নাগিন নাচটা বেশি করে নাচতে চান নাজমুল

>নিদাহাস ট্রফিতে মুশফিকুর রহিমের সৌজন্যে বিখ্যাত হয়ে গেছে নাগিন নাচ। অথচ এই নাচের উদ্ভাবক নাজমুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো সেভাবে উপলক্ষই পেলেন না নেচে দেখাতে। তিনি আশাবাদী, আফগানিস্তান সিরিজে আরও ভালো উদযাপন হবে।

উইকেট পেয়ে যেভাবে স্বচ্ছন্দে নাচটা নেচে দেখান, সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি ঠিক ততটাই অস্বচ্ছন্দ। দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ তাঁকে অভয় দেন, ‘আরে ভয় কিসের, যা কথা বল!’ লাজুক হাসিতে সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে দাঁড়ান নাজমুল ইসলাম, ‘কী বলব আমি।’
বলার মতো পারফরম্যান্স যদিও এখনো হয়নি এই বাঁ হাতি স্পিনারের। যে ৭টি টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেয়েছেন উইকেট পেয়েছেন ৩টি। তবে নাজমুল আলোচিত অন্য কারণে। নিদাহাস ট্রফিতে মুশফিকুর রহিমের সৌজন্যে বিখ্যাত হয়ে গেছে তাঁর নাগিন নৃত্য। উইকেট পেলেই দুই হাতে ফো তোলার ভঙ্গি করে এই উদ্‌যাপনটা করেন নাজমুল। গত ১০ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে তাঁর নাচটা মোক্ষম সময়ে নেচে দেখিয়েছিলেন মুশফিক। এর পর মাঠে, গ্যালারিতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কদিন শুধু এই নাচই চলেছে। মাঠে যিনি নাচের উদ্ভাবক সেই নাজমুল এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইচ্ছে মতো নেচে দেখাতে পারেননি! আফসোস তো তাঁর হয়ই, ‘যাকে দিয়ে কোনো কিছু শুরু, তার তো ভালো লাগেই। আমারও অনেক ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা শ্রীলঙ্কার মাঠে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছি। এটা অনেক বড় পাওয়া। শ্রীলঙ্কা সফরের শুরু থেকে আমাদের চিন্তাভাবনা এমন ছিল। টিম মিটিংয়ে আলোচনা করছিল, আমরা একটা পাল্টা জবাব দেব। সবার ভেতর একটা জেদ ছিল, সেটি হয়েছে। আমরা পারি। আশা করি এভাবে সামনেও ভালো কিছু হবে।’
সামনে বলতে এই মুহূর্তে দুয়ারে কড়া নাড়ছে আফগানিস্তান সিরিজ। নিদাহাস ট্রফিতে নেচে দেখাতে পারেননি মন মতো। নাজমুলের আশা, আফগানদের বিপক্ষে সুযোগ পেলে আরও ভালোভাবে নেচে দেখাবেন তিনি, ‘আমার প্রথম কাজই হচ্ছে ভালো বোলিং করা, উইকেট নেওয়া। উইকেট নিলে তো উদ্‌যাপন হবেই। ভালো অনুশীলন হচ্ছে, আত্মবিশ্বাস আছে। আশা করি এবার ভালোভাবে হবে, আরও বেশি হবে (এই উদ্‌যাপন)।’

নাগিন নাচটা আরও বেশি করে নাচতে চান নাজমুল। ছবি: প্রথম আলো
নাগিন নাচটা আরও বেশি করে নাচতে চান নাজমুল। ছবি: প্রথম আলো

ভুল বলেননি, উদ্‌যাপন করতে হলে আগে দুর্দান্ত বোলিং করতে হবে। ধসিয়ে দিতে হবে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ। নাজমুল এই কাজটা করতে পারবেন কি না, সেটা পরে। তার আগে তাঁকে হতে হবে বোলিংয়ে সাকিব আল হাসানের যথার্থ সঙ্গী। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রাজ্জাকের জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বোলিংয়ে সাকিবের যোগ্য সঙ্গী এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাইজুল ইসলাম, আরাফাত সানি, মোশাররফ রুবেল, সানজামুল ইসলাম, সাকলাইন সজীব—গত চার বছরে অনেকেই তো এলেন। দলে আরেকজন বাঁহাতি স্পিনারের জায়গা পোক্ত হলো না।
আগের সবার মতো নাজমুলও আশা দিচ্ছেন, তিনি চেষ্টা করবেন জায়গাটা পূরণ করতে, ‘চাচ্ছি এ জায়গায় থিতু হতে। সবচেয়ে বড় কথা সাকিব ভাই বলছিলেন আমাকে পেলে তিনি না কি ভালো আত্মবিশ্বাস পান। আমি ইকোনমি বোলিং করছি। ইকোনমি বোলিংটাই করার চেষ্টা করব। ব্রেক থ্রু দেওয়ার জন্য সাকিব ভাই তো আছেনই। এভাবে হলে টিমওয়ার্ক হয়। সে পরিকল্পনাতেই আছি। তিনি যেহেতু এক নম্বর অলরাউন্ডার। সবকিছু অনেক ভালো বোঝেন, সে যেভাবে বার্তা দিচ্ছেন সেভাবেই করার চেষ্টা করছি।’
১৬ মার্চ নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নানা ঘটনায় আলোচিত ম্যাচটি জিতে দলের সবাই নাগিন নৃত্য নেচেছিলেন। অথচ ওই ম্যাচে নাজমুলকে বোলিং আক্রমণেই আনেননি অধিনায়ক সাকিব। শ্রীলঙ্কান দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থিসারা পেরেরা-কুশল পেরেরা ব্যাটিং করছিলেন বলে শুধু ফিল্ডিং করা ছাড়া তাঁর কিছুই করার ছিল না।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে বাঁ হাতি স্পিনার বোলিং করতে পারবে না, এই তত্ত্বে কতটা একমত নাজমুল? ‘সিনিয়র খেলোয়াড়দের কথা হচ্ছিল, সবাই বলছিলেন, আমাদের যত বাঁহাতি স্পিনার আছে, বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে আমি সবচেয়ে ভালো বোলিং করতে পারি। আমার সেই আত্মবিশ্বাস আছে, বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখতে পারি। আশা করি বাঁহাতি হোক বা ডান হাতি ব্যাটসম্যান হোক, আমার সমস্যা হবে না’—নাজমুলের আত্মবিশ্বাস বলে দিচ্ছে, অধিনায়ক তাঁর প্রতি আস্থা রাখতেই পারেন।