বিপিএলে তারুণ্যের কেতন ওড়ে

‘আকর্ষণ বাড়াতে’ বিপিএলের এবারের আসরে বিদেশি ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৫-এ। তার মানে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের এই আসরে প্রতিটি দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন ৬ জন করে দেশি ক্রিকেটার। দেশের ক্রিকেটের ‘উন্নতি’ যে আয়োজনের উদ্দেশ্য, সেখানে দেশি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ কমিয়ে কীভাবে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হতে পারে, সেই প্রশ্ন ছিলই। তারপরও দেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স খুব যে হতাশ করছে, তা নয়। প্রতিবারের মতো এবারের বিপিএলও কিছু প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়ের সন্ধান দিয়েছে। এসব খেলোয়াড় ভবিষ্যতে তারকা হিসেবে দেশের ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার যোগ্যতা রাখেন। আসুন জেনে নিই তাঁদের পারফরম্যান্স—

আবু জায়েদ
এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় আছেন খুলনা টাইটানসের এই পেসার। ১২ ম্যাচে ১৮ উইকেট পেয়েছেন তিনি। গড় ২০.৩৮। তরুণ পেসার হিসেবে বাহবা পাওয়ার মতোই পরিসংখ্যান। তবে ওভারপ্রতি রান দেওয়ার গড়ে (৮.৯৫) ভবিষ্যতে আরও কিপটে হতে হবে জায়েদকে।

দারুণ সব ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন খুলনার আরিফুল হক। ফাইল ছবি
দারুণ সব ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন খুলনার আরিফুল হক। ফাইল ছবি

আরিফুল হক
খুলনা টাইটানসের আরেক তরুণ। ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্য খুব অপরিচিত কেউ নন। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক। বোঝাই যাচ্ছে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একজন ভালো ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার সব গুণই আরিফুলের আছে। এবার বিপিএলে ১২ ম্যাচে ২৯.৬২ গড়ে তাঁর মোট রান ২৩৭।

আবারও নজর কেড়েছেন আফিফ হোসেন। ফাইল ছবি
আবারও নজর কেড়েছেন আফিফ হোসেন। ফাইল ছবি

আফিফ হোসেন
আফিফ যে এবারের বিপিএলের আবিষ্কার, সেটা বলা যাবে না। গত বিপিএলে রাজশাহী কিংসের হয়ে আফিফের অফ স্পিন আলোচনায় এসেছিল। তবে এবার খুলনা টাইটানসের হয়ে ব্যাটিং-শৈলীর স্বাক্ষর রেখেছেন। সাবেক দল রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ৫৪ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে নিজেকে নতুন করেই চিনিয়েছেন আফিফ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ক্রিকেটারকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

গেইল আর ম্যাককালামের উইকেট নিয়ে আলোচনায় এসেছেন মেহেদী। ফাইল ছবি
গেইল আর ম্যাককালামের উইকেট নিয়ে আলোচনায় এসেছেন মেহেদী। ফাইল ছবি

মেহেদী হাসান
লিগ-পর্বে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন এই অফ স্পিনার। সেদিন রংপুরের হয়ে খেলেছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও ক্রিস গেইল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বিধ্বংসী এই জুটির বিপক্ষে মাঠে নেমেই বাজিমাত করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের এই তরুণ। প্রথম ওভারেই চাপে ফেলেন গেইল-ম্যাককালামকে। কিউই তারকাকে তো আউট করে ড্রেসিং রুমেই ফেরত পাঠান! এ ছাড়াও তুলে নেন শাহরিয়ার নাফীসকেও। ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে সেদিন ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মেহেদী। পরে রংপুরের বিপক্ষে আরও একটি ম্যাচেও তিনি জ্বলে ওঠেন। সে ম্যাচে আবারও ম্যাককালামের উইকেটসহ ২২ রানে নেন ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে ১০ ম্যাচ খেলে ১০ উইকেট—মন্দ নয়।

রাজশাহী কিংসের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন জাকির হাসান। ফাইল ছবি
রাজশাহী কিংসের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন জাকির হাসান। ফাইল ছবি

জাকির হাসান
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ক্রিকেটার কেন যেন মাঝের সময়ে প্রায় হারিয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার রাজশাহী কিংসের হয়ে জাকির ফিরেছেন স্বরূপে। ৮ ম্যাচে ২৪.১৪ গড়ে ১৬৯ রান করেছেন এই বাঁ হাতি ওপেনার। সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ৫১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দলকে জেতান জাকির।

ধীরে ধীরে আরও পরিণত হচ্ছেন সাইফউদ্দিন। ফাইল ছবি
ধীরে ধীরে আরও পরিণত হচ্ছেন সাইফউদ্দিন। ফাইল ছবি

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন
কুমিল্লার এই পেসার রাজশাহীর বিপক্ষে একটা ম্যাচে দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। ড্যারেন স্যামি তাঁর এক ওভারে নিয়েছিলেন ত্রিশের বেশি রান! সে মুহূর্তগুলোর কথা বাদ দিলে এবারের বিপিএলটা প্রায় নিজেরই করে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই জাতীয় দলে খেলে ফেলা এই তরুণ পেসার। পুরো টুর্নামেন্টে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। ডেথ ওভারের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে ভবিষ্যতে যে আরও ক্ষুরধার হয়ে উঠতে পারবেন, সে প্রতিশ্রুতি কিন্তু তিনি দিয়ে রেখেছেন।