সমস্যা থেকে সরে গেল না তো বিসিবি!

কোচ খুঁজতে কারস্টেনের শরণ নিয়েছে বিসিবি। ছবি: প্রথম আলো
কোচ খুঁজতে কারস্টেনের শরণ নিয়েছে বিসিবি। ছবি: প্রথম আলো

ধরুন, কষ্টিপাথরে যাচাই করে বাংলাদেশের জন্য সেরাদের সেরা প্রধান কোচ বের করে আনলেন গ্যারি কারস্টেন। কিন্তু সেই কোচকে যদি তাঁর পরিবার বলে, ‘বাংলাদেশে যেয়ো না’, বা তাঁর ‘আবিষ্কৃত’ কোচও যদি চুক্তির শর্তেই আইপিএল, বিগ ব্যাশের সময় ‘ছুটি’ মঞ্জুর করিয়ে নিতে চান; কী করার থাকবে গ্যারি কারস্টেনের?

সাত মাস ধরে জাতীয় দলে প্রধান কোচ নেই মানে কিন্তু এই নয় যে, এই সাত মাসে বিসিবি কোনো উপযুক্ত কোচ পায়নি। বোর্ড কর্মকর্তারাই বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন, একাধিক কোচ বিসিবিকে পাকা কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত পারিবারিক বাধায় বাংলাদেশে আসতে পারেননি। জিওফ মার্শ, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটিশ কোচ পল ফারব্রেসের তো শুধু চুক্তি স্বাক্ষরটাই বাকি ছিল! ২৮-৩০ হাজার ডলার সম্মানীর বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্য কোচ খুঁজে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়া কারস্টেনের হাতে কি এই সমস্যাগুলোর সমাধান থাকবে?

কারস্টেনের মতো একজন বিশেষজ্ঞকে খেলোয়াড়দের মনের খবর জেনে জাতীয় দলের কোচ এবং পরামর্শক ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়াটা নিশ্চিতভাবেই দারুণ পেশাদারি উদ্যোগ। ‘কেমন কোচ চাই’ প্রশ্নটা মনে হয় না এর আগে কখনো করা হয়েছে খেলোয়াড়দের। কিন্তু বিষয়টি এমন হয়ে গেল না তো যে, মাথাব্যথার অসুখের জন্য ওষুধ দেওয়া হলো পেটব্যথার!

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের রমরমা সময়ে কোচসংকট অবশ্যই একটি সমস্যা। কিন্তু বিসিবির বড় সমস্যা তো কোচদের বাংলাদেশে আসতে না চাওয়াটা। সেখান থেকে হঠাৎই গুরুত্বটা এমন বদলে গেল কেন!

কারস্টেন যাঁদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁদের বিসিবি কেন দেখতে পাচ্ছে না, সেটিও একটি প্রশ্ন। আগে বিসিবির কর্মকর্তারাই জাতীয় দলের জন্য কোচ ঠিক করতেন। এখন কেন তাঁরা সেটি পারছেন না? হতে পারে বিসিবির হাতে আসলেই এমন কেউ নেই যাঁরা দৃষ্টিসীমার বাইরের কোচদের খোঁজখবর রাখেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, বড়জোর আইপিএল পর্যন্তই তাঁদের বিচরণ। কিন্তু চোখের সামনে থাকা এই কোচরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে বেশি লাভজনক মনে করেন বলে তাঁদের চুক্তির জালে আটকানো কঠিন।

কোচ খুঁজতে বাইরের লোক ভাড়া করার অপ্রিয় কারণও আছে। বিসিবি-সংশ্লিষ্ট যাঁরাই এই কাজটি উৎসাহ নিয়ে করতে চান বা অতীতে করেছেন, কোচ খুঁজে আনার কাজে নাকি মোটা দাগের কমিশন ব্যবসা হয়ে যায় তাঁদের। বাইরের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোচ এনে মধ্যস্বত্বের একটি ভাগ যায় এসব কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবে। ভালো-মন্দের বাছ-বিচারটা তখন গৌণ হয়ে পড়ে। মুখ্য হয়ে যায় ‘আমার কোচ’ চাকরি পেল কি না, তা।

কোচের যদি সংকটই থাকে, বিসিবি যেটা সাত মাসে পারল না সেটা কারস্টেন দেড়-দুই মাসে কীভাবে করে দেখাবেন? জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ প্রশ্নটা আরও সহজভাবে করলেন, ‘বিসিবি একজন কোচ খুঁজে পায় না, ও (কারস্টেন) দুজন কোচ কোথায় পাবে!’ কারস্টেনের দেওয়া সাদা বল ও লাল বলের ক্রিকেটে আলাদা কোচের তত্ত্বও হাস্যকর মনে হচ্ছে তাঁর কাছে, ‘টি-টোয়েন্টির জন্য বিশেষজ্ঞ কোচ কোথায় পাবে? বিশ্বের কোনো দলেই তো এ রকম কোচ নেই!’

এই তত্ত্বে বিসিবিরও বেশি আস্থা আছে বলে মনে হয় না। বোর্ড কর্মকর্তারা নাকি কারস্টেনকে বলেছেন, জাতীয় দলের ৯০ শতাংশ ক্রিকেটার তিন সংস্করণেই খেলে। কাজেই কোচ আলাদা করে লাভ নেই। ঢাকা ছাড়ার আগে বিসিবির যে চাহিদাপত্র কারস্টেন জেনে গেছেন, সেখানে বলা হয়েছে-প্রধান কোচ একজন হবেন এবং তিনি হবেন ব্যাটিংনির্ভর। তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি এবং টেস্টের জন্য আলাদা ব্যাটিং পরামর্শক বা কোচ নেওয়া যেতে পারে। প্রধান কোচ ঠিক করার ব্যাপারে বিসিবি আরেকটি অবশ্যপালনীয় শর্ত দিয়ে দিয়েছে কারস্টেনকে। কোচকে হতে হবে কঠোর। শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপসহীন। জাতীয় দলের জন্য একজন অভিজ্ঞ ফিল্ডিং কোচ আনার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে কারস্টেন-বিসিবি আলোচনায়।

শুরুর সমস্যাটা তবু থেকেই যাচ্ছে। কারস্টেন না হয় দেখিয়ে দিলেন, ‘অমুককে কোচ বানাও’, কিন্তু সেই ‘অমুক’কে আইপিএল-বিগ ব্যাশের ‘ভালোবাসা’ ভোলাবে কে, কে রাজি করাবে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে!