মোস্তাফিজের চোট বিদেশি লিগ নিয়ে ভাবাচ্ছে বিসিবিকে

মোস্তাফিজ আবারও পড়েছেন চোটে। ছবি: ফাইল ছবি
মোস্তাফিজ আবারও পড়েছেন চোটে। ছবি: ফাইল ছবি
>২০১৬ আইপিএল থেকে চোট নিয়ে ফিরেছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমান এবারও আইপিএল থেকে ফিরেছেন চোট নিয়ে। চোট এতটাই গুরুতর, জুনে আফগানিস্তান সিরিজই খেলা হচ্ছে না বাঁহাতি পেসারের। মোস্তাফিজ চোটে পড়েছিলেন ২০১৬ সালে সাসেক্সে খেলতে গিয়েও। সেবার কাঁধের চোটে পড়ে প্রায় ছয় মাস ছিলেন মাঠের বাইরে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে গিয়ে বারবার চোটে পড়ায় বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিসিবিকে।

বিসিবি কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা রহস্যের হাসি হেসে জানতে চাইলেন, ‘যাকে খুঁজছেন, পেয়েছেন? তাঁকে এখন আর পাবেন না!’ কার কথা হচ্ছে? মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের সঙ্গে সংবাদকর্মীদের একটা ‘চোর-পুলিশ’ খেলাই হয়ে গেল আজ দুপুরে! তাতে জিতলেন তিনিই। কোন ফাঁকে, কোন গেট দিয়ে সাংবাদিকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিসিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গেলেন, কেউ টেরই পেল না! সাংবাদিকেরা মোস্তাফিজকে ‘ধরতে’ না পারায় সবচেয়ে খুশি হলেন বোধ হয় নিরাপত্তাকর্মীরাই!

এমনিতে অন্তর্মুখী। সংবাদমাধ্যমের সামনে আসতেই চান না। আফগানিস্তান সিরিজের আগে হঠাৎ এই দুঃসংবাদ। মোস্তাফিজ নিজেকে যেন আরও বেশি লুকিয়ে রাখতে চাইছেন। চোটটা যে গুরুতর হচ্ছে, সেটি একেবারেই টের পাননি তিনি? দেশে ফিরে অনুশীলন করেছেন। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন। একেবারে সফরের আগ মুহূর্তে কি না, এসে জানতে পারলেন পায়ের বুড়ো আঙুলের চোটটা গুরুতর! নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য এখানে মোস্তাফিজকে দোষ দিচ্ছেন না, ‘ও কিন্তু আইপিএল থেকে ফিরেই চোটের বিষয়টা জানিয়েছিল। আইপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচ যেহেতু ব্যথাটা পেয়েছিল, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে সেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। যেখানে ব্যথা পেয়েছে, সেখানে ফুলতেও দেখা যায়নি। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পর দেখে ব্যথা বেড়েছে। পরে এক্স-রে করে দেখা গেল এই চোট নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন।’

বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেন মোস্তাফিজের কাছে আতঙ্কের আরেক নাম হয়ে গেছে! ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলতে গিয়েই সাড়া ফেলে দেন মোস্তাফিজ। চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। কিন্তু দলের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখে দেশে ফেরেন হ্যামস্ট্রিং ও অ্যাঙ্কেলের চোট নিয়ে। তখন বাংলাদেশের খেলা না থাকায় দলের বাইরে থাকতে হয়নি। কিন্তু বড় ভুগিয়েছে ওই বছরের আগস্টে সাসেক্সে খেলতে গিয়ে পাওয়া কাঁধের চোট। লন্ডনের শল্যবিদ অ্যান্ড্রু ওয়ালেসের ছুরির নিচে পর্যন্ত যেতে হয়েছে মোস্তাফিজকে। প্রায় ছয় মাস থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। পূর্ণ ছন্দে ফিরতে ফিরতে লেগে গেছে আরও তিন-চার মাস। আগের মতো স্লোয়ার বা কাটার যে তাঁর কার্যকর নয়, এটির পেছনেও অনেকে দায়ী করেন মোস্তাফিজের কাঁধের চোটকে।

আবির্ভাবেই হইচই ফেলা দেওয়া মোস্তাফিজের অগ্রযাত্রা বারবার ব্যাহত হয়েছে চোটে পড়ায়। এই চোট কখনো পেয়েছেন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে, কখনো পেয়েছেন দেশের বাইরে লিগ খেলতে গিয়ে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে গিয়ে ঘন ঘন চোটে পড়াটা স্বাভাবিকভাবে দেখছে না বিসিবি। মোস্তাফিজদের মতো বাংলাদেশের যেকজন নিয়মিত দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলেন, তাঁদের ব্যাপারে আরও কড়াকড়ি হতে চাইছে বিসিবি। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান আকরাম খান আজ বললেন, ‘এবার আমরা এটা নিয়ে গুরুতরভাবে চিন্তা করছি। এর আগে সে (মোস্তাফিজ) চোট নিয়ে ফিরেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট এটার মূল্য দিয়েছে। এবারও একই সমস্যা। এটা বোর্ড মিটিংয়ে তোলা হবে। কোন খেলোয়াড়কে খেলতে দেব আর কোন খেলোয়াড়কে খেলতে দেব না, এটা নিয়ে আমরা কঠোর হব। সত্যি এটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’