আইপিএলে প্রীতির আছে পুরোহিত, শ্রীনির জ্যোতিষী

দলের জয়ের আশায় অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস মেনে চলেন প্রীতি জিনতা। ছবি: এএফপি
দলের জয়ের আশায় অদ্ভুত কিছু বিশ্বাস মেনে চলেন প্রীতি জিনতা। ছবি: এএফপি

‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’—আইপিএলের দলগুলোর মালিকেরা মেনে চলেন বিভিন্ন সংস্কার। এগুলো করেন তাঁদের বিশ্বাস থেকেই। সেই সংস্কারগুলো কী ধরনের?

২০১৫ সালের কথা। পুনেতে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (এমসিএ) স্টেডিয়ামে জড়ো হলেন কিছু হিন্দু পুরোহিত এবং তাঁদের শাগরেদরা। গ্যালারির এক কোণে তাঁরা আগুন জ্বেলে শুরু করলেন ‘হাভান যজ্ঞ’। মাঠকর্মীরা তো অবাক, কিছুটা বিরক্তও। কিন্তু কিছুই করার নেই। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সহ–অংশীদার প্রীতি জিনতার নির্দেশে তাঁরা এসেছেন মাঠটা ‘প্রস্তুত’ করতে। পাঞ্জাবের ম্যাচ আছে, জয়ের আশাতেই এই আগুন-যজ্ঞ।

পুরোহিতরা এরপর শাগরেদদের নির্দেশ দিলেন, যাও মাঠ থেকে কিছু ঘাস তুলে এনে আগুনে ফেল। এমনকি গ্যালারিতে উপস্থিত যাঁরা সেদিন সকালের নাশতাটা ডিম কিংবা মাংস দিয়ে সেরেছেন, তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হলো ‘পবিত্র হাভান’ থেকে দূরে থাকতে। পাঞ্জাবের জয়ের আশায় এই পূজা-অর্চনায় এসব নাকি মোটেও শুভ নয়!

কিন্তু পুরোহিতদের সেই পূজা কোনো কাজে লাগেনি। সে বছর পুনের ওই মাঠে প্রীতি জিনতার দল তিনটি ম্যাচই হেরেছে। তবে শুধু ‘গেটমানি’ থেকেই ১০ কোটি রুপি আয় করেছিল পাঞ্জাব। মোহালির সদর দপ্তরেও পাঞ্জাবের আয় সাধারণত এত বেশি হয় না।

আইপিএলে বিশ্বাস, প্রথা, কুসংস্কার মানার ব্যাপারে পাঞ্জাব একা নয়, আরও বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি এসব মেনে চলে। সেই সংস্কারগুলো সম্পর্কে জানলে চোখ কপালে উঠে যেতে বাধ্যই...

চেন্নাই মালিক শ্রীনিবাসন জ্যোতিষবিদ্যায় বিশ্বাস করেন। ছবি: এএফপি
চেন্নাই মালিক শ্রীনিবাসন জ্যোতিষবিদ্যায় বিশ্বাস করেন। ছবি: এএফপি

শ্রীনিবাসনকাহন
আইপিএলের প্রতি মৌসুমেই প্রশ্নটি ওঠে—চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে এত লাল দাগের কী হেতু? ২০১২ আইপিএলের ফাইনালে চেন্নাই-কেকেআর ম্যাচে গুজব উঠেছিল ‘ভিজিটিং’ দলের (কেকেআর) ড্রেসিং রুমের দেয়ালে কিছু রহস্যজনক লাল দাগ রয়েছে। তবে এই রহস্যের সমাধান হয়নি। চেন্নাইয়ের ড্রেসিং রুমেও খেলোয়াড়দের বসার জায়গা সাজানো হয়েছে তাঁদের বৈদিক সূর্য-চিহ্ন অনুযায়ী। প্রতিটি খেলোয়াড়কে এই আসন ব্যবস্থা মেনে চলতে হয়। এর ব্যত্যয় ঘটানো নিষিদ্ধ। চেন্নাই সুপার কিংসের মালিক এন শ্রীনিবাসন প্রতিবছর তাঁর ব্যক্তিগত জ্যোতিষী দিয়ে এ আসনব্যবস্থা ঠিক করেন। শ্রীনিবাসন জ্যোতিষীতত্ত্বে বিশ্বাসী।

শুধু তা–ই নয়, জ্যোতিষীতত্ত্ব মেনে ‘শুভ’ সময়েও বিশ্বাস করেন শ্রীনিবাসন। গুজব রয়েছে, বেঙ্গালুরুতে ২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টি ফাইনালের সময় তিনি এক ঘণ্টা এগিয়ে এনেছিলেন এই ‘শুভ’ সময়ের জন্য। কিন্তু অফিশিয়ালি বলা হয়েছিল, ফাইনালকে শিশিরের প্রভাবমুক্ত রাখতেই এ ব্যবস্থা।

মুম্বাইয়ের ‘শুভলক্ষণ’
২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমের কিছু জায়গা পুনরায় রং করা হয়। ড্রেসিং রুমে ঢোকার পথটা আগে ছিল হলুদ রঙের। কিন্তু তার ওপর নীল রং করা হয়। তখন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের খেলোয়াড় থেকে স্টাফরা জানিয়েছিলেন তাঁদের আইপিএল প্রস্তুতিতে এসব আসলে ‘শুভলক্ষণ’যোগ। মুম্বাইয়ের প্রত্যেক ম্যাচের আগে সব খেলোয়াড়কে বেঁধে দেওয়া আলাদা সময়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকতে হয়। এ ছাড়া বাস্তু-শাস্ত্রও (হিন্দুরীতির বিজ্ঞানসম্মত স্থাপত্যবিদ্যা) মেনে চলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।

আইপিএলের শুরুর দিকে মোটেও ভালো করতে পারছিল না মুম্বাই। সংখ্যাতত্ত্ববিদ সঞ্জয় জুমানির দাবি, মুম্বাইয়ের জার্সিতে ও খেলার অন্যান্য সরঞ্জামে যত বেশি সম্ভব সোনালি রং রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। এতে ‘শুভলক্ষণ’ যোগ হবে এবং দলটি বাজে অবস্থা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। মুম্বাই মালিকও তাঁর কথা অনুযায়ী, সোনালি রঙের প্যাড বানান। ‘তারপর থেকে দলটি তিনটি শিরোপা জিতেছে’—জুমানির দাবি।

রাশিচক্র ও গ্রহের অবস্থান
নিলামের আগে খেলোয়াড়দের স্ট্রাইক রেট ও ইকোনমি রেট প্রাধান্য পায় ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর কাছে। গুজব রয়েছে, দলগুলোর মালিকেরা তাঁদের ব্যক্তিগত জ্যোতিষীর সঙ্গে খেলোয়াড়দের জন্মসাল ও সময় নিয়ে কথা বলেন। জ্যোতিষীর পরামর্শ অনুযায়ী কোন কোন খেলোয়াড় কিনলে সাফল্য পাওয়া যাবে, সেই তালিকা করে তাঁরা পাঠান দলের কর্মকর্তাদের কাছে।

একটি সূত্রের বরাতে মুম্বাই মিরর জানিয়েছে, উত্তর ভারতের একটি দলে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ক্রিকেটারের নেতৃত্বভার পাওয়ার পেছনে রয়েছে তাঁর রাশিচক্র এবং গ্রহের অবস্থান। সেই অধিনায়ক কি রবিচন্দ্র অশ্বিন? কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব তো উত্তর ভারতের দল। ‘গ্রিনস্টোন লোবো’ নামের এক ক্রীড়া জ্যোতিষীর দাবি, এবার আইপিএল নিলামের আগে বেশ কজন মালিক তাঁর কাছে এসে খেলোয়াড় কেনার ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছেন। ‘সব খুলে বলতে পারব না, কিন্তু আমি কিছু নাম বলেছিলাম এবং তাঁরা সেই পরামর্শ মেনেছে’—দাবি করেন এই জ্যোতিষী।