স্কুল পাস করেই বিশ্ববিদ্যালয়? বিসিবির পরিকল্পনা তো তেমনই!

সিলেটে গত অক্টোবরে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ ‘এ’। ছবি: বিসিবি
সিলেটে গত অক্টোবরে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ ‘এ’। ছবি: বিসিবি

বাংলাদেশের ক্রিকেট ঠিক পথেই আছে তো? উত্তর খুঁজেছেন রানা আব্বাস। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব আজ

>

• গত দুই বছরে মাত্র একটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল
• ‘এ’ দলের সর্বশেষ বিদেশ সফর ২০১৫ সালের নভেম্বরে
• বিসিবি এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) ও ‘এ’ দল আলাদা না করে এক করে দেওয়া হবে

বড় উথালপাতালের মধ্য দিয়ে বছরের প্রথম দুটি মাস গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের। জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ, ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি—তিন সংস্করণে বাংলাদেশ খেলেছে মোট ৯ ম্যাচ। এই ৯ ম্যাচে ১১ বার দল ঘোষণা করে ডাকা হয়েছে ৩২ খেলোয়াড়কে। এঁদের মধ্যে খেলেছেনই ২৮ জন। টানা তিন সিরিজ হারের পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে এ বিষয়টিই।

স্বল্প সময়ে এত খেলোয়াড়ের সমাবেশ বলে দিচ্ছে দল নির্বাচনে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট কতটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে। বিসিবি সভাপতির ভাষায়, ‘নাড়াচাড়া বেশি হয়েছে, অস্থিরতা বেশি ছিল।’ দল যখন টানা ব্যর্থতার বৃত্তে আটকা পড়ে, খেলোয়াড়দের ওপর যখন আস্থা কমে যায়, তখনই তৈরি হয় এ দ্বিধা। সেই দ্বিধায় পড়ে টিম ম্যানেজমেন্টের চাহিদাপত্র মেনে নির্বাচকেরা একে এনেছেন, ওকে দেখেছেন। নির্বাচকদের হাতে বিকল্প এতটাই কম ছিল যে, কখনো বা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট (অনূর্ধ্ব-১৯ দল) থেকেও ‘টান’ দিতে হয়েছে!
অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে তো যুব বিশ্বকাপ খেলা রেখেই জরুরি ভিত্তিতে দেশে চলে আসতে হলো। তড়িঘড়ি করে ডেকে আনার অর্থই যে দল সুযোগ পাওয়া নয়, সেই নির্মম বাস্তবতার সঙ্গেও পরিচয় হলো তরুণ স্পিনারের। আবার ডিসেম্বরে ঘোষিত ৩২ জনের প্রাথমিক দলে না থাকা জাকির হোসেনের সুযোগ হয়ে গেল আন্তর্জাতিক অভিষেকের!
কেন এত খেলোয়াড়ের ডাকা, সেটির কারণ হিসেবে জাতীয় দলের সাবেক কোচ সরওয়ার ইমরান বললেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একজন খেলোয়াড় কেন সরাসরি জাতীয় দলে খেলবে? মাঝে কেন “এ” দল, এইচপি দল, অনূর্ধ্ব-২৩ দল বলে কিছু থাকবে না? এত খেলোয়াড় একসঙ্গে অভিষেক করিয়ে দেওয়া হলো, তার মানে আপনার হাতে ৯-১০টা বিকল্প খেলোয়াড় নেই।’ এ যেন স্কুল থেকে পাস করার পর সরাসরি কোনো ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নামিয়ে দেওয়া।
খেলোয়াড়েরা চোটে পড়তে পারেন, ছন্দ হারিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু নির্বাচকদের হাতে বিকল্প কেন এত কমে গেল? কেনই বা যুব দল থেকেও খেলোয়াড় নিতে হলো? বয়সভিত্তিক ক্রিকেট ও জাতীয় দলের মাঝে একটা ‘সেতু’র অনুপস্থিত অনেক দিন ধরেই। সেতুটা হচ্ছে ‘এ’ দল, সরওয়ার ইমরান যেটির কথা বলছিলেন। বিসিবির এই দলটার কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। গত দুই বছরে মাত্র একটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ ‘এ’, সেটিও গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেশের মাঠে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে। ‘এ’ দলের সর্বশেষ বিদেশ সফর ২০১৫ সালের নভেম্বরে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ধাক্কা খাওয়ার পর বিসিবি অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে। বিসিবির পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান বললেন, এই বছর ‘এ’ দলের সিরিজ বাড়ানো হচ্ছে, ‘গত চার বছরের মধ্যে একটা বছর বিরতি গেছে কিছু পরিস্থিতির কারণে। এবার “এ” দলের ভালো প্রোগ্রাম হচ্ছে। জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার আসার কথা। আগস্টে বাংলাদেশ যাবে আয়ারল্যান্ডে। সেপ্টেম্বরে এখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আসার কথা চলছে।’
বিসিবি এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) ও ‘এ’ দল আলাদা না করে এক করে দেওয়া হবে। যাহাই এইচপি, তাহাই হবে ‘এ’ দল। এইচপি কাজ শুরু করবে মে মাসের শেষ সপ্তাহে। ‘এ’ দলের খেলা না থাকলেও এইচপি দলটা সক্রিয় অনেক দিন ধরেই। গত বছর অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড সফর করেছিল দলটা। কিন্তু ‘এ’ দলের সঙ্গে এইচপির কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। এইচপি অনেকটাই একাডেমি দল।
সাধারণত অফ সিজনে খেলোয়াড়দের এক জায়গায় রেখে ফিটনেস থেকে স্কিল ট্রেনিং হয় এইচপি প্রোগ্রামের আওতায়। অনুশীলন-পর্ব শেষে দেশে কিংবা দেশের বাইরে এক-দুটি সফর। সেখানে ‘এ’ দল অনেকটা জাতীয় দলের মতোই। কোনো একটা সফর কিংবা সিরিজের সামনে রেখে ঘোষণা করা হয় স্কোয়াড। যেখানে জায়গা পান জাতীয় দলে ছন্দ হারিয়ে ফেলা, ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো খেলা কিংবা জাতীয় দলে পা রাখার সম্ভাবনা আছে এমন খেলোয়াড়েরা।
এইচপি, ‘এ’ দল আলাদা থাকা মানে একজন খেলোয়াড়ের ম্যাচসংখ্যা যেমন বেড়ে যায়, নির্বাচকদেরও একসঙ্গে অনেক খেলোয়াড় পরখ করে দেখার সুযোগ থাকে। এইচপি-‘এ’ দল এক থাকলে যেখানে ২০-২৫ জন খেলোয়াড়ের সুযোগ থাকে, আলাদা থাকলে সেটিই হবে ৪০-৪৫ জনের। ৪০-৪৫ জন থেকে পাঁচজনও যদি পাওয়া যায় জাতীয় দলে, সেটিও অনেক বড় প্রাপ্তি বিসিবির। ২০-২৫ নাকি ৪০-৪৫ জন থেকে বেশি মানসম্পন্ন খেলোয়াড় পাওয়া যাবে, সেটিই সাদাচোখেই বোঝা যাচ্ছে।
‘এ’ এবং এইচপি দল এক থাকলে মানসম্পন্ন খেলোয়াড় পাওয়ার সুযোগটা কমে যাবে সেটি অবশ্য মনে করেন না জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন, ‘“এ” দল এবং এইচপি দল এক করলেই বেশি সুবিধা হয়। এতে খেলোয়াড় সরবরাহ কম হবে না। জাতীয় দলে ছন্দে হারিয়ে ফেলা কিছু খেলোয়াড় “এ” দলে আসবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করাদেরও এখানে জায়গা থাকবে।’
সবই ঠিক আছে। কিন্তু কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম যে এক নয়, সেটিও তো উপলব্ধি করতে হবে!

(আগামীকাল পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব)