সাকিব নিজেই ভুলে গেছেন কতবার পেয়েছেন এই পুরস্কার

>কলকাতায় কোয়ালিফায়ার খেলার একদিন পর মুম্বাইয়ে আইপিএল ফাইনাল। কাল সেটি খেলেই আজ দুপুরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। দেশে ফেরার খানিকক্ষণ পরেই চলে এলেন প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানে। সাকিবের হাতে আবারও উঠল বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার।
আবারও প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ছবি: প্রথম আলো
আবারও প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ছবি: প্রথম আলো

কাল রাতে আইপিএল ফাইনাল খেলে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন আজ দুপুরে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলও হয়নি, সাকিব আল হাসান চলে এলেন হোটেল সোনারগাঁয়ে রুপচাঁদা-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানে। তাঁকে দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই, তিন দিনের মধ্যে আইপিএলের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ দুটি (একটি ফাইনাল) ম্যাচ খেলেছেন, কলকাতা-মুম্বাই-ঢাকা—বিমান ভ্রমণ করেছেন! কীভাবে পারেন সাকিব? ‘কোনো ব্যাপার না’, এমন অভিব্যক্তিতে হাসলেন।

রাজ্যের ব্যস্ততার মধ্যেও এই পুরস্কার অনুষ্ঠানে আসার একটা ‘দায়’ আছে সাকিবের, যেটি শুভেচ্ছা বক্তব্যে তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র। সেই দায়টা কী, সেটি সাকিব একবার জানার চেষ্টা করেছেন রেড কার্পেটেও। উপস্থাপকের কাছে জানতে চাইলেন, ‘এই পুরস্কারটা আমি কতবার পেয়েছি?’ পুরস্কার সংখ্যাটা একটু বেশি বলেই কি না সাকিব নিজেই ভুলে গেছেন।

২০০৮, ২০০৯, ২০১১, ২০১২—চারবার প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন। এবার পেলে কেমন লাগবে, রেড কার্পেটে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর উত্তর, ‘পেলে ভালো লাগবে, না পেলেও সমস্যা নেই। তবে এই অনুষ্ঠান নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত। এখানে এলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়।’ পরে জানালেন, এই পুরস্কার তাঁকে আরও ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ গোলাম সরওয়ার বর্ষসেরার ক্রীড়াবিদের পুরস্কার ঘোষণার আগে যখন বলতে শুরু করলেন, ‘তাঁকে কেন দেওয়া হচ্ছে এটা পড়া শুরু করলে বুঝে ফেলবেন আপনারা। ৭ টেস্টে ৬৬৫ রান, ২৯ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২১৭ রান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনেকটা একাই জিতিয়েছেন মিরপুর টেস্ট, কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে)। ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ২২৪ রানের জুটি গড়ে জিতিয়েছেন বাংলাদেশকে। এর পর আর নাম বলার প্রয়োজন আছে?’ সতীর্থরা ততক্ষণে করতালি দিতে শুরু করেছেন, করতালিতে সাকিবকে অভিনন্দন জানাল পুরো হলরুম।

পুরস্কার নিতে গিয়ে অবশ্য এই অর্জনের চেয়ে উপস্থাপকদের অনুরোধে বলতে হলো মাত্রই শেষ হওয়া আইপিএল নিয়ে, ‘আইপিএলে প্রতিবারই নতুন নতুন কিছু শিখতে পারি। কেকেআরে যখন সাত বছর ছিলাম ভালো অভিজ্ঞতা হলো। যেহেতু কলকাতাতে একই ভাষা, প্রায় একই সংস্কৃতি। বাংলাদেশ থেকে অনেকে খেলা দেখতে যেত। আমার কাছে কখনো মনে হয়নি বাংলাদেশের বাইরে আছি। হায়দরাবাদ অনেক দূরে। তবে পরিবেশটা অনেক ভালো। প্রথমবারের মতো আইপিএলে সবগুলো ম্যাচ খেললাম। খুব ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। দলে অবদান রাখতে পেরে আমি খুশি। চেষ্টা থাকবে এই অভিজ্ঞতা সামনে আফগানিস্তান সিরিজে কাজে লাগাতে পারি।’

আইপিএল-প্রসঙ্গই যখন এল, কাল মাত্র ১ ওভার বোলিং করলেন কেন? অনুষ্ঠান শেষে সাকিবকে জিজ্ঞেস করতেই এক গাল হাসি, ‘এক ওভারেই যে মার (১৫ রান) খেয়েছি, আরেক ওভার করলে তো ম্যাচ ওখানেই শেষ!’—মানসিকভাবে সাকিব এতটাই শক্ত, সাফল্যে অতি উচ্ছ্বাসে ভেসে যান না, আবার ব্যর্থতায় ভেঙে পড়েন না। বছরের পর বছর শীর্ষ স্থানটা ধরে রাখার রহস্য বোধ হয় এটাই!

 কে পেলেন কী পুরস্কার

বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ

সাকিব আল হাসান  (ক্রিকেট)
বর্ষসেরা রানারআপ 

আজহারুল ইসলাম খান (অ্যাথলেটিকস)
মুশফিকুর রহিম (ক্রিকেট)
বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদ

সাবিনা খাতুন (ফুটবল)
বর্ষসেরা উদীয়মান

অর্ণব শারার (শুটিং)
পাঠকের ভোটে বর্ষসেরা

মাশরাফি বিন মুর্তজা (ক্রিকেট)
আজীবন সম্মাননা

প্রতাপ শংকর হাজরা (স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সহ–অধিনায়ক)