পাকিস্তানের যে ১১ ক্রিকেটারের সুযোগ হয়েছিল আইপিএল খেলার

এই ১১ পাকিস্তানি ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছিলেন আইপিএল খেলার
এই ১১ পাকিস্তানি ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছিলেন আইপিএল খেলার
>২০০৮ সালে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা খেলেছিলেন আইপিএলে। এরপর রাজনৈতিক কারণে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ১১ জন ভাগ্যবান পাকিস্তানি ক্রিকেটারের সুযোগ হয়েছিল আইপিএল খেলার

পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের এই আফসোস কোনো দিনই যাবে না। পৃথিবীর যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে চাহিদাসম্পন্ন হলেও আইপিএলে খেলার সুযোগ নেই তাঁদের। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণেই মূলত কপাল পুড়েছে তাঁদের। অথচ ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএলে ১১ জন পাকিস্তানি ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে। সে বছরের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ‘পাকিস্তানি-সম্পৃক্ততা’র অজুহাতে পরের মৌসুম থেকেই পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা নিষিদ্ধ হন দুনিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ থেকে। এখন চোখ ফেরানো যাক আইপিএলে সুযোগ পাওয়া সেই ১১ ভাগ্যবান পাকিস্তানি ক্রিকেটারের দিকে...

শহীদ আফ্রিদি (ডেকান চার্জার্স)
টি-টোয়েন্টির অন্যতম ‘রাজা’ শহীদ আফ্রিদি ২০০৮ সালের আইপিএলে খেলেছিলেন এখন বিলুপ্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ডেকান চার্জার্সে। খুব একটা সফল তিনি হতে পারেননি। বল হাতে মোটামুটি করলেও ব্যাটিংয়ে প্রত্যাশামাফিক কিছুই করতে পারেননি। বেশির ভাগ ম্যাচেই বাজে শট খেলে আউট হয়ে ডেকান কর্তৃপক্ষের বিরক্তির কারণ হয়েছিলেন।

সোহেল তানভির (রাজস্থান রয়্যালস)
বাঁহাতি এই পেস বোলার আইপিএলে কিন্তু যথেষ্ট সফল। রাজস্থানের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন সেবার তিনি। ১১ ম্যাচে নেন ২২ উইকেট। তাঁর অনবদ্য বোলিং পারফরম্যান্স ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম শিরোপা এনে দিয়েছিল রাজস্থানকে।

শোয়েব মালিক (দিল্লি ডেয়ার ডেভিলস)
সে সময় পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন শোয়েব মালিক। কিন্তু তিনি দিল্লির হয়ে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাননি। ২০০৮ সালে দিল্লির বিদেশি খেলোয়াড়দের তালিকাটা চমকে দেওয়ার মতোই ছিল। এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাকগ্রা, তিলকরত্নে দিলশান, ড্যানিয়েল ভেট্টরি ছাড়াও শোয়েব মালিককে একাদশে জায়গা পেতে লড়তে হয়েছে স্বদেশি মোহাম্মদ আসিফের সঙ্গেও। বেশির ভাগ ম্যাচেই শোয়েবকে বসেই কাটাতে হয়েছিল।

শোয়েব আখতার (কলকাতা নাইট রাইডার্স)
রাওয়ালপিন্ডির এই গতি তারকা যখন আইপিএলে খেলতে এসেছিলেন, তখন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। ব্যাপারটা নিয়ে সে সময় যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছিল। তবে শোয়েব আইপিএলে মোটামুটি দারুণ বোলিং করেছিলেন। তাঁর একটি ঝোড়ো স্পেলে দিল্লির বিপক্ষে জয় পেয়েছিল কলকাতা।

মোহাম্মদ হাফিজ (কলকাতা নাইট রাইডার্স)
সে সময় পাকিস্তান দলের বাইরে ছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। ওপেনিং ব্যাটিং আর কার্যকর অফ স্পিনের কারণে আইপিএলে কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।

সালমান বাট ( কলকাতা নাইট রাইডার্স)
২০০৮ সালের আইপিএলে কলকাতার বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিলেন ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও রিকি পন্টিং। এই তিন তারকা আইপিএলের মধ্যে দেশের হয়ে খেলতে চলে গেলে সালমান বাটের সুযোগ হয় টপ অর্ডারে। সৌরভ গাঙ্গুলী ও সালমান বাটের ওপেনিং জুটি সে সময় দারুণ আকর্ষণ তৈরি করেছিল আইপিএলে।

মোহাম্মদ আসিফ (দিল্লি ডেয়ারডেভিলস)
পাকিস্তান ক্রিকেটে মোহাম্মদ আসিফকে সব সময়ই অত্যন্ত উঁচু মানের ফাস্ট বোলার হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু মাঠের বাইরের নানা ঘটনা তাঁকে কখনোই নিয়মিত হতে দেয়নি নিজের ক্যারিয়ারে। আইপিএলেও দিল্লির হয়ে দারুণ করছিলেন। গ্লেন ম্যাকগ্রার সঙ্গে নতুন বলের দারুণ এক জুটিও গড়েছিলেন। কিন্তু ডোপ গ্রহণের অভিযোগে শেষ হয়ে যায় তাঁর আইপিএল।

মিসবাহ-উল-হক (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের তারকা হিসেবে খুব বিখ্যাত কখনোই ছিলেন না মিসবাহ-উল-হক। তবে ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোটামুটি ভালোই করেছিলেন। সে কারণেই হয়তো ২০০৮ সালের প্রথম আইপিএলে বেঙ্গালুরু তাঁকে দলে নিয়েছিল। তবে মিসবাহ নিজের প্রথম আইপিএল ভুলেই যেতে চাইবেন। একটি ম্যাচ খেলে হিট উইকেট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন তিনি।

কামরান আকমল (রাজস্থান রয়্যালস)
খুব বেশি সুযোগ তিনি পাননি। তিনি সুযোগ পেয়েছেন তখনই যখন রাজস্থান অন্যান্য বিদেশিদের মাঠে নামাতে পারেনি। উইকেটকিপিংটা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। খেলেছিলেন ফাইনালে।

ইউনিস খান (রাজস্থান রয়্যালস)
পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে কখনোই খুব সফল ছিলেন না। রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে দলে নিলেও বেশির ভাগ ম্যাচেই তাঁকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিল।

উমর গুল (কলকাতা নাইট রাইডার্স)
কলকাতার অন্যতম সেরা বিদেশি ক্রিকেটার ছিলেন। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে একটি ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে দল জিতিয়েছিলেন। সে ম্যাচে ২৪ রানও করেছিলেন গুল।

আজহার মাহমুদ ও ইমরান তাহির
আজহার মাহমুদ নব্বইয়ের দশকের শেষাংশে পাকিস্তান ক্রিকেট দলে ছিলেন নিয়মিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার পর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নেন তিনি। ব্রিটিশ পাসপোর্ট থাকার কারণে পাকিস্তানি ক্রিকেটার নিষিদ্ধ থাকার পরও তিনি ‘ব্রিটিশ’ ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। একই কথা প্রযোজ্য ইমরান তাহিরের বেলায়। তাহির পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কয়েক বছর খেলার পর সুযোগ পেয়েছিলেন ‘এ’ দলে। এরপরই দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী হয়ে সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এখন তো দক্ষিণ আফ্রিকা দলেই নিয়মিত খেলছেন তিনি। ‘দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার’ হিসেবে তাহিরও সুযোগ পেয়েছিলেন আইপিএলে খেলার।