একটাই ব্যাখ্যা আছে তামিমের কাছে

ত্রিদেশীয় সিরিজের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজেও লক্ষ্য থেকে দূরেই থেকে গেছে বাংলাদেশ দল। ব্যর্থতার দায় তামিম ইকবাল নিচ্ছেন নিজেদের ওপরই।  প্রথম আলো
ত্রিদেশীয় সিরিজের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজেও লক্ষ্য থেকে দূরেই থেকে গেছে বাংলাদেশ দল। ব্যর্থতার দায় তামিম ইকবাল নিচ্ছেন নিজেদের ওপরই। প্রথম আলো

উইকেট-বিভ্রান্তিতে ঘরের মাঠেই পর হয়ে যাওয়া, দল নির্বাচনে সিদ্ধান্তহীনতা, অভিজ্ঞ প্রধান কোচ না থাকা-ব্যর্থতার কারণ হিসেবে এ রকম অনেক কিছুই আছে আলোচনায়। কিন্তু জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল বলছেন, ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার আসল কারণ নিজেদের সামর্থ্য ও প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে না-পারা

ব্যর্থতার অনেক কারণের কথাই বলা হচ্ছে। নিজেদের উইকেট নিজেরাই বুঝতে না-পারা, দল নির্বাচনে সিদ্ধান্তহীনতা, বিশেষজ্ঞ কোচ না থাকা-এ রকম আরও অনেক কিছু। আপনারা খেলোয়াড়েরা এসব আলোচনাকে কীভাবে দেখেন?
তামিম ইকবাল: দল খারাপ খেললে এ রকম অনেক আলোচনাই হয়। এটা নতুন কিছু নয়। তবে এগুলো দলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে বলে আমার মনে হয় না। আমরা ভালো খেলিনি, এটাই শেষ কথা। খারাপ খেলে হেরেছি। নিজেদের কন্ডিশনকে কাজে লাগাতে পারিনি। এর বাইরে অন্য কিছু নিয়ে ভাবার দরকার আছে বলে মনে করি না।

তাহলে বলতে চাচ্ছেন, এসব আলোচনা ঠিক নয় বা এগুলো দলের ব্যর্থতার কারণ নয়...
তামিম: আসলে এগুলোই কারণ কি না বা কী করলে কী হতো, তা বলার সময়টা চলে গেছে। এখন আর এসব বলে লাভ নেই। এটা তো সত্যি যে, পরিস্থিতি যা-ই হোক আমরা এর চেয়ে ভালো খেলতে পারতাম। এর চেয়ে ভালো খেলার সামর্থ্য আমাদের আছে। আমরা সেটা পারিনি, আমি এটাকেই ব্যর্থতার কারণ বলব।

ভালো খেলতে না-পারার কারণ কী? সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিজেদের দেশে বাংলাদেশ যেকোনো দলের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিল। এবার তাহলে দলের সেই চেহারাটা দেখা গেল না কেন?
তামিম: আমরা চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা ভালো খেলেছে। এটা কিন্তু হতেই পারে। একটা সিরিজ হারায় আমরা ঘরের মাঠে খারাপ দল হয়ে গেছি, ব্যাপারটা তা নয়। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে নিজেদের মাঠে খেলা হলেই আমরা সব ম্যাচ বা সিরিজ জিতব। এবারের সিরিজ বরং এটাই প্রমাণ করছে যে, আপনি যেখানেই খেলুন বা যত ভালো দলই হোক, এক মিনিটের জন্যও নির্ভার হওয়ার সুযোগ নেই। ভালো খেলার তাড়না, নতুন কিছু করার চেষ্টা সব সময় থাকতে হবে। অন্য দল যখন এখানে আসে, তারা সবকিছু জেনে-বুঝেই আসে। দোষটা আমাদের সবাইকে নিতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যার যার দায়িত্ব আরও ভালোভাবে পালন করতে পারতাম।

আপনাদের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবার শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে এসেছেন। আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশ দল সম্পর্কে হাথুরুসিংহের ধারণা শ্রীলঙ্কা সাফল্যের একটি বড় কারণ?
তামিম: দেখুন, সিরিজের ফল যা হয়েছে তাতে তিনি (হাথুরুসিংহে) এখন যেকোনো কথা বলতে পারেন। আমাদেরও সেগুলো মুখ বুজে শুনতে হবে। কিন্তু ফল যদি বিপরীত হতো, এই হাথুরুসিংহেই তখন আর কোনো কথা বলতেন না। কোনো সন্দেহ নেই, সিরিজ শেষে তিনি যেটা বলেছেন, সেটা ভুল নয়। আমাদের সম্পর্কে তিনি অনেক কিছুই জানেন। কিন্তু এটা তো সব দলই সব দল সম্পর্কে জানে। একটা দলের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এখনকার দিনে কোনো রকেটবিজ্ঞান নয়। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে গোপন বলে কিছু নেই। যদি হাথুরুসিংহেই শ্রীলঙ্কার সাফল্যের কারণ হয়ে থাকেন তাহলে জেমি সিডন্স আসার পর আমরাও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সব ম্যাচ জিততাম। তিনিও তো অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচ ছিলেন। কই আমরা তো অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পারিনি!

ব্যক্তিগতভাবে এই সিরিজটা আপনার জন্য কেমন গেল?
তামিম: আমি মনে করি, ত্রিদেশীয় সিরিজ আমার জন্য মোটামুটি ভালো গেছে। টেস্টে চট্টগ্রামে কিছু রান করলেও তাতে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমি মনে করি, আমার মান এখন আর ৪০-৫০ রান করে সন্তুষ্ট হওয়ার জায়গায় নেই। দুই-তিন বছর ধরে যা পারফর্ম করছি, তাতে আমার নিজের কাছেই নিজের প্রত্যাশা অনেক বেশি।

নিদাহাস ট্রফিতে তো শ্রীলঙ্কায় গিয়েই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খেলতে হবে। টুর্নামেন্টের আরেক প্রতিপক্ষ ভারতও বেশ শক্তিশালী। দেশে এত বাজে একটা সিরিজ খেলে ওখানে গিয়ে কীভাবে নিজেদের অনুপ্রাণিত করবেন?
তামিম: ভারতই সম্ভবত এখন টি-টোয়েন্টির সেরা দল। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তো ২-০-তে হারলামই। চেষ্টা করব যত তাড়াতাড়ি পারি দেশের সিরিজটার কথা ভুলে যেতে। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে অনেকে ঘরোয়া লিগ খেলবে, কেউ কেউ দেশের বাইরে যাবে খেলতে। এসবের মধ্যেই আমাদের আবার পুনর্গঠিত হতে হবে। আরও ভালো পরিকল্পনা, আরও ভালো মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের সবকিছু এই এক সিরিজে শেষ হয়ে যায়নি।

আপনি তাহলে মানসিক প্রস্তুতিকেই বড় করে দেখছেন?
তামিম: অবশ্যই। ব্যাটিং-বোলিংয়ের প্রস্তুতির জন্য তো বেশি সময়ও পাওয়া যাবে না। প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবেই নিজের কাজটা করে নিতে হবে। এরপর আমরা যখন একসঙ্গে বসব, পরিকল্পনাটা আরও ভালো কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে কথা বলব।