বিশ্বকাপ না জিতলেও জাতীয় দল ছাড়ব না

>

সংবাদমাধ্যমের সামনে খুব বেশি তিনি আসেন না। সেই লিওনেল মেসিই আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসকে অভ্যর্থনা জানালেন বার্সেলোনায় নিজ বাড়িতে। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড কথা বলেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল, এবারের বিশ্বকাপে তাঁর দল ও অন্য দলকে নিয়ে। সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ

২০১৮ বিশ্বকাপ নিয়ে
লিওনেল মেসি : একেবারে কম করে বললেও সেরা চারে থাকতে পারলে বিশ্বকাপটা ভালো কেটেছে বলা যাবে। নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কারণেই আর্জেন্টিনার ওই পর্যন্ত যাওয়া উচিত। যদিও (ব্রাজিল বিশ্বকাপে) সে পর্যন্ত যেতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, তেমন পরিশ্রম আরেকবার করতে হবে আমাদের। তবে কী হবে, সেটা তো ঈশ্বরই ঠিক করে দেবেন। আমরা চেষ্টা করব নিজেদের সেরাটা দেওয়ার, সম্ভাব্য সবকিছুই করার, যাতে যত দূর সম্ভব যেতে পারি। বিশ্বকাপ জিততে পারি। বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা তৈরি করতে হলেও আমাদের সবাইকে ভালো খেলতে হবে। প্রতিবারই বিশ্বকাপ আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এখানে যেকোনো দলই রক্ষণ জমাট করে রাখতে পারে, পরে প্রতি আক্রমণে আপনাকে ১-০ গোলে হারিয়েও দিতে পারে।

কাল দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রীতি ম্যাচে মেসি। ছবি: এএফপি
কাল দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রীতি ম্যাচে মেসি। ছবি: এএফপি

২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে
মেসি : (আরেকবার ম্যাচটা খেলার সুযোগ পেলে) আমার ফিনিশিং ভালো করতে চাইতাম (দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোলকিপারকে একা পেয়েও পোস্টের বাইরে মেরেছিলেন মেসি।) ওই ভিডিও দেখার পর মনে হয়েছে আমি ঠিকভাবে শটটা নিতে পারিনি। শটটা ওভাবেই নিতাম, তবে এবার পায়ের আরেকটু ভেতরের অংশ দিয়ে। সুযোগ পেলে আমি আরেকবার ম্যাচটা খেলতে চাইতাম।

আর্জেন্টিনা দল নিয়ে

মেসি :
আমরা যদি জার্মানির মতো হতাম! নিজেদের প্রস্তুত করার, মানুষকে তাঁর কাজ করতে দেওয়ার, অন্যদের কাজের মূল্যায়ন করার পদ্ধতিটাই ওদের ওখানে ভিন্ন। বিশ্বের অন্য যেকোনো প্রান্তেই কোনো দল তিনটা টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলে দলটাকে মূল্যায়ন করা হতো। কিন্তু এখানে (আর্জেন্টিনায়), ফাইনালগুলোতে জিততে না পারায় আমাদেরকে বলা হয় ‘ঠান্ডা হৃদয়ের’ (যেটির অর্থ চোকার/জার্সির জন্য যাঁর মায়া নেই)। আর্জেন্টিনায় সমাজব্যবস্থা একটু জটিল, আমি বুঝি সেটা। যদি আমরা এবারও হেরে যাই, এই মানুষগুলোই আমাদের জাতীয় দল থেকে বিদায় নিতে বলবে।

তিনটি ফাইনালে গিয়ে একটিতেও জিততে না পারায় অন্য যে কারও চেয়ে বিশ্বকাপ জয়ের তাড়নাটা আমাদের বেশি। এটা একটা বোঝা, যেটা আমরা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি, যেটা থেকে মুক্তি চাইছি। এক দশক ধরে জাতীয় দলে আমরা যারা খেলছি, এটা (বিশ্বকাপ জেতা) আমাদের সবারই স্বপ্ন।

যদি বিশ্বকাপ না-ও জিতি, আমি জাতীয় দলে খেলা চালিয়ে যাব। ২০১৬ কোপা আমেরিকার পর (জাতীয় দল থেকে) অবসর নিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি, সেটা করাটা ঠিক ছিল না। ছোট শিশুদের জন্য, নিজের স্বপ্নের জন্য যারা লড়ছে, তাদের জন্য সেটা একটা ভুল বার্তা ছিল। যা-ই হোক না কেন, যা করতে চান সেটির জন্য আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, লড়তে হবে।

ব্রাজিল দল নিয়ে
মেসি : দলগতভাবে ওরা খুবই ভালো অবস্থায় আছে, দারুণ ফর্ম নিয়েই রাশিয়া আসছে। ওদের খেলোয়াড়েরা ব্যক্তিগতভাবে দারুণ দক্ষ, দল হিসেবেও ওরা অসাধারণ। রক্ষণে প্রতিপক্ষকে ভালোভাবে ঘিরে ধরতে পারে, শক্ত-সমর্থ খেলোয়াড় আছে। আর যখন পাল্টা আক্রমণে যায়, নেইমার ও কুতিনহোর মতো খেলোয়াড়েরা দ্রুত উঠে যায়। ওরা জানে কী করতে হবে, দল হিসেবে মাঠে ওদের নড়াচড়াও ছন্দোবদ্ধ।

স্পেন-জার্মানি-ফ্রান্সকে নিয়ে
মেসি : স্পেনের যে মানের খেলোয়াড় আছে, আর যেভাবে ওরা খেলে, সব মিলিয়ে ব্রাজিলের চেয়েও আকর্ষণীয় ওদের খেলা। জার্মানি তো সব সময়ই উঁচু মানের। আর ফ্রান্সের অনেক ভালো কিছু খেলোয়াড় আছে, যদিও এর বেশির ভাগই এখনো তরুণ।

নিজেকে নিয়ে
মেসি : প্রতিবছরই সবকিছু জেতার জন্য লড়ে যাই। নিজেকে নিজে প্রতিবছরই চ্যালেঞ্জ করি। অন্য কারও কাছে কিছু প্রমাণের জন্য আমার অন্য কোনো ক্লাবে যাওয়ার দরকারও নেই। মাঝেমধ্যে হয়তো অন্য কোনো লিগ, যেমন ইংল্যান্ডে যাওয়ার ভাবনা আসতে পারে। তবে বার্সেলোনা ছাড়া আমার জন্য কঠিন। আমি বিশ্বের সেরা ক্লাবে আছি, বিশ্বের সেরা শহরগুলোর একটিতে আছি, আমার পরিবার এখানে থিতু হয়ে গেছে, আমার বাচ্চারা ওদের বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারছে।
সর্বকালের সেরা হওয়া না-হওয়া নিয়ে আমার কোনো আকর্ষণই নেই। প্রতিবছরই যখন নতুন করে শুরু করি, নিজের খেলায় উন্নতির চেষ্টা করি, সবকিছু জেতার চেষ্টা করি, প্রতি ম্যাচেই মাঠে সতীর্থদের আর নিজের জন্য সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আপনি যত বেশি শিরোপা জিতবেন, তত ভালো। জাতীয় দলের জার্সিতে হলে সবচেয়ে ভালো, কারণ সেই অভিজ্ঞতা এর আগে এই দলটার কখনো হয়নি।