রিয়ালের টানা তিন শিরোপা জয়ের অর্জন কত বড়?

জিদানের হাতে তিন শিরোপা। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ (বাঁ থেকে)। ছবি: এএফপি
জিদানের হাতে তিন শিরোপা। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ (বাঁ থেকে)। ছবি: এএফপি
চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম দল হিসেবে টানা তিন শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্টে ১৩ শিরোপা জিতল স্প্যানিশ ক্লাবটি। ইউরোপসেরার মঞ্চে সাফল্যে রিয়ালের ধারেকাছেও কেউ নেই


ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারকে মনে করিয়ে দিলেন সার্জিও রামোস।

না, মাঠের খেলায় নয়, অর্জনে। ইউরোপিয়ান কাপ কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে কাল রাতের আগে সর্বশেষ টানা তিন শিরোপা জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ (১৯৭৪-৭৬)। বায়ার্নের সেই দলটার অধিনায়ক ছিলেন ‘কাইজার’ খ্যাত বেকেনবাওয়ার। আর রিয়ালের এই দলটার অধিনায়ক রামোস। দুজনের মধ্যে মিলটা নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন?

রামোস গত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা উঁচিয়ে ধরার আগপর্যন্ত গত ৪২ বছরে আর কোনো অধিনায়কই বেকেনবাওয়ারের সেই কীর্তি ছুঁতে পারেননি। চ্যাম্পিয়নস লিগে দলকে তিন শিরোপা জেতানোর মতো অধিনায়ক তো আর হাত বাড়ালেই মেলে না। যেমনটা খাটে রিয়াল মাদ্রিদের ক্ষেত্রেও। ইউরোপসেরার মঞ্চে স্প্যানিশ ক্লাবটির যে থরে-বিথরে অর্জন, তা কোনো ক্লাব হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারে না।

অহম-নিঃসৃত কথা নয়, স্রেফ পরিসংখ্যানের সাক্ষ্য। ১৩—সংখ্যাকে আমরা এত দিন ‘আনলাকি থার্টিন’ বলে জেনে এলেও রিয়ালভক্তরা এই একই সংখ্যাকে ‘ত্রয়োদশ স্বর্গ’ নামকরণ করতে পারেন। কেন?
পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি করা লাগবে না, এখন সবাই জানে ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে আর কোনো ক্লাবের ১৩টা শিরোপা নেই। নিকটতম দল এসি মিলানও ছয় শিরোপা ব্যবধানে এন্তার পথ পিছিয়ে। এতেও সন্তুষ্ট না হলে আরও দুটি পরিসংখ্যান—ইউরোপসেরা হওয়ার এই মঞ্চে টানা পাঁচ শিরোপা জয়ের রেকর্ড নেই আর কোনো ক্লাবের, যা আছে রিয়ালের।

সেটাও ইউরোপিয়ান কাপের প্রথম পাঁচ টুর্নামেন্ট। নতুন প্রজন্মের অনেকেই পঞ্চাশের দশকে রিয়ালের টানা পাঁচ শিরোপা জয়কে খাটো করে দেখতে পারেন। তখনকার ইউরোপিয়ান কাপ এখনকার চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো এত জমকালো ছিল না। সে যুগের ফুটবল কিংবা অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যার কথা তুলে অনেকেই সে রেকর্ডকে গুরুত্ব দিতে চান না। তাঁদের জন্য জবাব হতে পারে একটি পরিসংখ্যান—ইউরোপিয়ান কাপে জেতা ছয় শিরোপা বাদ দিলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালকে কেউ টপকে যেতে পারবে না।

ইউরোপিয়ান ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে সাতবারের চ্যাম্পিয়ন মিলান তাদের পাশে থাকবে। আবার মিলানের চারটি ইউরোপিয়ান কাপ বাদ দিলে রিয়ালই শীর্ষে। শুধু কি তাই? ফুটবল ও বাস্কেটবলে ইউরোপসেরা হওয়া একমাত্র ক্লাবও রিয়াল এবং সেটা এ মৌসুমে! জুভেন্টাস, চেলসির মতো দল তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি। এমনকি বার্সেলোনা, বায়ার্ন, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই শিরোপা জিততে পারেনি। সেখানে টানা তিন শিরোপা জয়? চাট্টিখানি কথা নয়!

১৯৫৬ থেকে ১৯৬০—এই পাঁচ মৌসুমেই রিয়াল শিরোপা জয়ের পর টানা তিনবার ফাইনালে পৌঁছাতে পেরেছে মাত্র পাঁচটি দল—ইউরোপিয়ান কাপে বেনফিকা, আয়াক্স ও বায়ার্ন। চ্যাম্পিয়নস লিগ সংস্করণে মিলান ও জুভেন্টাস। এর মধ্যে আয়াক্স ও বায়ার্ন টানা তিনবার ফাইনালে উঠেই ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছে। বেনফিকা জিতেছে টানা দুইবার। চ্যাম্পিয়নস লিগ সংস্করণে মিলান ও জুভেন্টাস টানা তিনবার ফাইনালে উঠলেও একবার করে শিরোপা জিততে পেরেছে।