পাঁচ শর চূড়ায় নিলেন মাহমুদউল্লাহ

টেল এন্ডারদের নিয়ে দারুণ লড়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ছবি: প্রথম আলো
টেল এন্ডারদের নিয়ে দারুণ লড়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ছবি: প্রথম আলো
  • প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রানে অলআউট বাংলাদেশ।
  • ৮৩ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

চট্টগ্রাম টেস্টে মনে রাখার মতো প্রথম দিন কেটেছে বাংলাদেশের। ৪ উইকেটে ৩৭৪ রানের স্কোরটা ছিল টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। দ্বিতীয় দলের ইনিংসকে যত দূর সম্ভব টেনে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল ব্যাটসম্যানদের। স্পিন ধরতে শুরু করা উইকেটে সেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করলেন কি না একজন স্পিনার!

ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দাঁড়াতে পেরেছিলেন শুধু মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন নিয়ে মাঠ নামা মুমিনুল তাঁর ইনিংসে মাত্র ১ রান যোগ করে ফিরেছেন। ৪ উইকেটে ৩৭৪ রান নিয়ে আগের দিন শেষ করা দলটি এদিন সকালের সেশনে ৪৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায়। মুমিনুলের পর দ্রুতই ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৭ উইকেটে ৪১৭। এখান থেকে টেল এন্ডারদের নিয়ে কীভাবে ব্যাট করতে হয়, তা দেখিয়ে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

অষ্টম উইকেট লড়াই গড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ-সানজামুল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সানজামুলের এক সেঞ্চুরি ছাড়াও পাঁচটি ফিফটি আছে। বাঁহাতি এ স্পিনার যে ব্যাটিংটাও চালিয়ে নিতে পারেন, সেই প্রমাণ রাখলেন টেস্টেও। প্রথম সেশনে ২৮ ওভারে ৯৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অষ্টম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-সানজামুল জুটির অবদান ৫০ রান। ৭ উইকেটে ৪৬৭ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারে সান্দাকানের বলে সানজামুল (২৪) স্টাম্পিংয়ের শিকার হলে পাঁচ শ ছোঁয়ার পথে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তার আগে ক্রমে মন্থর হতে শুরু করা স্পিনবান্ধব উইকেটে কিন্তু দারুণ ধৈর্যের পরীক্ষা দেন সানজামুল। তাঁর ৫৬ বলের ইনিংসটিতে ছিল মাত্র ১ বাউন্ডারি। সানজামুল ফেরার পরের ওভারে তাইজুল ইসলামকেও তুলে নেন হেরাথ। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ হাল ছাড়ার পাত্র নন। মোস্তাফিজকে নিয়ে শেষ জুটিতে চালিয়ে যান লড়াই।

দশম উইকেটে ৩৫ রানের জুটির মধ্যে তাঁর একার অবদানই ২৫ রান। আক্ষেপ এই যে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্টেই মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরিটা পেলেন না! সেটা হতো তাঁর দারুণ এক ইনিংসের যোগ্য পুরস্কার। কিন্তু যোগ্য সঙ্গীর অভাবে মাহমুদউল্লাহ সেই কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার পাননি। বাংলাদেশের স্পিনাররা যেন মাঠে নেমেই স্পিনবান্ধব ও মন্থর উইকেটে পান, সেই পথ তৈরি করে দিতে মাহমুদউল্লাহ যতক্ষণ সম্ভব উইকেটে থাকার চেষ্টা করেছেন। ১২৬তম ওভারে সান্দাকানের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক টপকে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

প্রায় এক বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টটি ছিল এ সংস্করণে বাংলাদেশের শততম ম্যাচ। কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে সেই ম্যাচে দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সাকিবের চোটে ভাগ্য তাঁকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের টেস্টেই নেতৃত্ব পাইয়ে দেয়। প্রতিপক্ষ শিবিরে হাথুরুকে দেখে কি লড়াইয়ের আলাদা প্রেরণা পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ? তাঁর অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংসটি কিন্তু সেই ইঙ্গিতই দেয়। ১৩০তম ওভারে লাকমল মোস্তাফিজকে তুলে নেওয়ায় প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

এর আগে ১৭৫ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম দিন শেষ করেছিলেন মুমিনুল হক। স্বপ্ন ছিল প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। মনঃসংযোগ হারানোয় সেই স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছে তাঁর হাতেই। দ্বিতীয় দিনে উইকেটে স্পিন ধরায় আশায় রঙ্গনা হেরাথকে দিয়ে শুরু করিয়েছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল। অন্য প্রান্তে পেসার সুরঙ্গা লাকমল। একপ্রান্তে স্পিন অন্য প্রান্তে পেসার দিয়ে বোলিং করানোর সুফলটা দিনের তৃতীয় ওভারেই পেয়ে যান চান্ডিমাল। হেরাথের বলে শর্ট লেগে কুশল মেন্ডিসের তালুবন্দী হন মুমিনুল। তার আগে যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ১ রান।

মুমিনুল ফিরে যাওয়ার পর দলের ইনিংস লম্বা করার দায়িত্ব ছিল মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের ব্যাটে। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক টেস্টেই মাহমুদউল্লাহ সে দায়িত্ব পালন করলেও বাকিরা ব্যর্থ। সেটা কি উইকেটে স্পিন ধরার জন্য? হেরাথ-সান্দাকানদের বল বেশ বাঁক নেওয়ায় নিঃসন্দেহে চাপে ছিলেন ব্যাটসম্যানেরা। মোসাদ্দেক সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।

৯৭তম ওভারে হেরাথের ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিটি ডাউন দ্য উইকেট এসে মিড অন দিয়ে পার করেত চেয়েছিলেন মোসাদ্দেক। কিন্তু উইকেটের টার্ন আর হেরাথের অ্যাঙ্গেলে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো হয়নি। মিড অনে সান্দাকানের তালুবন্দী হওয়ার আগে মাত্র ৮ রান করেছেন। মিরাজ এসে রানের গতি বাড়িয়ে এ শঙ্কা কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অস্থিরতার জন্য পারেননি। অহেতুক ৩ রান নিতে গিয়ে রানআউট হন তিনি। তার আগে মিরাজের ১৯ বলে ২০ রানের ইনিংসটা শুধুই আক্ষেপের।

টস: বাংলাদেশ

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস

 

রান

বল

তামিম ব দিলরুয়ান

৫২

৫৩

ইমরুল এলবিডব্লু ব সান্দাকান

৪০

৭৫

মুমিনুল ক মেন্ডিস ব হেরাখ

১৭৬

২১৪

১৬

মুশফিক ক ডিকভেলা ব লাকমল

৯২

১৯২

১০

লিটন ব লাকমল

মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত

৮৩

১৩৪

মোসাদ্দেক ক সান্দাকান ব হেরাথ

১৫

মিরাজ রান আউট (ডিকভেলা/কুমারা)

২০

১৯

সানজামুল স্টাম্পিং ডিকভেলা ব সান্দাকান

২৪

৫৬

তাইজুল ব হেরাথ

মোস্তাফিজ ক ডিকভেলা ব লাকমল

২১

অতিরিক্ত (নো ৪, ও ৫)

মোট (১২৯.৫ ওভার, অলআ্উট)

৫১৩

উইকেট পতন: ১-৭২ (তামিম, ১৫.৫ ওভার), ২-১২০ (ইমরুল, ২৭.৪), ৩-৩৫৬ (মুশফিক, ৮৩.৫), ৪-৩৫৬ (লিটন, ৮৩.৬), ৫–৩৭৬ (মুমিনুল, ৯২.৪), ৬–৩৯০ (মোসাদ্দেক, ৯৬.১ ওভার), ৭–৪১৭ (মিরাজ, ১০২.২), ৮–৪৭৫ (সানজামুল, ১১৯.৩), ৯–৪৭৮ (তাইজুল, ১২০.২), ১০.৫১৩ (মোস্তাফিজ, ১২৯.৫)।

বোলিং: লাকমল ২৩.৫-৪-৬৮-৩ (ও১, নো ২), লাহিরু ১৫-১-৭৯-০ (ও ১), দিলরুয়ান ২৭-৪-১১২-১ (নো ২), হেরাথ ৩৭-২-১৫০-৩, সান্দাকান ২২-১-৯২-২ (ও ৩), ধনঞ্জয়া ৫-০-১২-০।