যে স্মৃতি মনে নেই রুবেলের!

অভিষেকের স্মৃতি ভুলেই গেছেন রুবেল হোসেন। ছবি: প্রথম আলো
অভিষেকের স্মৃতি ভুলেই গেছেন রুবেল হোসেন। ছবি: প্রথম আলো

সব প্রথমের স্মৃতি নাকি মানুষ ভুলতে পারে না! সেটি যদি হয় আনন্দদায়ী স্মৃতি, তাহলে তো কথাই নেই! অথচ রুবেল হোসেনের নাকি সুখস্মৃতিটা মনেই নেই!

২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ত্রিদেশীয় সিরিজে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক রুবেলের। অভিষেকটাও কী দুর্দান্ত। বোলিং করার সুযোগই পেয়েছিলেন ৫.৩ ওভার। ৩৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে রঙিন করে রাখলেন অন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক।
আশ্চর্য, স্মৃতিটা রুবেলের মনেই নেই! সংবাদ সম্মেলনে লাজুক হাসিতে শুধু বললেন, ‘ভুলে গেছি। আপনারা ভালো ভালো স্মৃতি মনে করিয়ে দেন। অথচ সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছেন!’
সেই স্মৃতি! কোন স্মৃতি? পরে জানা গেল রুবেল আসলে ভুল বুঝেছেন। তিনি ভেবেছেন, অভিষেক নয়, তাঁকে তাঁর অভিষেক সিরিজের ফাইনালটার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের দোরগোড়া থেকে বাংলাদেশ ফিরে এসেছিল রুবেলের মাত্র দুটি ওভারেই।
২০০৯ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ১৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ১১৪ রানেই। শক্তিশালী শ্রীলঙ্কানদের বিপক্ষে জয়টা যখন ক্রমেই চলে আসছিল হাতের কাছে, তখন বাংলাদেশের মহাসর্বনাশ করেছিল ফারভিজ মাহরুফ-মুত্তিয়া মুরালিধরনের অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেট জুটি (৩৯। ৩০ বলে যখন শ্রীলঙ্কার দরকার ৩৫ রান, রুবেল ২ ওভারে দিয়ে বসলেন ৩২ রান! মুরালিই নিলেন ৩১ রান।
ফাইনালে এত বাজে বোলিং করেছিলেন যে অভিষেকের রঙিন স্মৃতিও ধূসর হয়ে গেছে রুবেলের কাছে, ‘শুধু মনে আছে অভিষেকে ভালো করেছিলাম। কত উইকেট পেয়েছি সেটা আর মনে নেই।’
অভিষেকেই ভালো করে বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন, বাংলাদেশ দলকে দীর্ঘদিন সেবা দিতে তিনি এসেছেন। এটা ঠিক, ক্যারিয়ারটা মোটামুটি লম্বাই করতে পেরেছেন। কিন্তু যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, ততটুকু কি পেরেছেন?
গত ম্যাচেই উইকেটের ‌‘সেঞ্চুরি’ করেছেন রুবেল। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট নিতে তাঁর খেলতে হয়েছে ৮১টি ওয়ানডে।
ছোটা আরও দ্রুত হলো না কেন, রুবেল সেটির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘এক শটা উইকেট পেয়েছি আট-নয় বছরে। এক বছর চোটে পড়েছিলাম। অনেক বছর লাগল। এটা নির্ভর করে কত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের দেশে পেস বোলাররা হয়তো বেশি সুযোগ পান না। তেমন কোনো লক্ষ্য নেই। তবুও চাই ২৫০-৩০০ উইকেট পেতে। হলে ভালো লাগবে।’
রুবেল যে ২৫০-৩০০ উইকেটের কথা বললেন, চোট-পারফরম্যান্স সবকিছু পেরিয়ে সেটি কি সম্ভব হবে? ১০০ উইকেট পেতে যাঁর ৮ বছর লেগেছে, ঐকিক নিয়মে ২০-২৫ বছর লেগে যাওয়ার কথা! সম্ভব-অসম্ভবের দোলাচল থাকবেই। তবুও স্বপ্ন দেখতে অসুবিধা নেই। রুবেল তাই বলছেন, ‘আশা করতে দোষ কী? স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে অসুবিধা নেই। আশা করছি, দেখি কী হয়। মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে। আমি না হয় স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকলাম।’