ক্লপ জানেন গার্দিওলার ভ্রমরের কৌটো কোথায়

মোহাম্মদ সালাহর গোলটা মনে আছে?

মিসরীয় এই ফরোয়ার্ডের একটি থ্রু বল পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে বিপদমুক্ত করতে গিয়েছিলেন এডারসন। ম্যানচেস্টার সিটির গোলরক্ষক সেটা আবার তুলে দেন সালাহর পায়ে। সেখান থেকেই তাঁর বাঁ পায়ের বাঁকানো শট, ৪-১। কতটা চাপে পড়লে এডারসনের মতো গোলরক্ষক এমন দৃষ্টিকটু ভুল করতে পারেন, তা বোঝা খুব বেশি কঠিন নয়।

চাপ বলতে লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের ট্রেডমার্ক ‘গেগেং প্রেসিং’-এর যথার্থ ব্যবহার। এনফিল্ডের যেখানেই বল, সেখানেই ছিল লাল জার্সিধারীদের দৌড়ঝাঁপ। শুরুর বাঁশি থেকে শেষ পর্যন্তই সে মহড়াই দিয়ে গিয়েছেন সালাহ, ফিরমিনিয়োরা। এতেই থামানো গেছে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা পেপ গার্দিওলার সিটিকে।

প্রতিপক্ষ লিগে টানা ২২ ম্যাচে অপরাজিত গার্দিওলা। তার ওপর দলের সেরা পারফরমার কুতিনহো দল ছেড়েছেন। সব মিলিয়ে ম্যাচের আগে ক্লপের ঘাড়ে জমা হয়েছিল কতশত চাপের বোঝা। জার্মান এই মস্তিষ্ক সব চাপ জয় করেছেন প্রতিপক্ষের ওপর চাপ দিয়েই। ফুটবলের ভাষায় যাকে বলে ‘হাই প্রেসিং’। মাঠে সাহসিকতার সঙ্গে যা করে দেখিয়েছেন চেম্বারলিন, এমরি চানরা। সেই সঙ্গে চেম্বারলিন, ফিরমিনো, সাদিও মানে ও সালাহর নিখুঁত ফিনিশিংয়ের প্রদর্শনী। বক্সের অনেক বাইরে থেকে মানে ও সালাহর গোল দুটি তো চোখে লেগে থাকার মতো।

অলরেডদের চারটি গোলেরই শুরুটা হয়েছে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে। একটু সরাসরি বললে সিটির ডিফেন্ডারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভুল করতে বাধ্য করা। চেম্বারলিনের গোল থেকে শুরু করে ফিরমিনো, সাদিও মানে ও শেষে সালাহ, সব গোলই তো তাই।

ক্লপই একমাত্র কোচ, যিনি সর্বোচ্চ ছয়বার হারিয়েছেন গার্দিওলাকে। অর্থাৎ জার্মান ভদ্রলোকের ভালোই জানা ছিল সিটির মেরুদণ্ডে আঘাত করতে হবে। তাই জিওরজিনিও ভাইনালডম, এমরি চান ও চেম্বারলিনের মতো শারীরিকভাবে শক্তিশালী বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার নিয়ে দল সাজিয়েছেন। চান তো প্রায় একাই দলের রক্ষণকে সুরক্ষা দিয়েছেন। আবার সিটির আক্রমণের সুর কেটেছেন। ‘সুপার সানডে’তে পাওয়া গিয়েছে ফলাফলটাও। ডি ব্রুনেই, সার্জিও আগুয়েরোদের ঘাড়ের ওপর বারবার নিশ্বাস পড়েছে তাদের। ম্যাচ শেষে ক্লপ নিজেই বলেছেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের প্রেসিংটা ছিল অন্য গ্রহের।’

এতেই ৩০ ম্যাচ অপরাজিত থাকা সিটি হারল। এ চাপের মুখেই প্রতিপক্ষের অর্ধে মাত্র চারবার বলে স্পর্শ করতে পেরেছেন সার্জিও আগুয়েরো। আর আক্রমণ গড়ার কারিগর কেভিন ডি ব্রুইনা ছিলেন বোতলবন্দী। পরশু পায়ে বল পেয়ে ৩৩ ভাগ সময়ই সেটা প্রতিপক্ষের পায়ে দিয়েছেন ব্রুইনা। লিভারপুল অর্ধে ৪০ ভাগ সময়ই দিয়েছেন ভুল পাস। ক্লপের প্রেসিং ফুটবলই বাধ্য করেছে ব্রুইনাকে এতটা অসহায় হতে। ব্রুইনার কাছ থেকে সহযোগিতা না পেয়ে আগুয়েরোও হয়ে পড়েছিলেন নখদন্তহীন বাঘ।