বয়সভিত্তিক ফুটবলে খেলছেন বিবাহিত ফুটবলার!

গত বছর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন রায়হান উদ্দিন। ছবি সংগৃহীত
গত বছর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন রায়হান উদ্দিন। ছবি সংগৃহীত
>তিন বছর পর শুরু হয়েছে অনূর্ধ্ব–১৮ যুব ফুটবল। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন, সেটি সফল হচ্ছে না। প্রতিটি দলেই আছে বেশি বয়সের খেলোয়াড়। বিবাহিতও আছে কোনো কোনো দলে। ‘বয়স চুরি’র অভিযোগে ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ হয়েছেন একজন।

ফেসবুকে মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিনের জন্ম তারিখ লেখা (ভাতিজার নামে ফেসবুক নাম ইসহাক হোসেন রাহাত) ১২ ডিসেম্বর ১৯৯০। সে হিসেবে তাঁর বয়স ২৮। গত বছর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। এই রায়হানই খেলছেন অনূর্ধ্ব–১৮ ফুটবলে। চট্টগ্রাম আবাহনীর এই খেলোয়াড় তিন বছর পর আয়োজিত যুব ফুটবল টুর্নামেন্টের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।

রায়হানের চট্টগ্রাম আবাহনী নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের বিপক্ষে ৫-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে প্রতিযোগিতা থেকে। সে ম্যাচে দ্বিতীয় গোলকিপার হিসেবে মাঠে ছিলেন রায়হান। সে কারণেই হয়তো নিজের বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন, ‘গত বছর বিয়ে করেছি, এটা সত্য। কিন্তু আমি তো একটি ম্যাচও খেলিনি।’

চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে রায়হান। ছবি সংগৃহীত
চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে রায়হান। ছবি সংগৃহীত

দেশে যখন তরুণ ফুটবল প্রতিভার মারাত্মক সংকট, ঠিক তখনই তিন বছর বিরতি দিয়ে দেশের শীর্ষ ক্লাব গুলিকে নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে এই যুব ফুটবল প্রতিযোগিতা। ক্লাবগুলোকে যুব দল গঠনে উদ্বুদ্ধ করাও এর অন্য লক্ষ্য। কিন্তু অভিযোগ আছে, প্রতিটি দলেই নাকি অর্ধেকের বেশি খেলোয়াড়ের বয়স ১৮ বছরের বেশি। মাঠে খেলোয়াড় বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা বাফুফের একজন কোচ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদকের কাছে সেটি স্বীকারও করলেন, ‘আসলে আমরা সবাই জানি, বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের বয়স বেশি। কিন্তু আমরা চাই টুর্নামেন্টটা হোক। খেলা হোক। আস্তে আস্তে এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে।’
‘বেশি বয়সী খেলোয়াড়’ হওয়ায় টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও আছে। বহিষ্কৃত হয়েছেন ফরাশগঞ্জের অঙ্কন মণ্ডল। শাস্তি হিসেবে আবাহনীর বিপক্ষে জয়ী ম্যাচের তিন পয়েন্টও হারাতে হয়েছে তাদের। কিন্তু প্রতিটি দলেই যে বেশি বয়সী খেলোয়াড় আছে। ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে ঠগ বাছতে গা উজাড় হওয়ার মতোই।
অংকন অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবলের আগে খেলেছিলেন তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে। কিন্তু লিগে ও টুর্নামেন্টে তিনি নিবন্ধিত হয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন নাম ও জন্ম তারিখ উল্লেখ করে। তৃতীয় বিভাগে তাঁর রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ‘সবুজ রায়’ নামে। জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে ১৮-০৫-১৯৯৪। সেখানে অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্টে তাঁর নিবন্ধন করা হয়েছে ৩০-০৬-২০০১। অর্থাৎ অনূর্ধ্ব-১৮ টুর্নামেন্ট খেলতে নামের বদলের সঙ্গে অঙ্কন কমিয়েছে প্রায় সাত বছর।
বাংলাদেশের ফুটবলে ‘বয়স চুরি’ খুবই সাধারণ একটি বিষয়। কিন্তু ব্যাপারটি যে এ দেশের ফুটবলের কী সর্বনাশ করছে, সেটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই কারও। যুব ফুটবল যেখানে বাংলাদেশের ফুটবলের লাইফ লাইন হতে পারে, সেখানে ব্যাপারটাকে পরিণত করা হয়েছে তামাশায়।
আসলে এভাবেই চলে বাংলাদেশের ফুটবল!