লাল কার্ড দেখার রেকর্ড গড়েছিল যে বিশ্বকাপ

মাতেরাজ্জিকে জিদানের ঢুস। এএফপি ফাইল ছবি
মাতেরাজ্জিকে জিদানের ঢুস। এএফপি ফাইল ছবি
>বিশ্বকাপ, দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের পর্দা ওঠার আর মাত্র ২৮ দিন বাকি। দুরু দুরু বুকে ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষণগণনা শুরু করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই। শুরু হয়েছে প্রথম আলো অনলাইনেরও ‘কাউন্ট ডাউন’। প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে ক্ষণগণনা নিয়ে একটি বিশেষ রচনা থাকছে। আজ থাকছে ‘২৮’ সংখ্যাটি নিয়ে

শিরোপাটা হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাচ্ছেন জিনেদিন জিদান। বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম ট্র্যাজিক মুহূর্তটি দেখা গিয়েছিল ২০০৬ সালের ফাইনালে। ইতালির ডিফেন্ডার মার্কো মাতেরাজ্জিকে সেই ঐতিহাসিক ঢুস মেরে লাল কার্ড দেখেছিলেন ফরাসি অধিনায়ক। শুধু এই একটি লাল কার্ডের জন্যই বারবার স্মরণ করা হবে ২০০৬ বিশ্বকাপকে। যদিও লাল কার্ডের জন্যই বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে জার্মানির সেই আসর। সেবার লাল কার্ড দেখানো হয়েছিল মোট ২৮ বার, যা বিশ্বকাপের আসরে রেকর্ড। ২০০৬ বিশ্বকাপের ২৮তম লাল কার্ডটি দেখেছিলেন জিদান।

লাল কার্ডের সঙ্গে জিদানের নামটি জড়িয়ে আছে আরও দুভাবে। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে প্রথম ফরাসি ফুটবলার হিসেবে লাল কার্ড দেখেছিলেন জিদান। বিশ্বকাপের দুটি ভিন্ন আসরে লাল কার্ড দেখা দ্বিতীয় ফুটবলারের নামও জিনেদিন জিদান। এই অভিজ্ঞতা প্রথম হয়েছিল রিগোবার্ট সঙের। ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালে লাল কার্ড দেখেছিলেন ক্যামেরুনের এই ডিফেন্ডার।

ট্রফিটাকে পাশে রেখে জিদান বেরিয়ে যাচ্ছেন ফাইনালের ম্যাচ থেকে। এএফপি ফাইল ছবি
ট্রফিটাকে পাশে রেখে জিদান বেরিয়ে যাচ্ছেন ফাইনালের ম্যাচ থেকে। এএফপি ফাইল ছবি

২০০৬ সালের আগে সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড দেখানোর রেকর্ডটিও হয়েছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপে। তবে ২০০৬ বিশ্বকাপ হলুদ আর লাল রঙে রঞ্জিত এক বিশ্বকাপ হয়ে আছে। সেবার ৩৪৫টি হলুদ কার্ড দেখানো হয়। গড়ে প্রতি ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে ৫.৩৯ বার! ওই বিশ্বকাপে সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচ হয়ে আছে হল্যান্ড ও পর্তুগালের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচটি। ওই ম্যাচে ১৬ বার হলুদ কার্ড বের করতে হয়েছিল রাশিয়ান রেফারি ভ্যালেন্টিন ইভানোভকে। লাল কার্ড দেখিয়েছেন চারবার। এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড-হলুদ কার্ড দেখানোর নতুন রেকর্ড হয়ে যায়।

তবে সব ছাপিয়ে অনেকের বুকে হাহাকার হয়ে আছে জিদানের সেই লাল কার্ডই। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের নায়ক অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফিরেছিলেন বড় দুঃসময়ে। ২০০২ বিশ্বকাপে ফ্রান্স শিরোপা সঁপে দিয়েছিলেন প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিয়ে। উদ্বোধনী ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল সেনেগালের কাছে। ২০০৪ ইউরোর পর অবসর নিয়ে ফেলা জিদান আবার ফিরে এসেছিলেন দল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেই ধুঁকছিল বলে।

দলকে শুধু বিশ্বকাপে নয়, জিদান নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালেও। সে বিশ্বকাপ দেখছিল বুড়ো জিদানের অবিশ্বাস্য জাদু। গোল করেছিলেন ফাইনালে। সেই ম্যাচেরই ইতালির গোলদাতা মাতেরাজ্জির কী এক কথায় মুহূর্তে হুঁশ হারিয়ে ওই কাণ্ড করে বসেন জিদান। ম্যাচের ১১০ মিনিটে দেখেন লাল কার্ড!

সোনালি ট্রফিটাকে পাশে রেখে জিদান মাথা হেঁট করে বেরিয়ে যাচ্ছেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসেই মর্মন্তুদ এক দৃশ্য হয়ে আছে এটি!