আশা জাগিয়েও হলো না!

বিপদে হাল ধরলেও দল জেতাতে পারেননি মুশফিক। ছবি: প্রথম আলো
বিপদে হাল ধরলেও দল জেতাতে পারেননি মুশফিক। ছবি: প্রথম আলো

মুশফিক পারলেন, পারলেন না মুশফিক। প্রচণ্ড চাপের মুখে আরও একবার দলকে টানার দায়িত্বটা দারুণভাবে সামলেছেন মুশফিক। কিন্তু তাঁর দুর্দান্ত এক ফিফটিও ১৭৭ রান তাড়া করার কাজটা সহজ করতে পারল না। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। রানের ব্যবধান বাংলাদেশের লড়াইটা বোঝাতে পারছে না। পারছে না মুশফিকের অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসের বীরত্বও। পরাজিতের জন্য যে কাব্যগাথা তো দূরের কথা, কোনো সান্ত্বনাও বরাদ্দ নেই!

প্রেমাদাসার উইকেটে পেসাররা ভালো করেন। অন্তত এমনটাই শোনা গিয়েছিল সফরের আগে। কিন্তু আজ বাংলাদেশ ডুবল এক স্পিনারের কাছে। ওয়াশিংটন সুন্দরের সামনেই শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। আগের ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলা লিটন, ভয়ংকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেওয়া তামিম কিংবা ছন্দের খোঁজে থাকা সৌম্য—সবাই হার মেনে গেলেন সুন্দরের সুন্দর অফস্পিনের সামনে।

সুন্দরের কারণেই বাংলাদেশের শুরুটা অমন অসুন্দর হয়ে দাঁড়াল। প্রথম স্পেলের প্রত্যেক ওভারেই একটি করে উইকেট নিয়েছেন সুন্দর। ৪০ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশও যেন হারিয়ে ফেলছিল জয়ের পথ। তবু আশায় ছিল বাংলাদেশ, মুশফিকুর রহিম যে ছিলেন। মাহমুদউল্লাহও মাত্র উইকেটে এসেছেন। আশা বাঁধতেই পারে দল।

আগের ম্যাচেই যেখানে খুশি বল পাঠিয়েছেন মুশফিক। পাওয়ার প্লের শেষ দুই বলে নেমেই টানা দুই চার মেরে মাহমুদউল্লাহও ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন, তিনিও ভালো কিছু দেখাতে চান। কিন্তু প্রথম দুই বলেই ৮ বলের ইনিংসের বাউন্ডারিগুলো মেরে ফেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। যুজবেন্দ্র চাহালের বাজে একটা বলে এর চেয়েও দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। ৯ম ওভারেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। জয় তখনো ১১৫ রান দূরে।

মুশফিক-সাব্বির তবু পথ হারাতে দেননি দলকে। দুজনের ব্যাটে রানরেটটাও নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশের। ১৩তম ওভারেই ১০০ ছুঁয়ে ফেলল বাংলাদেশ। ৭ ওভারে ৭৩ রান, বাংলাদেশ কি পারবে?
এমন সময়ই পথ হারাল বাংলাদেশ। ১৪ থেকে ১৬-এই তিন ওভারে এল ১৬ রান। ৪ ওভারে ৫৭ রানের কঠিন সমীকরণে পড়ে ১৭তম ওভার শুরু হলো। দ্বিতীয় বলে চার মেরে চতুর্থ বলেই আউট সাব্বির। বাংলাদেশের হার কি লেখা হয়েই গেল?

মোহাম্মদ সিরাজের ১৮তম ওভারে ১৬ রান এল। সমীকরণটা দাঁড়াল ১২ বলে ৩৩। ১৯তম ওভারে ৫ রান ম্যাচটা সেখানেই শেষ করে দিল। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ২ রানে একটি উইকেট মুশফিকের অসম্ভব কিছু করার সম্ভাবনাটাও শেষ করে দিল। মুশফিক তবু দুটি বাউন্ডারি হাঁকালেন। তাতে আফসোসটা কেবল বাড়লই। বাংলাদেশ যদি একটা ওভার মেরে খেলে বেশি রান তুলতে পারত! কিংবা বল হাতে একটা ওভারে রানে যদি আরও একটু বাঁধ দেওয়া যেত। শেষের সমীকরণটা চাপের জগদ্দল পাথর হয়ে বসত না নিশ্চয়ই!

হেরে যাওয়া ম্যাচে প্রাপ্তি খোঁজা বোকামি। তবে শুক্রবারের অলিখিত সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ নামবে, তা কিন্তু বলাই যায়।

স্কোরকার্ড: 

বাংলাদেশ (লক্ষ্য ১৭৭)

রান

বল

তামিম ব সুন্দর

২৭

১৯

লিটন স্টা কার্তিক ব সুন্দর

সৌম্য ব সুন্দর

মুশফিক অপরাজিত

৭২

৫৫

মাহমুদউল্লাহ ক রাহুল ব চাহাল

১১

সাব্বির ব ঠাকুর

২৭

২৩

মিরাজ ক রায়না ব সিরাজ

আবু হায়দার অপরাজিত

অতিরিক্ত

মোট ( ২০ ওভারে, ৬ উইকেটে)

১৫৯

উইকেট পতন:

১-১২ (লিটন, ১.৫), ২-৩৫ (সৌম্য, ৩.৪), ৩-৪০ (তামিম, ৫.৪), ৪-৬১ (মাহমুদউল্লাহ, ৮.৪), ৫-১২৬ (১৬.৪ ওভার), ৬-১৫০ (মিরাজ, ১৯.২ওভার)।

বোলিং:

সিরাজ ৪-০-৫০-১, সুন্দর ৪-০-২২-৩, ঠাকুর ৪-০-৩৭-১, চাহাল ৪-০-২১-১, শঙ্কর ৪-০-২৮-০।

ফল:

ভারত ১৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ:

 রোহিত শর্মা