জাতীয় ফুটবল দলের জন্য অ্যামেচার লিগের কোচ!

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নতুন কোচ জেমি ডে। ছবি বিবিসি
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নতুন কোচ জেমি ডে। ছবি বিবিসি
>আগামী মাসে ঢাকায় আসবেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নতুন কোচ জেমি ডে। অবশ্য তিনি আসার আগেই বিকেএসপিতে শুরু হবে জাতীয় দলের ফিটনেস ক্যাম্প। এশিয়ান গেমস ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য চলবে এই অনুশীলন। মাঝে ঈদের ছুটির পর জুলাইয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল।

‘তারা (বাফুফে) মনে হয় ধরেই নিয়েছে এই জাতীয় দল দিয়ে আর কিছু হবে না’ কথাটি কানে এল আজ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে আয়োজিত জাতীয় দল–সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলন শেষ করে বের হওয়ার সময়। বুঝতে কষ্ট হলো না, জাতীয় দলের জন্য নিয়োগকৃত নতুন কোচ নিয়েই তাঁর হতাশা। জাতীয় ফুটবল দলের জন্য যদি নিয়োগ দেওয়া হয় অ্যামেচার লিগের দলের সহকারী কোচ, হতাশ না হয়ে আর উপায় আছে?

আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ব্রিটিশ জেমি ডে। ৩৮ বছর বয়সী এই কোচ আগে কোনো জাতীয় দল তো দূরের কথা, কোনো ক্লাবের প্রধান কোচের দায়িত্বই পালন করেননি! এখন আছেন ইংল্যান্ডের পঞ্চম বিভাগের ক্লাব ব্যারো এফসির সহকারী হিসেবে, যা অ্যামেচার লিগ হিসেবে পরিচিত। এই অ্যামেচার ক্লাবের সহকারী কোচ জেমির কাঁধেই কিনা এখন বাংলাদেশের দায়িত্ব। যাঁর অধীনে আগস্টে এশিয়ান গেমস ও সেপ্টেম্বরে সাফে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবে নতুন কোচের অনভিজ্ঞতা ভাবাচ্ছে অনেককেই। জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার মতো জেমির সামর্থ্য আছে কি না, এ নিয়েই প্রশ্ন।

জেমির নিয়োগকে সরাসরি বাফুফের ‘জুয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ হাসানুজ্জামান বাবলু, ‘নতুন কোচের প্রোফাইলে ও রকম কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে আস্থা রাখতে পারছি না। এ ছাড়া কোচের যে বয়স, এর চেয়ে বেশি বয়স্ক খেলোয়াড় তো দলেই আছে। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে কোচ নিয়োগ নিয়ে বাফুফে জুয়ায় মেতেছে। এভাবে তো ভালো কিছু করা সম্ভব নয়।’

একেবারেই খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ফুটবল। ফিফা ফুটবল র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৯৭-এ অবস্থান করলে এর পেছনে যাওয়ার আর জায়গা থাকে নাকি! এমন একটা পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়োজন ছিল একজন দক্ষ নাবিকের। অথচ আনা হচ্ছে আনকোরা জেমিকে। এ নিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনটা হয়ে উঠল কিছুটা উত্তপ্ত। বাফুফের জাতীয় দল কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদের যুক্তি, ‘জেমিকে পঞ্চম ডিভিশনের কোচ বলা হচ্ছে, ওখানে তৃতীয়-পঞ্চম ডিভিশনে খুব বেশি পার্থক্য নেই। যে ক্লাবে কাজ করেছেন, সেটি তাঁর পাড়ার ক্লাব। এ কারণেই ওখানে কাজ করেন। আশা করি, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন। তা ছাড়া উয়েফায় লাইসেন্স আছে তাঁর।’
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জেমির বড় পরিচয় তিনি আর্সেনালের সাবেক ফুটবলার। যদিও ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে গানার্সদের মূল দলে থাকলেও খেলা হয়নি একটি ম্যাচও। খেলেছেন ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলেও। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলে কোচ হয়েছেন জেমি। এসবকে জেমির ‘বড় অভিজ্ঞতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নাবিল। তাঁর আশা, ‘জেমি অন্যদের চেয়ে আলাদা হবেন।’
নাবিলের শেষ কথাটি আগের সব কোচ নিয়োগের বেলাতেই বলা হয়েছিল। কিন্তু পরের ঘটনা তো সবারই জানা। এবার যদি নিজেকে আসলেই আলাদা হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন জেমি, সেটি দেশের ফুটবলের জন্যই মঙ্গল।