ইংল্যান্ডে পাকিস্তানের স্মরণীয় পাঁচ টেস্ট জয়

>ইংল্যান্ডের ‘ক্রিকেট মক্কা’ লর্ডসে চার দিনের মধ্যে ৯ উইকেটে টেস্ট জিতেছে পাকিস্তান। লর্ডসে এ নিয়ে টানা দুই টেস্ট জিতল পাকিস্তান। দুই বছর আগে মিসবাহ-উল হকের নেতৃত্বে ‘ক্রিকেট মক্কা’য় জয়ের মুখ দেখেছিল দলটি। তবে সেই জয়ের তুলনায় এই জয়ের মাহাত্ম্য বেশি। মিসবাহর সেই দলটা সরফরাজদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী ছিল। কিন্তু বাবর আজম-মোহাম্মদ আমিরদের নিয়েই দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছেন সরফরাজ। আসুন জেনে নিই ইংল্যান্ডে পাকিস্তানের পাঁচটি সেরা জয়:
৬ উইকেট নিয়ে একাই ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস ধসিয়ে দেন মুদাসসর নজর। ছবি: ফাইল ছবি
৬ উইকেট নিয়ে একাই ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস ধসিয়ে দেন মুদাসসর নজর। ছবি: ফাইল ছবি

১৯৮২, লর্ডস: ১০ উইকেটের জয়
বার্মিংহামে সিরিজের প্রথম টেস্ট হারের পর লর্ডসে পা রেখেছিল পাকিস্তান দল। তার আগে ইংল্যান্ডে ২৮ বছর টেস্ট জেতেনি পাকিস্তান। কিন্তু ইমরান খানের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দলটি। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে মহসিন খানের দ্বিশতক গড়ে দিয়েছিল পাকিস্তানের জয়ের ভিত্তি। ইয়ান বোথাম, রবিন জ্যাকম্যান, ডেরেক প্রিঙ্গলদের বিপক্ষে প্রথম দিনে হেলমেট ছাড়াই ব্যাটিং করেছিল ইমরানের দল। ৮ উইকেটে ৪২৮ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। জবাবে ২২৭ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়েছিল ইংল্যান্ড। ৪ উইকেট নিয়েছিলেন আবদুল কাদির, ৩ উইকেট সরফরাজ নওয়াজের।

ফলোঅন করতে নেমে মুদাসসর নজরের তোপে পড়েছিল ইংল্যান্ড। ৩২ রানে একাই ৬ উইকেট নিয়ে ইংলিশ ব্যাটিং অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছিলেন এই মিডিয়াম পেসার। আম্পায়ারিং বিতর্কের মাঝে সেবার সিরিজ হারলেও এই জয়টা ছিল ইংল্যান্ডে পাকিস্তানের সোনালি যুগের শুরু। পরবর্তী ২৪ বছরে তারা ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ হারেনি।

হেডিংলিতে ইমরান খানের তোপে পুড়েছিল ইংল্যান্ড। ছবি: এএফপি
হেডিংলিতে ইমরান খানের তোপে পুড়েছিল ইংল্যান্ড। ছবি: এএফপি

১৯৮৭, হেডিংলি: এক ইনিংস ও ১৮ রানের জয়
হেডিংলির সেই জয় দিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল পাকিস্তান। হেডিংলির উইকেট ছিল সুইংবান্ধব। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কন্ডিশনটা দারুণভাবে কাজে লাগান পাকিস্তানের তিন পেসার ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম ও মহসিন কামাল। ৩টি করে উইকেট নেন তাঁরা। ৩১ রানেই ৫ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড ১৩৬ রানেই গুটিয়ে যায়। জবাবে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থেমেছে ৩৫৩ রানে। মাত্র ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি সেলিম মালিক। ইমরান ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস একাই ধসিয়ে দেন। ৪০ রানে ৭ উইকেট নেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ইংল্যান্ড ১৯৯ রানেই অলআউট হওয়ায় এক ইনিংসে ১৮ রানের দুর্দান্ত জয় পেয়েছিল পাকিস্তান।

লর্ডস টেস্ট জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন ‘টু ডব্লিউ’ খ্যাত ওয়াসিম-ওয়াকার পেস জুটি। ছবি: এএফপি
লর্ডস টেস্ট জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন ‘টু ডব্লিউ’ খ্যাত ওয়াসিম-ওয়াকার পেস জুটি। ছবি: এএফপি

১৯৯২, লর্ডস: ১০ উইকেটের জয়
কোনো দলের ব্যাটসম্যানই বড় কোনো ইনিংস খেলতে পারেননি। তা ছাড়া উত্তেজনার সব রসদই মজুত ছিল এই টেস্টে। পেসারদের সঙ্গে স্পিনাররাও ছড়ি ঘুরিয়েছেন। হালকা উত্তাপও ছড়িয়েছেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। গ্রাহাম গুচের ৬৯ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ২৫৫ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়াকার ইউনিস। ২টি করে উইকেট মুশতাক আহমেদ ও ওয়াসিম আকরামের। জবাবে ২৯৩ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। আমির সোহেল, আসিফ মুজতবা ও সেলিম মালিকের ব্যাট থেকে এসেছিল তিনটি ফিফটি। তবে কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন পেসার ডেভন ম্যালকম। ৩ উইকেট নিয়েছিলেন আরেক ইংলিশ পেসার ফিল ডিফ্রেইটাস। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট নিয়ে সম্ভাবনা দেখান স্পিনার ইয়ান সলসবুরি।

তবে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড দাঁড়াতেই পারেনি। ‘টু ডব্লিউ’ ওয়াসিম-ওয়াকার এবং মুশতাক আহমেদের বোলিংয়ে ১৭৫ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। অ্যালেক স্টুয়ার্ট ছাড়া আর কেউ ফিফটির মুখ দেখেননি। ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম। ৩ উইকেট মুশতাকের এবং ২ উইকেট ওয়াকারের। জয়ের জন্য ১৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৫ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তান। ৩টি করে উইকেট নিয়েছিলেন ক্রিস লুইস ও ইয়ান সলসবুরি। শেষ দিকে ওয়াসিম (৪৫*) ও ওয়াকারের (২০*) দৃঢ়তায় রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছিল পাকিস্তান।

ওভালেও ওয়াসিম-ওয়াকারের তোপে পুড়েছে ইংল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ওভালেও ওয়াসিম-ওয়াকারের তোপে পুড়েছে ইংল্যান্ড। ছবি: এএফপি

১৯৯২, ওভাল: ১০ উইকেটের জয়
রোববার সরফরাজদের জয়ের সঙ্গে ২৬ বছর আগের সেই জয়ের বেশ মিল আছে। পার্থক্য হলো এবারের জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল পাকিস্তান আর ওভালের সেই জয়ে তারা সিরিজ জিতেছিল। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ১৮৪ রানে অলআউট হয়েছিল জো রুটের ইংল্যান্ড। আর ওভালে গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ড গুটিয়ে গিয়েছিল ২০৭ রানে। ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম। নিজেদের প্রথম ইনিংসে চার ফিফটি থেকে ৩৮০ রান তোলে পাকিস্তান। যেমনটা ঘটেছে সর্বশেষ লর্ডস টেস্টেও—প্রথম ইনিংসে চার ফিফটি পেয়েছে পাকিস্তান। যাহোক, ওয়াকার (৫/৫২) ও ওয়াসিমের (৩/৩৬) তোপে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। মাত্র ২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে মার্ক রামপ্রকাশের প্রথম বলেই চার মেরে জয় তুলে নেন আমির সোহেল।

লর্ডস টেস্ট জয়ের পর মিসবাহদের সেই আলোচিত বুকডন। ছবি: রয়টার্স
লর্ডস টেস্ট জয়ের পর মিসবাহদের সেই আলোচিত বুকডন। ছবি: রয়টার্স

২০১৬, লর্ডস: ৭৫ রানের জয়
সেবার ইংল্যান্ড সফরে আসার আগে কঠোর অনুশীলন ক্যাম্প করে এসেছিল মিসবাহ-উল হকের পাকিস্তান। বোঝাই যাচ্ছিল, কিছু একটা প্রমাণ করতে চায় পাকিস্তান। চার ম্যাচের সেই সিরিজে প্রথম টেস্ট ছিল লর্ডসে। প্রথম দিনেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে লর্ডসের দর্শকদের সামনে ‘বুকডন’ দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন মিসবাহ। প্রথম ইনিংসে ৩৩৯ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছিল ২৭২ রানে। ৬ উইকেট নিয়েছিলেন লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান অতটা ভালো করতে পারেনি। ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় তারা। জয়ের জন্য ২৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০৭ রানেই গুটিয়ে যায় অ্যালিস্টার কুকের দল। ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ইয়াসির, ৩ উইকেট রাহাত আলীর। দলের সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে বুকডন দিয়ে ৭৫ রানের এই জয় উদ্‌যাপন করেছিল পাকিস্তান।