আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দল নিয়ে সাম্পাওলি যা বললেন

আর্জেন্টিনা দল নিয়ে জুয়া খেলেছেন সাম্পাওলি! ছবি: রয়টার্স
আর্জেন্টিনা দল নিয়ে জুয়া খেলেছেন সাম্পাওলি! ছবি: রয়টার্স
>আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দল নিয়ে বড় প্রশ্ন মাউরো ইকার্দি নেই কেন! নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছেন কোচ সাম্পাওলি

হোর্হে সাম্পাওলি জানেন, তিনি একটা জুয়া খেলেছেন। জুয়াটা জিততে হবে। জিতলে সবাই পিঠ চাপড়াবে। হেরে গেলে মুণ্ডপাত চলবে। চাকরি হারাবেন। কিন্তু ফুটবল কোচের কাজটাই তো এ-ই। সাম্পাওলির ঘোষিত ২৩ জনের দল নিয়ে অনেকের মনে বেশ কিছু জিজ্ঞাসা। সার্জিও আগুয়েরো কি পুরো ফিট? মাত্রই কদিন আগে চোটে পড়া লুকাস বিলিয়াকে কেন রাখা হলো দলে? গত বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো দুই ডিফেন্ডার মার্কোস রোহো আর গ্যাব্রিয়েল মারকাদো ঠিক আছেন তো? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন নেই মাউরো ইকার্দি!

ইকার্দি থাকবেন না, এমন একটা আভাস আগে থেকে দিয়ে দিয়ে এগোচ্ছিলেন বলে সেভাবে বোমাটা ফাটেনি। না হলে ইতালিয়ান লিগে এবারের শীর্ষ গোলদাতাকে না রাখলে আরও বড় শোরগোল হওয়াই উচিত ছিল। তবু আর্জেন্টিনা কোচ যে পার পেয়ে যাচ্ছেন, এমন নয়। আর্জেন্টিনার মিডিয়া, সাবেক তারকারা ধুয়ে দিচ্ছে।

ইকার্দি প্রশ্নে সাম্পাওলির ব্যাখ্যা, দলের খেলার সঙ্গে ইকার্দি মানানসই নন, ‘আমরা এই দলটা বেছে নিয়েছি দীর্ঘ বিচার–বিশ্লেষণের পর। আমি সেসব খেলোয়াড়কেই ডেকেছি, যারা আমাদের খেলার ধরনের সঙ্গে যথাসম্ভব মানিয়ে যায়। যেমন ধরুন, আমি আনসালদিকে নিয়েছি, কারণ ও এমন এক ফুলব্যাক, যে ডান বা বাঁ প্রান্ত দুদিকেই খেলতে পারে। ইকার্দি, পেরোত্তি, পাপু গোমেজ, লতারো মার্টিনেজরা আমাদের সঙ্গে রাশিয়ায় যাচ্ছে না। কিন্তু তার মানে এমন নয় তারা খেলোয়াড় হিসেবে খারাপ। তারা অনেক ভালো, এমনকি আমাদের আক্রমণভাগেও থাকতে পারত। এ কথাটা দারিও বেনেদেত্তোর বেলাতেও যায়। বাছাইপর্বে ও আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। কিন্তু এখন চোটে পড়েছে।’

আগুয়েরো? গত মার্চ মাস থেকে খেলার বাইরে আছেন। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করানো হয়েছে। তিনি কি পুরো ছন্দে ফিরতে পারবেন বিশ্বকাপের আগে? দলের আরও কয়েকজনের ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন আছে। সাম্পাওলি সবার অবস্থা বিশদ বর্ণনা করলেন, ‘আগুয়েরো গত সপ্তাহ থেকে পুরো দমে অনুশীলন করছে। মারকার্দোরও বড় কোনো সমস্যা আমি দেখছি না। তবে বিলিয়ার অবস্থা আমরা দেখব ও ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার পর।

আর্জেন্টিনা সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচে স্পেনের কাছে ৬-১ গোলে হেরেছে। এর আগে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে এক ম্যাচে চার গোল হজম করেছিল। বাছাইপর্ব পেরোতেই পারত না, যদি না শেষ ম্যাচে মেসি তাঁর জাদুর পসরা নিয়ে হাজির না হতেন। এই আর্জেন্টিনাকে নিয়ে কি আশা করা যায়? সাম্পাওলি মনে করেন, বিশ্বকাপ শুরু হতেই বদলে যাবে সব ছবি।

আর তাতে মেসিই যে মূল ভরসা হবেন, সেটা সাম্পাওলি না বললেও চলত। অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফেরা মেসি এই বিশ্বকাপের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন বলে জানালেন কোচ, ‘আমি মেসির সঙ্গে কথা বলেছি। সামনের দিনগুলোর ব্যাপারে ওকে বেশ রোমাঞ্চিত মনে হয়েছে। শারীরিকভাবে ও দারুণ ভালো অবস্থায় আছে।’

নিজের দলকেও প্রস্তুত মনে করছেন তিনি, ‘বিশ্বকাপ আপনাকে খেলতে হবে ভয়ডরহীনভাবে। বিশ্বকাপ কী, এর গুরুত্ব কী, তা বুঝতে হবে। যারা নিজেদের খেলা নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকবে, তারা একাদশে জায়গা পাবে। আমরা যতটুকু বুঝি, এই খেলোয়াড়দের সেই চারিত্রিক মেজাজ আছে, যা আমাদের দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের সেরাটা খেলার তাগিদ থেকে এটি আরও পোক্ত হবে। এই দলকে নিয়ে আমার অনেক আশা। যতবার ওদের অনুশীলনে দেখি, আমার স্বপ্নটা আরও বড় হয়।’

সেই বড় স্বপ্নটা আসলে কী? এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বাস্তবসম্মত লক্ষ্য কী হওয়া উচিত? আর্জেন্টিনা কি শিরোপার দাবিবার? সাম্পাওলি সরাসরি এর উত্তর দেননি। শুধু আভাস দিয়েছেন, ‘আমার লক্ষ্যটা হলো ব্যক্তিগতভাবে অসাধারণ এই খেলোয়াড়গুলোকে একটা দলে পরিণত করা, যেন আমরা দুর্দান্ত একটা বিশ্বকাপ কাটাতে পারি। আমরা যদি সাহস নিয়ে খেলি, যেকোনো দলের জন্যই আমরা হয়ে উঠব কঠিন এক প্রতিপক্ষ। আশা করি, আমরা তা করতে পারব।’