ক্রিকেট না খেলেও তারকা হওয়া যায়

এভাবেই আকাশ ছুঁতে চেয়েছিল অর্ণব। তার সীমানা অনেক দূরে হলেও ঠিকানা পেয়ে গিয়েছে সে।
এভাবেই আকাশ ছুঁতে চেয়েছিল অর্ণব। তার সীমানা অনেক দূরে হলেও ঠিকানা পেয়ে গিয়েছে সে।

শয়নে-স্বপনে তার ক্রিকেট। টিভির পর্দায় দেখা ব্যাট হাতে খেলোয়াড়দের মতো হতে হবে মস্ত বড় ক্রিকেটার। স্বপ্ন পূরণ করার জন্য টানা দুই বছর (২০১৩ ও ২০১৪) বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) লম্বা লাইনে দাঁড়াল। কিন্তু ভাগ্যের শিকে না ছেঁড়ায় ভর্তি হওয়া হলো না ক্রিকেট বিভাগে। বালক অর্ণব শাহরার মনে প্রশ্ন, তাহলে কি আর তারকা হওয়া হবে না?

সৌভাগ্য লুকিয়ে ছিল তার হতাশা উপহার দেওয়া সেই খেলোয়াড় তৈরি কারখানাতেই। ক্রিকেটে সুযোগ না হওয়ায় ঘুরতে ঘুরতে শুটিং রেঞ্জে ঢুকে নতুনে বন্দুক-গুলির প্রেমে পড়ে যাওয়া। ব্যাস, শুটিংয়ের ভর্তি পরীক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে সুযোগ হয়ে গেল। সেই থেকে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে পড়ল তারকা শুটার হওয়ার নেশায়। ২০১৪ সালের গল্প। তিন বছরের ব্যবধানে সেই বালক আজ রাইফেল হাতে হয়ে উঠেছে উঠতি তারকা। জাপানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের যুব বিভাগে গত শনিবার রুপা জয় করেছে ছেলেটি। শুধু কি তা-ই? এই সাফল্যে বাংলাদেশের প্রথম শুটার হিসেবে ‘কোটা প্লেস’ পেয়ে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে যুব অলিম্পিকে। স্পষ্টত তারকা হওয়ার স্বপ্নের সিঁড়িটা এখন তার হাতের মুঠোয়, ‘দুই বছর ক্রিকেটে ট্রায়াল দিয়ে ভর্তি হতে না পেরে ভেঙে পড়েছিলাম। পরে শুটিংটা ভালো লেগে যায়। এরপর থেকে বড় শুটার হওয়ায় আমার স্বপ্ন। আজকে রৌপ্য জেতার চেয়ে আমার বেশি ভালো লাগছে। আমি সরাসরি অলিম্পিকে জায়গা করে নিয়েছি। আপনি তো জানেন, এর আগে শুধু গলফ থেকে সিদ্দিকুর রহমানই সরাসরি কোটা প্লেস পেয়ে অলিম্পিকে খেলেছে।’ ফোনের ওপর প্রান্ত থেকেও সাতক্ষীরার ছেলে অর্ণবের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসটা টের পাওয়া যাচ্ছিল।

শনিবার দেশকে ওই খুশির খবর উপহার দিয়েই ঢাকায় থাকা মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেছে অর্ণব। ব্যবসায়ী বাবা আলিফ হোসেন ও গৃহিণী মা হামিদা আক্তার নাকি তাঁদের বড় ছেলেকে ইতিমধ্যে সারপ্রাইজ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমার মা-বাবা আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। আজকের এই সাফল্যের কথা শুনে তারা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে।’ দুই ভাইয়ের মধ্যে অর্ণবই বড়। থাকে ঢাকার মোহাম্মদপুর।

গতকাল বিজয়মঞ্চে রুপা জয়ের হাসি।
গতকাল বিজয়মঞ্চে রুপা জয়ের হাসি।

শনিবার দেশকে আরও বড় সুসংবাদ উপহার দিতে পারত অর্ণব। ২৫০ পয়েন্ট নিয়ে সোনা জেতা চীনের চাংহং ঝাংয়ের চেয়ে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ কম। ২৪৯ দশমিক ৫ স্কোর করে রুপা জিতেছেন তিনি। বড় রকমরে আফসোসই বলা যায়। তবে যা হয়েছে, তা-ই নিয়েই অর্ণব খুশি, ‘কী হয়নি, কী হতে পারত, এটা নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই। যা পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমার টার্গেট অলিম্পিকে পদক জেতা।’ আগামী বছর অক্টোবরে আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে অনুষ্ঠিত হবে যুব অলিম্পিক।

বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশন যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তা নিয়ে আশা দেখাই যায়। জাপান থেকে ফিরেই সে ডেনমার্কের কোচ ক্লাভস ক্রিস্টেনসেনের অধীনে অনুশীলন শুরু করবে। অলিম্পিকে পদক জিততে পারলেই তো অনেক বড় তারকা। উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করা অর্ণবও এখন টের পাচ্ছে, শুটার হয়েও তারকা হওয়া যায়।