কমনসেন্স আর 'কমন' নেই ক্রিকেটে
♦ টেস্টে খুবই হাস্যকরভাবে রানআউট হয়েছেন পান্ডিয়া, যাতে ক্রিকেটারদের কমনসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমর্থকেরাই!
♦ আধুনিক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে খেলাটির স্বাভাবিক জ্ঞান ভুলে যাচ্ছেন সবাই
একসময় ক্রিকেট খেলাটা খুব সহজ ছিল। দুই দল খেলতে নামত। এক দল ব্যাট করত, অন্য দল ফিল্ডিং। দিন শেষে যার রান বেশি, তারা হাসিমুখে মাঠ ছাড়ত। কিন্তু এখন এত সহজ সমীকরণ নেই। ব্যাটের সাইজ থেকে মাঠের ঘাসও এখন পরিকল্পনার অংশ। দ্রুত রান তোলা, বোলিংয়ে নানা রহস্য ডেলিভারির জন্ম দেওয়ার হরেক উপকরণ খুঁজে ফেরেন সবাই। এরই ডামাডোলে ক্রিকেট থেকে কমনসেন্সটাই নাকি হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্তত ইয়ান চ্যাপেলের ধারণা তা-ই।
ইএসপিএনে বর্তমান ক্রিকেটের অবস্থা নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। বড় চ্যাপেলের দাবি, ক্রিকেটে নতুন অনেক কিছুই আনা হচ্ছে—তথ্যপ্রযুক্তি, কলাকৌশল, ভারী ব্যাট। কিন্তু এসব করতে গিয়ে খুবই মৌলিক কিছুতে ফাঁক রয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটারদের মধ্যে। এমনই সব মৌলিক শিক্ষা, জীবনে ব্যাট-বল হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ শিক্ষা দিয়ে দেওয়ার কথা সবাইকে।
এ প্রসঙ্গে প্রথমেই চ্যাপেল টেনে এনেছেন হার্দিক পান্ডিয়াকে। সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের প্রথম ইনিংসে পান্ডিয়া রানআউট হয়েছিলেন। সে এমনই এক আউট, ঘটনার ভিডিও-ছবি দিয়ে বানানো ‘মিমস’ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাস্যরসের উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৌড়ে ক্রিজে ফেরার সময় হেলেদুলে দৌড়াচ্ছিলেন পান্ডিয়া। ব্যাট নামানোর কোনো চেষ্টা করেননি। পা-ও মাটিতে রাখার কোনো চেষ্টা ছিল না। পা ও ব্যাট দুটিই শূন্যে থাকায় ফিল্যান্ডারের থ্রোয়ে রানআউট হন ভারতীয় অলরাউন্ডার।
চ্যাপেল বলছেন, রান নেওয়ার সময় ব্যাট মাটিতে রাখো, যেকোনো কোচ সবার আগে এটাই শেখায় ক্রিকেটারদের। তাঁর দাবি, তাঁদের সময়ে এত কোচ ছিলেন না কিন্তু যাঁরা ছিলেন, তাঁরা অন্তত ক্রিকেটের একদম মূল শিক্ষাগুলো দিয়েছেন। বর্তমানে কোচের অভাব নেই। খেলার প্রতিটি বিভাগের জন্য একাধিক কোচ পান সবাই। তাই চ্যাপেল বুঝতে পারছেন না, ব্যাটসম্যানদের চার-ছক্কা মারা কিংবা বোলিংয়ে নানা কৌশল শেখাতে গিয়ে কোচরা এসব ভুলে যাচ্ছেন কি না। নাকি খেলোয়াড়েরাই আর পাত্তা দিচ্ছেন না। না হলে রান করার সময় ব্যাট নামানো কিংবা স্লিপে ক্যাচ ধরার জন্য নিজের ভারসাম্য ঠিক করার মতো খুবই মৌলিক জ্ঞান কেন থাকবে না ক্রিকেটারদের।
এক সপ্তাহ আগে ঘটা আরেকটি বিষয় নজরে এনেছেন চ্যাপেল। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার জিভেশান পিল্লায়কে ‘হ্যান্ডল দ্য বল’-এর ঘটনায় আউট দেওয়া হয়েছে। ক্রিকেটের মূল্যবোধ এতে হানি হলো কি না, এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। প্রায় সব সাবেক ক্রিকেটারই এ আউটের বিপক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু চ্যাপেলের কথা ভিন্ন। এই অধিনায়কের কথা হলো, ছোটবেলায় সবাইকে শিখিয়ে দেওয়া হয়, যতক্ষণ ব্যাট করবে, ততক্ষণ হাত দিয়ে বল ধরবে না। এই সামান্য বিষয়টি মেনে চললেই তো এত আলোচনার দরকার হয় না! ‘মানকাড’ আউটের ব্যাপারেও তা-ই, বোলার বল করার সময় ক্রিজে থাকলেই তো চলছে!
ক্রিকেটাররা নিজেরা যদি একটু কমনসেন্স নিয়ে খেলেন, তাহলেই এমন সব ঘটনা এড়ানো সম্ভব। একজন কোচ হয়তো এসব শেখাতে পারেন কিন্তু সেটা মাথায় গেঁথে নেওয়ার কাজটা ক্রিকেটারেরই। চার-ছক্কা মারার সহজ উপায় খুঁজতে গিয়ে এই সাধারণ ব্যাপারটাই হয়তো ভুলে বসছেন সবাই! ক্রিকেটে ‘আনকমন’ কৌশল আবিষ্কারের নেশায় তাই কমনসেন্স হারিয়ে যেতে বসেছে!