মাশরাফি ফিরতে চান টেস্টে, নির্বাচকেরা চান টি-টোয়েন্টিতে

এখনো টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
এখনো টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
>মাঝেমধ্যে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন ফিটনেস ধরে রাখতে। ম্যাচ প্র্যাকটিসও একটা উদ্দেশ্য। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজার বিশ্বাস, টেস্ট খেলার সামর্থ্য তাঁর এখনো আছে। কাল কথা বলেছেন শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে। 


প্রশ্ন:
সাদা পোশাকে খেলতে নামলে কি আলাদা কোনো অনুভূতি হয়? ধরুন, আবার টেস্ট খেলতে ইচ্ছে হলো...
মাশরাফি বিন মুর্তজা: এই মুহূর্তে না। আসলে যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা ছাড়া খেলা খুবই কঠিন। নতুন বলে হয়তো বা জিনিসটা এক রকম, কিন্তু টেস্টে পুরোনো বলে অনেকটা সময় বোলিং করে যেতে হবে, ওখানে তো একটু কাজটাজ করার ব্যাপার আছে। এখানে একটা ম্যাচে যদি ২৫-৩০ ওভার বোলিং করি, তাহলে আমার চার-পাঁচ সপ্তাহের বোলিংয়ের কাজটা হয়ে যায়। আমি ওই মানসিকতা থেকেই খেলি। 

প্রশ্ন: আদৌ কি আর টেস্টে ফেরার ইচ্ছা আছে?
মাশরাফি: আছে। বয়স ৩৪-৩৫ হয়ে গেলেও এখনো যে ফিটনেস, তাতে আরও দুই বছর আমার টেস্ট খেলার সামর্থ্য আছে। সমস্যা হচ্ছে, পারফর্ম করতে হবে এবং সে জন্য নিজেকে একটা রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। শুধু নতুন বলে বোলিং করলে তো হবে না। ওয়ানডেতে আপনি যে বলই হাতে নেন, আপনাকে ব্যাটসম্যান আক্রমণ করবে। কিন্তু টেস্টে উইকেট বের করার রাস্তা খুঁজে বের করতে হয়। নতুন বলের পর পুরোনো বলেও অনেকটা সময় বল করতে হয়। তার জন্য পথ বের না করে বা সেই পর্যায়ে না গিয়ে কিছু বলা কঠিন।

প্রশ্ন: পারফর্ম করতে হলে তো দীর্ঘ পরিসরে নিয়মিত খেলা দরকার...
মাশরাফি: আসলে লম্বা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলেই আমি বুঝতে পারব কী পথ বের হবে। যেহেতু নিজেই এখনো পরিষ্কার না, কাজেই...। আর এমন তো না যে, আমি ছয় মাস বা এক বছর খেলি না। প্রায় ৮-১০ বছর লাল বলে খেলি না। এর মধ্যে যা-ই খেলেছি, বিচ্ছিন্নভাবে খেলেছি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের পেসারদের মধ্যে টেস্টে এখনো কেউ সে রকম নির্ভরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। এটা কেন?
মাশরাফি: আমার মনে হয়, ওদের ওপর একটু আস্থাও রাখতে হবে। একটা সিরিজে খেলিয়ে আরেকটা সিরিজে বাদ না দিয়ে আস্থাটা রাখতে হবে। যেহেতু নতুন আর কাউকে দিয়ে হচ্ছে না, সেহেতু কারও না কারও ওপর তো আস্থা রাখতে হবে। এখন ধরুন, মোস্তাফিজ দলে থাকলেও ওর চোটের ব্যাপার আছে। শফিউল, তাসকিনেরও একই অবস্থা। অন্যদেরও এক ম্যাচ করে সুযোগ দিলে চাপে আর পারফর্মই করতে পারবে না। নিজেকে হারিয়ে ফেলবে। ঠিকভাবে দুই-চারটা সিরিজ যদি সুযোগ পায়, আমার বিশ্বাস ওদের ভেতর থেকে কিছু বের হয়ে আসবে।

প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটে তরুণ কিছু পেসার ভালো করছেন। তাঁদের পরিচর্যাটা কীভাবে হওয়া উচিত?
মাশরাফি: ওদের এখন থেকেই জাতীয় দলের জন্য তৈরি করতে হবে। এইচপির অধীনে অনুশীলন বা ‘এ’ দলের সফর যদি করতে পারে, তাহলে আমার বিশ্বাস ওরা তৈরি হবে। এটাই বাস্তবতা। তবে ওদের ইচ্ছাটা কী, সেটাও দেখতে হবে। ওরা কি টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে খেলে গ্ল্যামারটাই উপভোগ করতে চায়, নাকি টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চায়। টেস্ট ক্রিকেটের যে মজা, ওটা ওরা পায় কি না। ওদের আগ্রহ কোন দিকে, সেটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের টেস্ট ক্রিকেটার তৈরি না হওয়ার এটা সবচেয়ে বড় কারণ। আমি কিন্তু এখনো গর্ব বোধ করি যে, আমি টেস্ট ক্রিকেটার। এখন খেলতে না পারলেও গর্বটা আছে। তরুণদের উচিত এই জায়গায় মনোযোগ দেওয়া।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে যেহেতু টেস্ট ক্রিকেটের সংস্কৃতি সেভাবে গড়ে ওঠেনি, তাদের উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব কি সিনিয়র খেলোয়াড়দেরও নেই?
মাশরাফি: ড্রেসিংরুমে কিন্তু এসব আলোচনা হয়। রাজ্জাক, তুষারের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে সেখানে। নাঈম আছে, মুশফিক এবার খেলেছে, এনামুল-শাহরিয়ার নাফীস আছে। এদের কাছে কিন্তু অনেক কিছু শিখতে পারে তরুণ খেলোয়াড়েরা। আপনি যদি চিন্তা করেন, শুধু সাকিবের কাছ থেকেই শিখবেন, বা তামিমের থেকেই শিখবেন, তাহলে কঠিন। তাদের তো সব সময় পাবেন না। তুষার, রাজ্জাক, নাঈম, শাহরিয়ার এরাই ভবিষ্যৎ টেস্ট ক্রিকেটারদের আদর্শ হতে পারে।