মেসিরও একটা কথা মনে রাখা উচিত

>বাজতে শুরু করেছে বিশ্বকাপের বাঁশি। শুরু হয়ে গেছে ক্ষণগণনা। প্রথম আলোতেও শুরু হয়ে গেল বিশেষ আয়োজন। বিশ্বকাপ নিয়ে বিশ্বসেরা ৩০ জন ফুটবলার ও কোচের বিশেষ সাক্ষাৎকার ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে বাংলাদেশে শুধুই প্রথম আলোয়।
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা

রাশিয়াতেই শেষবার দেখা যাবে বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে সফল মিডফিল্ডারকে—আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। বার্সেলোনার হয়ে সর্বশেষ ম্যাচটি এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন। এই বিশ্বকাপ হবে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। ফাইনালে তাঁর গোলই ২০১০ সালে স্পেনকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিল। রাশিয়ায়ও একই উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে যাবে স্পেন, দিচ্ছেন সে নিশ্চয়তাও—

প্রশ্ন: লা রোহা (স্পেন) সমর্থকদের স্মৃতিতে বিশ্বকাপ আর জোহানেসবার্গে ১১৬ মিনিটে আপনার গোল এক সুতোয় গাঁথা। ওই মুহূর্তটা ফিরে দেখলে কেমন লাগে?

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা: কিছু কিছু মুহূর্ত থাকে যা আপনি কখনোই ভুলতে পারবেন না। ওটা আমাদের সবার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত ছিল। জয়সূচক গোলটা করতে পারা সব সময়ই বিশেষ, আর বিশ্বকাপ জেতানো গোল করতে পারার চেয়ে তো বিশেষ কিছু আর হয় না। সবাই এত খুশি ছিল তখন! অবিস্মরণীয় একটা রাত!

প্রশ্ন: ২০০৮ থেকে ২০১২ প্রতিবছরই আপনি ক্লাব না হয় দেশের হয়ে একটা আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন। আপনার ক্যারিয়ারের সেরা সময় কি ওটাই ছিল?

ইনিয়েস্তা: দেখুন, আমি সব সময়ই বিশ্বাস করে এসেছি যে আমি আরও ভালো করতে পারতাম। হ্যাঁ, বার্সেলোনা ও স্পেনের জার্সিতে সেটা অসাধারণ একটা সময় ছিল। দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছি, আর জাতীয় দলের হয়ে দুটি ইউরোর মাঝে একটা বিশ্বকাপ। স্বাভাবিকভাবেই এই জয়গুলোর সঙ্গে যাঁরা জড়িয়ে, সবার কাছে এটা সবচেয়ে আনন্দের সময় ছিল। ফুটবল একটা দলীয় খেলা, দল হিসেবেই ভালো খেলতে হয়, ওই পাঁচ বছরে সেটা আমরা করতে পেরেছি।

প্রশ্ন: ২০১৪ বিশ্বকাপে স্পেনের পারফরম্যান্স কতটা হতাশার ছিল?

ইনিয়েস্তা: সত্যি বলতে আমরা সামর্থ্যের পুরোটা দিয়ে খেলতে পারিনি। জানি না কেন, হয়নি। প্রথম রাউন্ড থেকেই বাড়ি ফিরেছি আমরা। তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আমাদের আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। হল্যান্ডের বিপক্ষে দুঃস্বপ্নের মতো শুরু করেছিলাম, হেরেছিলাম ৫-১ গোলে। এরপর চিলির কাছে আবার হারলাম ২-০ গোলে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচটা তাই অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। ফর্মটা হঠাৎ পড়ে গিয়েছিল, যেটা ভাবলে এখনো দুঃখ হয়। তবে জীবন এগিয়ে যাবে। আমরাও আরেকটা বিশ্বকাপ জিততেই পারি।

প্রশ্ন: এবার স্পেনকে আবার ফেবারিটদের একটি মনে করা হচ্ছে...

ইনিয়েস্তা: আমরা ভালো খেলেছি। নতুন কিছু খেলোয়াড় এসেছে, পাশাপাশি অভিজ্ঞরাও আছে। নিখুঁত সমন্বয়। নতুন কোচের অধীনে কঠিন একটা গ্রুপ থেকে বিশ্বকাপে এসেছি আমরা, ইতালিকে হারিয়েছি। গ্রুপে একটা ম্যাচও হারিনি। আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী আমরা, ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরি।

প্রশ্ন: যা-ই হোক, সোচিতে আইবেরিয়ান ডার্বি (পর্তুগাল বনাম স্পেন) দিয়েই বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আপনাদের...

ইনিয়েস্তা: এটা আমাদের জন্য ভালোই হলো। কারণ আমাদের শুরু থেকেই নিজেদের সেরা ছন্দে থাকতে হবে। পর্তুগাল বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন। সত্যিই খুব ভালো একটা দল, আর আইবেরিয়ান ডার্বি সব সময়ই বিশেষ। সত্যি বলতে, গ্রুপে মরক্কো ও ইরানও প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন হবে।

প্রশ্ন: আপনি এরই মধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেন যে এই বিশ্বকাপটাই আপনার শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হবে। আপনি নিশ্চয়ই আরেকটা বিশ্বকাপ মুকুট মাথায় নিয়ে অবসরে যেতে চাইবেন।

ইনিয়েস্তা: যেমনটা বলেছি, আমি কে, শুধু সেটি ভেবে দলে জায়গা দখল করে রাখতে চাই না। এটা আমার শেষ টুর্নামেন্ট হবে। লা রোহার হয়ে অসাধারণ সময় কেটেছে আমার, জাতীয় দলের জার্সিতে একসঙ্গে সাফল্য উপভোগও করেছি। রাশিয়ায় আমরা সবাই একটা অসাধারণ বিশ্বকাপ কাটাতে চাই।

প্রশ্ন: অনেক কোচের অধীনেই আপনি খেলেছেন। হুলেন লোপেতেগিকে (স্পেন কোচ) কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ইনিয়েস্তা: প্রত্যেক কোচেরই দলকে খেলানোর নিজস্ব পদ্ধতি থাকে। তাঁর ভাবনার সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হয়। ফল বলছে, তাঁর (লোপেতেগি) অধীনে আমরা এ পর্যন্ত ভালোই করেছি। বিশ্বকাপ প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মতো কোচদের জন্যও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁর দর্শনটা আমাদের আগে ভালোভাবে বুঝতে হবে, তারপর সেটা মাঠে প্রয়োগ করতে হবে।

প্রশ্ন: জাভি হার্নান্দেজ, যাঁকে বলা হয় অন্য মায়ের পেটে জন্মানো আপনার আরেক ভাই। তিনি এবার নেই দলে। বিশ্বকাপে তাঁকে কতটা মিস করবেন?

ইনিয়েস্তা: আরেকজন জাভি কখনোই হবে না! ২০১৪ বিশ্বকাপ শেষে ওর অবসরের পর থেকে এমন একটা মুহূর্ত ছিল না, যখন ওকে মিস করিনি। ক্লাব ও স্পেনের হয়ে কত কী করেছি আমরা। তবে জীবন এমনই। ও আমাদের চেয়ে একটু সিনিয়র ছিল। ব্রাজিলে আমরা প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ার পরই আমাদের ছেড়ে গেছে। এখন আমাদের থিয়াগো আলকানতারা আছে, আর সার্জিও (বুসকেটস) তো মাঠের প্রতিটি জায়গায় সব সময় উপস্থিত থাকে। জাভি সব সময়ই আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। যেকোনো দরকারে অবশ্যই কথা বলি আমরা।

প্রশ্ন: ক্লাবে আপনার আরেকজন বন্ধু আছেন, লিওনেল মেসি। যিনি প্রথমবার শিরোপাটা জিততে মুখিয়ে আছেন।

ইনিয়েস্তা: দেখুন, ফুটবলে কেউ একা কোনো শিরোপা জেতাতে পারে না। দলের কাছ থেকে পূর্ণ সাহায্য দরকার হয়। ফুটবল টেনিস নয়। একা একা কিছুই করতে পারবেন না। লিওর (মেসি) পাশে পুরো দলকেই সেরাটা খেলতে হবে। যা-ই হোক, ও অসাধারণ ফর্মে আছে। সব সময়ের মতোই! তবে লিওর একটা কথা মনে রাখা উচিত, আমরাও অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাশিয়া যাচ্ছি। 

একনজরে

পুরো নাম: আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা লুহান

জন্ম: ১১ মে ১৯৮৪

জন্মস্থান: ফুয়েন্তিলবিয়া, স্পেন

পজিশন: মিডফিল্ডার

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

২০০৬-

ম্যাচ: ১২৫, গোল: ১৩

অর্জন

বিশ্বকাপ: ২০১০

ইউরো: ২০০৮, ২০১২

ক্লাব ক্যারিয়ার

বার্সেলোনা (২০০২-১৮)

ম্যাচ: ৪৪২, গোল: ৩৫

অর্জন

লা লিগা ৯, কোপা ডেল রে ৬, সুপারকোপা ৭, চ্যাম্পিয়নস লিগ ৪, উয়েফা সুপার কাপ ৩, ক্লাব বিশ্বকাপ ৩