হাথুরুর শ্রীলঙ্কাকে লজ্জাই দিল বাংলাদেশ

চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে একপলক ধরল ক্যামেরা। নিজেকে ড্রেসিংরুমের টিভি পর্দায় আবিষ্কার করে হাথুরুসিংহে হেসেই দিলেন। অসহায়ের হাসি কাকে বলে এর সংজ্ঞা হয়ে থাকল সেই হাসি। শ্রীলঙ্কা তখন ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। ম্যাচটা যেন ইনিংসের প্রায় অর্ধেক পথেই শেষ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা? নাকি আরও আগে? যখন ব্যাট হাতে বাংলাদেশ ৩২০ রান তুলল। এই শ্রীলঙ্কার কাছে ৩২১ করা তো ঝড়ের বেগে অ্যাডাম পিকে ওঠার মতোই ব্যাপার! শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ১৫৭ রানে অলআউট হয়ে হারল ১৬৩ রানে।

রানের ব্যবধানে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ের নতুন রেকর্ড। শ্রীলঙ্কা এর আগে কখনোই বাংলাদেশের কাছে ১০০ রানের ব্যবধানে হারেনি। সেই অভিজ্ঞতাও তাদের হলো নতুন করে। দুই দিনের ব্যবধানে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের কাছে হেরে সিরিজেই কোণঠাসা হয়ে পড়ল হাথুরুর দল। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বোলিং শ্রীলঙ্কাকে রীতিমতো লজ্জা দিয়েছে। প্রথম ৩ উইকেটের দুটিই নিয়েছেন মাশরাফি। যদিও আবারও ব্যাটে-বলে নায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ফিফটি করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৩ উইকেট। একটি সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট।

নাসিরকে দিয়েই বোলিংয়ের শুরুটা করেছিল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সব সময় যে কৌশলটা নেওয়া হয় আর কী! কোচ থাকা অবস্থায় হাথুরুসিংহে যে কৌশল অনেকবারই ব্যবহার করেছেন, সে কৌশলেই প্রথম উইকেটটা তুলে নেয় বাংলাদেশ। নাসিরের বলে বোল্ড হন ‘ডেঞ্জারম্যান’ কুশল সিলভা। এরপর অভিজ্ঞ উপুল থারাঙ্গা আর কুশল মেন্ডিস মিলে শুরুর ক্ষতিটা সামলে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বড় বিপদের কারণ হয়ে ওঠার আগেই থারাঙ্গাকে (২৫) মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে ফেরান অধিনায়ক মাশরাফি। মেন্ডিসও বেশিক্ষণ টেকেননি (দলীয় ৬২ রানে)। মাশরাফির বলেই রুবেলকে ক্যাচ দেন। ৮২ রানে মোস্তাফিজের বলে বোল্ড হন নিরোশান ডিকভেলা।

৮২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার জন্য ‘আশা’ হয়ে ছিলেন দিনেশ চান্ডিমাল। এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ‘বিপদ’ হতে দেননি সাকিব। সরাসরি থ্রোতে চান্ডিমালকে রানআউট করে বাংলাদেশকে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে দেন। উজ্জীবিত সাকিব পরের ওভারে নিজে বল হাতে গুঁড়িয়েই দেন শ্রীলঙ্কাকে। আকিলা গুনারত্নে, ওয়ানিদু হাসারাঙ্গাকে পরপর দুই বলে ফেরালেন, দাঁড়ালেন হ্যাটট্রিকের সামনে। সেটা না হলেও পরে অনেকবার বাংলাদেশের বিপদের কারণ হয়ে দেখা দেওয়া, আজও ফণা তুলে দাঁড়ানো থিসারা পেরেরাকে আউট করেছেন।

রুবেল নেন দনাঞ্জয়ার উইকেটটি। মাত্র ৫১ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২.২ ওভারে ১৫৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার শেষ ৮ উইকেটই আসলে পড়েছে ৯৫ রানে। এখান থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশ ওদের জুটিই গড়তে দেয়নি। শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ জুটিই ছিল ৪১ রানের। এরপরের বড় জুটিটা ৩৩ রানের।

মাশরাফি আজ দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। ৮ ওভারে ১ মেডেনে ৩০ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিজের কার্যকারিতাই প্রমাণ করেছেন। নাসির ব্যাটসম্যানের চেয়ে যেন বোলার হিসেবেই এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কাছে বল হাতে যে প্রত্যাশা, সেটি বারবারই পূরণ করে যাচ্ছেন। আজও কুশল পেরেরার উইকেটটি তুলে নিয়ে শুরুতেই শ্রীলঙ্কার আত্মবিশ্বাসটা শেষ করে দেন।

মোস্তাফিজ আগের ম্যাচেই ছন্দে ফিরেছিলেন। আজও মন্দ করেননি। ৫ ওভার বল করে ২০ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এনে দিয়েছেন ব্রেক থ্রু। সাকিবের ৩ উইকেট ৪৭ রানে। ব্যাটে-বলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে আজও ম্যাচের সেরা সাকিব। সাইফউদ্দিন অবশ্য নিজেকে মেলে ধরার খুব বেশি সুযোগ পাননি।

গত অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পরপরই হাথুরু বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন হঠাৎ করেই। শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়টা যে হাথুরুর জন্য অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে, সেটা তিনি বুঝে গেছেন বাংলাদেশের ত্রিদেশীয় সিরিজেই। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পর আজ বাংলাদেশের কাছে স্রেফ উড়ে গেল তাঁর শিষ্যরা।
হাথুরু আবার না বলে বসেন, বাংলাদেশের কোচ হিসেবেই তো ভালো ছিলাম!

টস: বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

রান

বল

তামিম ক ডিকভেলা ব দনাঞ্জয়া

৮৪

১০২

এনামুল ক ডিকভেলা ব থিসারা

৩৫

৩৭

সাকিব ক ও ব গুনারত্নে

৬৭

৬৩

মুশফিক ব থিসারা

৬২

৫২

মাহমুদউল্লাহ ক থিসারা ব প্রদীপ

২৪

২৩

সাব্বির অপরাজিত

২৪

১২

মাশরাফি ক দনাঞ্জয়া ব প্রদীপ

নাসির এলবিডব্লু ব থিসারা

সাইফউদ্দিন অপরাজিত

অতিরিক্ত

১২

 

 

 

মোট (৫০ ওভারে, ৭ উইকেটে)           

৩২০

 

 

 

উইকেট পতন: ১-৭১ (এনামুল, ১৪.৫ ওভার), ২-১৭০ (তামিম, ২৯.১), ৩-২২৭ (সাকিব, ৩৭.৫), ৪-২৭৭ (মাহমুদউল্লাহ, ৪৫.১), ৫-২৮৪ (মুশফিক, ৪৬.৩), ৬-২৯৭ (মাশরাফি, ৪৭.৬), ৭-২৯৮ (নাসির, ৪৮.২)।

বোলিং: লাকমল ৯-০-৬০-০ (ও ১), প্রদীপ ১০-০-৬৬-২ (ও ১), দনাঞ্জয়া ১০-০-৪০-১ (এ ২), থিসারা ৯-০-৬০-৩ (ও ৩), গুনারত্নে ৫-০-৩৮-১, হাসারাঙ্গা ৭-০-৫১-০।

শ্রীলঙ্কা (লক্ষ্য ৩২১)

রান

বল

কুশল পেরেরা ব নাসির

থারাঙ্গা ক মাহমুদউল্লাহ ব মাশরাফি

২৫

৩৫

মেন্ডিস ক রুবেল ব মাশরাফি

১৯

৩৪

ডিকভেলা ব মোস্তাফিজ

১৬

২২

চান্ডিমাল রানআউট

২৮

৩৯

গুনারত্নে ক সাইফউদ্দিন ব সাকিব

১৬

১৯

থিসারা ক মাহমুদউল্লাহ ব সাকিব

২৯

১৪

হাসারাঙ্গা ক মুশফিক ব সাকিব

দনাঞ্জয়া ক সাকিব ব রুবেল

১৪

১৭

লাকমল ব রুবেল

প্রদীপ অপরাজিত                          

অতিরিক্ত (লেবা ৬, নো ১, ও ১)          

 

 

 

মোট (৩২.২ ওভারে, ১০ উইকেটে )      

১৫৭      

 

 

 

উইকেট পতন: ১-২ (কুশল পেরেরা, ২.১), ২-৪৩ (থারাঙ্গা, ৯.৪), ৩-৬২ (মেন্ডিস, ১৩.৪), ৪-৮৫ (ডিকভেলা, ১৮.৪), ৫-১০৬ (চান্ডিমাল, ২৪.২), ৬-১১৭ (গুনারত্নে, ২৫.৪), ৭-১১৭ (হাসারাঙ্গা, ২৫.৫), ৮-১৫০ (থিসারা, ২৯.৫), ৯-১৫২ (লাকমল ৩০.৫)।

বোলিং: নাসির ৪-০-২০-১, মাশরাফি ৮-১-৩০-২ (নো ১), রুবেল ৫.২-০-২০-২, মোস্তাফিজ ৫-০-২০-১, সাকিব ৮-১-৪৭-৩, সাইফউদ্দিন ২-০-১৪-০।

ফল: বাংলাদেশ ১৬৩ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান