মোস্তাফিজের বাদ পড়ার কারণ তাহলে এই

আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের দুই বাংলাদেশি। মোস্তাফিজুর রহমান ও নাফিস ইকবাল। মোস্তাফিজ গিয়েছিলেন খেলতে, নাফিস দলের সঙ্গে মোস্তাফিজের সেতুবন্ধ তৈরি করতে! ছবি: সংগৃহীত
আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের দুই বাংলাদেশি। মোস্তাফিজুর রহমান ও নাফিস ইকবাল। মোস্তাফিজ গিয়েছিলেন খেলতে, নাফিস দলের সঙ্গে মোস্তাফিজের সেতুবন্ধ তৈরি করতে! ছবি: সংগৃহীত
>মাহেলা জয়াবর্ধনের আগ্রহে মোস্তাফিজুর রহমানকে দলে ভিড়িয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। অন্তর্মখী ও চুপচাপ স্বভাবের মোস্তাফিজের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের যোগাযোগটা যেন নিবিড় হয়, ঢাকা থেকে তাই উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল নাফিস ইকবালকে। কাল দেশে ফিরে নিজের আইপিএল-অভিজ্ঞতা জানালেন নাফিস।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলাঘরের হয়ে কাজ করছিলেন নাফিস ইকবাল। হঠাৎ একদিন মুম্বাই থেকে মাহেলা জয়াবর্ধনের ফোন। জয়াবর্ধনে নাফিসকে প্রস্তাব দিলেন আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে কাজ করতে।
নাফিস সানন্দে রাজি। তাঁর কাজ হবে মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ‌‌‘মেন্টর’ লাসিথ মালিঙ্গা ও বোলিং কোচ শেন বন্ডের সেতুবন্ধ তৈরি করা। মুম্বাইয়ের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্সে প্রচুর বাঙালি আছে। তারপরও কেন নাফিসকে ডাকা? এখানে তাঁর ক্রিকেট ব্যাকগ্রাউন্ডকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে মুম্বাই ফ্র্যাঞ্চাইজি। শুরুতে তিন সপ্তাহের ‘অ্যাসাইনমেন্ট’, পরে সেটি বেড়ে হলো পুরো মৌসুম।
প্রায় দুই মাসের আইপিএল-অভিযান শেষে দেশে ফিরেছেন নাফিস। কাল রাতে দুই মাসের আইপিএল অভিজ্ঞতা নিয়ে বললেন দেশের হয়ে ১১ টেস্ট ও ১৬ ওয়ানডে খেলা এই সাবেক ওপেনার, ‘আমার মূল কাজ ছিল বন্ড-মালিঙ্গারা কী চাচ্ছে, সেটা মোস্তাফিজকে বোঝানো। আবার মোস্তাফিজের ভাবনাটা কোচদের জানানো, যাতে দল উপকৃত হয়।’
মোস্তাফিজ এমনিতে অন্তর্মুখী স্বভাবের। চুপচাপ থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। ক্রিকেটীয় দক্ষতায় অসাধারণ হলেও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে খুব একটা তৎপর নন। মোস্তাফিজের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে মুম্বাই তাই শরণ নিয়েছিল নাফিসের।
মোস্তাফিজকে কেন নিজেদের প্রথম ছয় ম্যাচ খেলিয়ে টানা সাত ম্যাচ বসিয়ে রাখা হয়েছিল, তাঁকে নিয়ে মুম্বাইয়ের মনোভাব কেমন ছিল, এই আইপিএলে ফিজের প্রাপ্তি—নাফিসের জবানিতেই জেনে নেওয়া যাক সেগুলো...

যে কারণে সুযোগ পাননি মোস্তাফিজ
মোস্তাফিজকে তারা অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। মোস্তাফিজ ভালো বোলিংও করেছে। সমস্যাটা হয়েছে, দল যখন জিততে পারছিল না, তারা তখন কম্বিনেশনটা পরিবর্তন করেছে। একজন বোলার কমিয়ে ব্যাটসম্যান খেলানোর চেষ্টা করেছে। মোস্তাফিজ ভালো করছিল। তবে অন্য যারা ছিল, তারা বাদ দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। মিচেল ম্যাকক্লেনহান উইকেট পাচ্ছিল, তাকে বাদ দিতে চায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। পরে বেন কাটিং খেলেছে, যেহেতু আরেকজন ব্যাটসম্যানের দরকার ছিল। মুম্বাইয়ের বোলিংয়ের চেয়ে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্যাটিং, বিশেষ করে মিডল অর্ডার। কাটিংয়ের ব্যাটিং সামর্থ্যকে তাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এক-দুটি ম্যাচ বাদে মোস্তাফিজ বেশ ইকোনমিক্যাল বোলিং করেছে। দলের সমন্বয়ের কারণে ওকে একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছে। রোহিত শর্মা থেকে শুরু করে মালিঙ্গা, বন্ড এমনকি ফ্র্যাঞ্চাইজির স্বত্বাধিকারীরা মোস্তাফিজকে ভীষণ স্নেহ করেছে এবং গুরুত্ব দিয়েছে।

মোস্তাফিজকে যেভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে
মোস্তাফিজের অনেক কিছুই তারা বের করার চেষ্টা করেছে। সে কোন বোলিংয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ, সেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পরের বছর যদি মোস্তাফিজকে ধরে রাখে, সেভাবে পরিকল্পনা করেছে। ওর স্লোয়ার বলটা নিয়ে কিছু কাজ হয়েছে। সে যে কাঁধের চোটে পড়েছিল, এই চোটের পর ছন্দে একটু ব্যাঘাত ঘটেছে। ও না খেললেও ওকে ভীষণ গুরুত্ব দিয়েছে। ফিজিওকে দিয়ে আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আগে তার স্লোয়ার বলটা যেভাবে কার্যকর ছিল, সেটা আবার কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। মোস্তাফিজও খুশি—ব্যক্তিগতভাবে সে অনেক কিছুই শিখেছে। ভাগ্যের ছোঁয়া না পাওয়া আর দলের সমন্বয়ের কারণে হয়তো শেষ দিকে খুব বেশি ম্যাচ সে পায়নি।

ডেথ ওভারে মোস্তাফিজের খরচে বোলিং নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের মূল্যায়ন
আইপিএলে সেরা খেলোয়াড়েরাই খেলে, তাদের স্থানীয় খেলোয়াড়েরাও অসাধারণ। মাঠও ছোট। শেষ দিকে একটু ব্যয়বহুল বোলিং হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে মোস্তাফিজের আরও উন্নতির জায়গা আছে। একাদশ থেকে বাদ পড়লে অনুশীলন কিংবা দলের অন্যান্য কার্যক্রমে একজন খেলোয়াড়ের গতি কিছুটা কমে যায়। ওর ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। তাকে নিয়ে যথেষ্ট কাজ হয়েছে। দলের প্রয়োজনটাই আগে দেখতে হবে। মোস্তাফিজ এটা ভালোভাবেই বুঝেছে। তাকে যখন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, তখন ওর সঙ্গে মাহেলা, বন্ড আলোচনা করেছে। ওকে বলা হয়েছে পারফরম্যান্স নয়, দলের সমন্বয়ের কারণে তাকে একাদশের বাইরে রাখা হচ্ছে।

বিপিএল-আইপিএলের পার্থক্য চোখে ধরা পড়েছে যতটুকু
আইপিএল শুরু হয়েছে বিপিএলের অনেক আগে। দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টকে তুলনা করা ঠিক হবে না। এতটুকু বলা যায়, একটি অনেক এগিয়ে গেছে। আরেকটা এগোচ্ছে। বিপিএল যে এগোচ্ছে, সেটার প্রমাণ পেলাম ওখানে কয়েকজন সাবেক খেলোয়াড় বা কোচ আমার কাছে বিপিএল নিয়ে খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানতে চাওয়ায়।