মেয়ের শিরোপার প্রেরণা মা, আসল চ্যাম্পিয়ন তিনিই

জিতেছেন মেয়ে। কিন্তু মায়ের গলায় শোভা পাচ্ছে মেয়ের জয়ের মেডেল। ছবি: প্রথম আলো
জিতেছেন মেয়ে। কিন্তু মায়ের গলায় শোভা পাচ্ছে মেয়ের জয়ের মেডেল। ছবি: প্রথম আলো
>

মেয়ে শিরোপা জিতেছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে। মেয়ের এমন সাফল্যের মূলে মা। শিরোপাটা যেন তিনিই জিতলেন।

মেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দেশের হয়ে আর একটু দূরে দর্শকসারিতে উৎকণ্ঠায় মা। দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে তো মেয়ে! মেয়ে জিতে যাওয়ার পর মায়ের সে কি উল্লাস! প্রতিক্রিয়াটাও দুর্দান্ত, ‘আমার মেয়ে যত দূর চায় উড়বে! কেউ থাক না থাক, আমি মেয়ের সঙ্গে থাকব।’ এমন মা থাকলে মেয়ের আর কিছু লাগে!

আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে নারীদের কম্পাউন্ড ব্যক্তিগত ইভেন্টে ইরাকের ফাতিমা আল মাশদাহানিকে ১৩৬-১৩৩ সেট পয়েন্ট ব্যবধানে হারিয়ে সোনা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়ে রোকসানা আকতার। ফাতিমা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তাঁর সব অনুপ্রেরণার উৎস মা নাসিমা বেগম।

রোকসানার আর্চার হয়ে ওঠার পেছনে মায়ের যে অবদান, তাতে তাঁর গল্পটা এসে যাচ্ছেই। কে জানে, এই গল্পটাই হয়তো যেকোনো মাকে মেয়ের ব্যাপারে করে তুলবে সাহসী। মেয়ের স্বপ্নকে উসকে দিয়ে তাঁরা বলবেন, ‘যা হয় হোক, তুই যা করছিস করে যা, আর কেউ না থাকুক, আমি আছি তোর সঙ্গে।’

২০১৬ সালে রোকসানাকে বিয়ে দেন নাসিমা। শুরুতে স্ত্রীর খেলা নিয়ে স্বামী মোতালেব হোসেনের কিছুটা আপত্তি ছিল। কিন্তু মা মেয়ে-জামাইকে বুঝিয়েছিলেন, ‘রোকসানার স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ো না। ওর স্বপ্নটা পূরণ করতে দাও।’ আজ মা নাসিমার সঙ্গে স্বামী মোতালেবও গর্বিত, আনন্দিত।

কম্পাউন্ড বিভাগে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ চারটি সোনা জিতলেও ফাতিমাকে হারিয়ে রোকসানার জয়টা একেবারেই অবিশ্বাস্য। বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারানো তো আর যা তা বিষয় নয়। রোকসানার জয়ে তাই বাংলাদেশের উচ্ছ্বাসটা অন্য রকমই। পোডিয়ামে তাঁর গলায় পরিয়ে দেওয়া হলো পদক। কিন্তু সেখান থেকে নেমে এসেই মায়ের গলায় পদকটি পরিয়ে দিলেন। সে তো দেবেনই। মায়ের প্রতি যে তাঁর অসীম কৃতজ্ঞতা, ‘মা না থাকলে আমার আর্চারিতে থাকা সম্ভব হতো না। আমি যেখানেই খেলি, মা সেখানে থাকেন। আমার সাফল্যে মায়ের অবদানটাই সবচেয়ে বেশি।’
রোকসানার মা, তখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে। তাঁর দুচোখ চিকচিক করছে আনন্দশ্রুতে!