এক পরাজয়ে মাটি ৩৬ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা

যেন বিশ্বাস হচ্ছে না সুয়ারেজের। ছবি: এএফপি
যেন বিশ্বাস হচ্ছে না সুয়ারেজের। ছবি: এএফপি
>
  • লিগে ৪৩ ম্যাচ পর হারল বার্সেলোনা
  • সদ্য রেলিগেশনের শঙ্কা কাটানো লেভান্তের কাছে ৫-৪ ব্যবধানে হেরেছে বার্সা
  • ‘ইনভিন্‌সিবল’ ট্যাগটা গায়ে লাগাতে পারলেন না মেসিরা

লেভান্তের বিপক্ষে কাল অনেকটা নির্ভার ছিলেন আরনেস্তো ভালভার্দে। একে লা লিগা জয়ের পর ফুরফুরে মেজাজে আছে বার্সেলোনা, তার ওপর প্রতিপক্ষ লেভান্তে। যে দল এক ম্যাচ আগেও ছিল রেলিগেশন শঙ্কায়। দলের প্রাণভোমরা মেসিকে তাই আর বার্সেলোনা থেকে ভ্যালেন্সিয়ায় টেনে আনেননি কোচ। মূল রক্ষণের তিনজনেরও মিলেছিল বিশ্রাম। এই সিদ্ধান্তেই অবিশ্বাস্য এক অর্জন হাত থেকে ছিটকে পড়ল বার্সার। অপরাজিত থেকে পুরো এক মৌসুমে কাটানোর রেকর্ড।

লা লিগায় অপরাজিত থেকে লিগ জেতার অর্জন আছে রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাথলেটিক বিলবাওর। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে বিলবাওর পর ১৯৩১-৩২ মৌসুমেও রিয়ালকে পুরো লিগে হারাতে পারেনি কোনো দল। তবে এ অর্জনগুলো সব ১০ দলের লিগের অর্থাৎ ১৮ ম্যাচের। ২০ দলের লিগ চালু হওয়ার পর অপরাজিত থেকে স্পেনে লিগ শেষ করার কীর্তি কেউ দেখাতে পারেনি।

ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগেও এমন কিছু দেখার সম্ভাবনা খুব কম। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগ মিলিয়ে ‘ইনভিন্‌সিবল’ ট্যাগটা গায়ে লাগাতে পেরেছে মাত্র তিনটি ক্লাব। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত অবশ্যই ২০০৩-০৪ মৌসুমের আর্সেনাল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে পুরো এক মৌসুম অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছিল থিয়েরি অঁরি, ডেনিস বার্গক্যাম্পদের দল। দুই মৌসুম মিলিয়ে টানা ৪৯ ম্যাচ অপরাজিত ছিল আর্সেন ওয়েঙ্গারের শিষ্যরা। বার্সেলোনা দুই মৌসুম মিলিয়ে হার না দেখে কাটিয়েছে ৪৩ ম্যাচ।

বাকি দুটি ঘটনাই সিরি ‘আ’র। ২০১১-১২ মৌসুমে পুরো লিগ অপরাজিত ছিল আন্তোনিও কন্তের জুভেন্টাস। তবে শীর্ষ লিগগুলোতে প্রথম ‘ইনভিন্‌সিবল’ ট্যাগ পাওয়া দল ১৯৯১-৯২ মৌসুমের এসি মিলান।

এবার বার্সেলোনা সে পথেই এগোচ্ছে বলে মনে হয়েছিল। বিশেষ করে সেভিয়ার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও মেসির জাদুতে যেভাবে ড্র করে ফিরেছে বার্সেলোনা, কিংবা সব সময় ঝামেলায় ফেলা সেল্টার মাঠ থেকেও আরেকটি ২-২ গোলের ড্রতেও অপরাজিত থাকার সুবাস পাচ্ছিল বার্সেলোনা। সর্বশেষ এল ক্লাসিকোতেও যখন সেই ২-২ স্কোরলাইনের দেখা মিলল, তখন তো একে নিয়তি বলেই মনে হচ্ছিল।

এ কারণেই হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার এক প্রীতি ম্যাচের জন্য মেসিকে তাজা রাখতে চেয়েছিলেন ভালভার্দে। রক্ষণও ছিল দুর্বল। এটাই কাল হলো, দুর্দান্ত গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল লিগ টেবিলে ১৬-তে থাকা লেভান্তে। তাতে দুমড়ে-মুচড়ে এক ঘণ্টার মধ্যে ৫-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল বার্সেলোনা। যে দল পুরো মৌসুমেই এক ম্যাচে ৩টির বেশি গোল খায়নি! ফিলিপে কুতিনহোর হ্যাটট্রিকে আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত আর লিগে বার্সেলোনা প্রথম হার ঠেকাতে পারেনি।

৩৬ ম্যাচের দারুণ পথ চলার স্বাদ শুধু একটি ম্যাচেই তেতো হয়ে গেল। ৪ ম্যাচ হাতে রেখে লিগ জেতার আনন্দটাও তাই ফিকে হয়ে গেল এক মুহূর্তে। কারণ, লিগ শিরোপা জয় কঠিন হতে পারে কিন্তু এর স্বাদ বার্সেলোনা ইদানীং নিয়মিতই পায়। কিন্তু অপরাজিত লিগ জয়ের স্বাদ? সেটা যে প্রায় অসম্ভব। ভুল সময়ে ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষাতে অনন্য এক অর্জন হারালেন ভালভার্দে।

বার্সেলোনা যখন অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ছিল, মনে হচ্ছিল অপরাজেয় থাকা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু বার্সার এই এক পরাজয় মনে করিয়ে দিল, কাজটা কত কঠিন!