঁর কারণে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন প্রতিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড়। পরে সেই খেলোয়াড়টি পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রাগবিতে আর কখনোই সেভাবে দ্যুতি ছড়াতে পারেননি স্টিভেনস।

অটোগ্রাফ...
৯ বছর বয়সে টেনিস খেলা শুরু করা স্টিভেনসের আদর্শ ছিলেন সেরেনা। ২৩ গ্র্যান্ড স্লামজয়ীর পোস্টারে সাঁটা ছিল তাঁর ঘর। কিন্তু ২০১৩ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে সেই সেরেনাকেই হারানোর পর এক সাক্ষাৎকারে স্টিভেনস বলেছিলেন, ‘এখন থেকে নিজের পোস্টার রাখব।’ টেনিস-বিশ্ব তখন টের পেয়েছিল দুজনের সম্পর্কে কিছু একটা গড়বড় আছে!
সেই গড়বড়ের সূত্রপাত ফেড কাপে। স্টিভেনস তখন উঠতি খেলোয়াড়। ফ্লোরিডার সেই টুর্নামেন্টে নিয়মিতই খেলতেন উইলিয়ামস বোনরা। একবার সেই টুর্নামেন্টে সারা দিন অপেক্ষা করেও তাঁদের অটোগ্রাফ পেলেন না। চার বছর আগে ইএসপিএন ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনা প্রসঙ্গে স্টিভেনস বলেছিলেন, ‘ওরা তিনবার আমাদের সামনে দিয়ে গেছে, কিন্তু পোস্টারে সই করেনি! এরপর থেকে আমি আর ওদের পছন্দ করি না।’
সেই সাক্ষাৎকারেই স্টিভেনস জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে হারের পর সম্ভবত তাঁকে উদ্দেশ করেই সেরেনা টুইট করেছিলেন, ‘আমি তোমাকে তৈরি করেছি।’ তাঁর বিপক্ষে জেতায় স্টিভেনসকে সবাই চিনেছে—সম্ভবত এ কথাই বোঝাতে চেয়েছিলেন টুইটে। সে যাই হোক, টেনিস বিশ্লেষকদের চোখে স্টিভেনস কিন্তু পরবর্তী সেরেনা!

পোকামাকড়-ভীতি
এবারের ইউএস ওপেন সেমিফাইনালে ভেনাস উইলিয়ামসের মতো প্রতিপক্ষকে হেসেখেলে হারালেও পোকামাকড়কে ভীষণ ভয় পান স্টিভেনস। এই আসরেরই কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে তা বোঝা গেছে। একটা মাছি তাঁর নাকের ওপর ভন ভন করছিল। স্টিভেনস বাধ্য হয়ে টেবিলের নিচে মাথা সেঁটে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ওটা কী?’ সঞ্চালক জবাব দিলেন, ‘মাছি।’ এরপরই পায়ের স্যান্ডেল খুলে মাছি মারার চেষ্টা চলল কিছুক্ষণ। ব্যর্থ হওয়ার পর স্টিভেনসের উক্তি, ‘পোকামাকড় পছন্দ করি না। ভীষণ বিরক্তিকর।’

আয়ের বছর
ইউএস ওপেন জয়ের পর র‍্যাঙ্কিংয়ে এখন ৮৩তম স্টিভেনস। কাল ডব্লিউটিও নতুন র‍্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসবেন ১৭তম স্থানে। এবারের ইউএস ওপেনে পা রাখার আগে চলতি বছর তাঁর মোট আয় ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে মোট আয় ছিল ৪৫ লাখ ডলার। কিন্তু শিরোপা জয়ের পর ক্যারিয়ারের মোট আয়ে ৮০ লাখ ডলারের কোটা ছাপিয়ে গেছেন স্টিভেনস। শুধু ইউএস ওপেন জয়ের প্রাইজমানি হোসেনের পেয়েছেন ৩৭ লাখ ডলার। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তাঁর কাছে নানা স্পনসর চুক্তির প্রস্তাব আসা শুরু হলো বলে!