লিভারপুলকে যে দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে শক্তি খাটাতে হবে

শিষ্যদের নিয়ে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে ক্লপকে। ছবি: এএফপি
শিষ্যদের নিয়ে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে ক্লপকে। ছবি: এএফপি
>চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে আগামীকাল রাতে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে লিভারপুল। তার আগে আসুন জেনে নিই লিভারপুলের শক্তি এবং দুর্বলতার জায়গাগুলো:

এক দশকেরও বেশি সময় পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে লিভারপুল। প্রতিপক্ষ টানা তৃতীয়বার ফাইনালে ওঠা রিয়াল মাদ্রিদ। কাগজে-কলমে লিভারপুলের চেয়ে রিয়ালই বেশি শক্তিশালী। আর তাই স্প্যানিশ ক্লাবটির চেয়ে লিভারপুলকে নিয়েই কাটাছেঁড়া চলছে বেশি। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ইউরোপসেরা হতে চাইলে ইংলিশ ক্লাবটিকে দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তির জায়গাগুলোতে বেশি জোর দিতে হবে। লিভারপুলের দুর্বলতা ও শক্তিমত্তার দিকগুলো তুলে ধরা হলো:

শক্তিমত্তা
কোচ ক্লপের ‘হেভি মেটাল’ কৌশল: বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে সাফল্য পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ক্লপের ‘গেগেনপ্রেসিং’। লিভারপুলে এসেও সেই গেগেনপ্রেসিং দিয়ে দলকে এক রাখার চেষ্টা করছেন ক্লপ, যা লিভারপুলের জন্য বড় শক্তিমত্তার একটি বিষয়। বল ছাড়া মাঠে দৌড়ে বলের আশপাশে সব সময় খেলোয়াড়দের উপস্থিতি এবং অল টাইম প্রেসিং করে বিপক্ষ দলকে বিভ্রান্ত করে গোল দেওয়াই গেগেনপ্রেসিং।

রক্ষণে ‘দেয়াল’ ভার্জিল ফন ডাইক: জানুয়ারিতে দলবদলের মৌসুমে লিভারপুল যখন ৮৫ মিলিয়ন ইউরোতে ভার্জিল ফন ডাইককে কিনে আনল, তখন সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু দলে ফন ডাইকের উপস্থিতি লিভারপুলের ভঙ্গুর রক্ষণভাগকে অনেকটাই শক্তিশালী করেছে। রক্ষণে ফন ডাইকই তাদের প্রধান শক্তিমত্তা। নেদারল্যান্ডসের এই ডিফেন্ডার আছেন, এমন শেষ ২১ ম্যাচের ১০টিতে ‘ক্লিন শিট’ রেখেছে লিভারপুল।

মিলনারের পুনর্জন্ম: ক্লপের দলে অনেকটা ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন জেমস মিলনার। দলের একাদশে অনেকেই চাইছিলেন না মিলনারকে। তবে হঠাৎ করেই চ্যাম্পিয়নস লিগে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন মিলনার। ৯ ‘অ্যাসিস্ট’ করে মিলনার ছাড়িয়ে গেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সব খেলোয়াড়কে। মাঝমাঠের সব পজিশনে খেলতে পারা, এমনকি প্রয়োজনে রক্ষণেও নামতে পারা মিলনার লিভারপুলের জন্য বড় শক্তি।

সালাহ-মানে-ফিরমিনোর ‘ত্রিফলা’: মোহাম্মদ সালাহর মতো গতিশীল ফরোয়ার্ড থাকলেও দলে দরকার ছিল তাঁর যোগ্য সতীর্থ, যাঁরা তাঁকে অহরহ বলের জোগান দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সাদিও মানে ও রবার্তো ফিরমিনো স্রেফ অসাধারণ। তিনজনের গতি আর পেছন থেকে বানানো বল—‘গেগেনপ্রেসিং’ ফুটবলের দুর্দান্ত ‘ত্রিফলা’ আক্রমণভাগ। ক্লপের কৌশলের সঙ্গে এই তিন খেলোয়াড় এত সুন্দর মানিয়ে নিয়েছেন, যেকোনো দল ভয় পেতে বাধ্য।

দুর্বলতা
লরিস কারিয়াসের ভুলের প্রবণতা: সিমন মিনিওলেত ও লরিস কারিয়াসের মাঝে কে হবেন মূল গোলকিপার, তা নিয়ে বিতর্ক ছিল। ভুল করায় দুজনেই পটু। কিন্তু লরিস কারিয়াসের ভুল প্রবণতা কমে আসায় তাকেই চ্যাম্পিয়নস লিগে গোলকিপার হিসেবে রাখা হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই বড় ভুল করে ফেলেন কারিয়াস, যা লিভারপুলকে বিপদে ফেলতে পারে ফাইনালে।

ধারাবাহিকতার অভাব: ইয়ুর্গেন ক্লপ তাঁর দলের ‘ত্রিফলা’ আক্রমণভাগ দিয়ে জয় বের করে আনছেন ঠিকই, কিন্তু দলটা ধারাবাহিক হয়ে উঠতে পারেনি। চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিকে ধরাশায়ী করার পরের ম্যাচেই লিভারপুলকে চরমভাবে বিধ্বস্ত হতে হয় ওয়েস্ট ব্রমের কাছে।

চেম্বারলিনের অনুপস্থিতি: ফিলিপে কুতিনহো চলে যাওয়ার পর আর্সেনাল থেকে অ্যালেক্স-অক্সলেইড চেম্বারলিনকে কিনে মধ্যমাঠে সৃষ্টিশীল তারকার অভাব পূরণ করেছে লিভারপুল। কিন্তু সেমিফাইনালে চেম্বারলিনের চোট লিভারপুলকে চিন্তায় ফেলেছে। চেম্বারলিন অনুপস্থিত থাকলে অ্যাটাকিং থার্ডে মানে-সালাহদের বলের জোগান কমবে, এটাই স্বাভাবিক। এ জায়গাটি বর্তমানে লিভারপুলের চিন্তার বিষয়।

ডাগআউটে শক্তির অভাব: লিভারপুল দলের একাদশে অনেক তারকার উপস্থিতি রয়েছে বটে। কিন্তু দলের ডাগআউটে এমন কোনো খেলোয়াড় নেই যাঁরা মাঠে নেমে দ্রুত খেলাটা পাল্টে দিতে পারবেন। উডবার্ন, আলবার্তো মোরেনো, ড্যানি ইংসের মতো কমবয়সী তারকারা আছেন, কিন্তু মাঠে নেমে খেলার গতি পাল্টে দেওয়ার মতো সামর্থ্য এখনো তাঁদের কাছ থেকে দেখা যায়নি।

গত মৌসুমেও ইউরোপা লিগের ফাইনালে উঠেছিল লিভারপুল। কিন্তু সেভিয়ার বিরুদ্ধে জয় তুলে নিতে পারেনি। এবার প্রতিপক্ষ আরও শক্তিশালী। রিয়ালের বিপক্ষে এই ফাইনাল জিততে হলে লিভারপুলকে সেরা ফুটবলই খেলতে হবে।