২০ হাজার কোটি টাকার বিশ্বকাপের বাজার

অ্যাডিডাসের জার্সিতে মেসি। ছবি: রয়টার্স
অ্যাডিডাসের জার্সিতে মেসি। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বকাপে ১২ দলের জার্সি বানাচ্ছে অ্যাডিডাস। ১০ দলের নাইকি। ২০১৪ সালে অ্যাডিডাস সারা দুনিয়ায় ৮০ লাখ জার্সি বিক্রি করেছিল।

বিশ্বকাপ কি শুধু নেইমার-মেসি-রোনালদোর? শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে কী কেবল তারাই? উঁহু, তা হবে কেন! বিশ্বকাপ মানে আরও অনেক কিছু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা কেমন হবে, থিম সংটা শ্রুতিমধুর কিনা, দর্শক বেশি না কম—এগুলোর পাশাপাশি আরেকটা খেলা শেষ হয়ে যায় অন্তরালেই, মাঠে খেলা শুরু হওয়ার আগেই।

বিশ্বকাপ মানেই প্রিয় দলের জার্সি গায়ে সমর্থকদের উল্লাস। আরেকটু কড়া সমর্থক হলে প্রিয় খেলোয়াড়ের চুলের ছাটে ছাঁট দেওয়ার ব্যাপারটিও দেখা যায়। অনেকে প্রিয় খেলোয়াড়ের কেতার বুট পড়ে খেলতেও পছন্দ করেন। এ আগ্রহ আর ভালোবাসাকেই লক্ষ্য বানায় ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারীরা। এ নিয়ে লড়াই হয় ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। এ লড়াইয়ে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডিডাস ও নাইকি। সে খেলায় প্রতিবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় অ্যাডিডাস ও নাইকির মাঝে। এবার সে খেলায় নাইকিকে হারিয়ে দিয়েছে অ্যাডিডাস।

১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বকাপের বল সরবরাহ করছে অ্যাডিডাস। ২০৩০ সাল পর্যন্ত ফিফার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তারা। এবারের বিশ্বকাপের স্পনসরও জার্মান এই প্রতিষ্ঠান। তবু ২০১৪ বিশ্বকাপে নাইকির কাছে হেরে গিয়েছিল অ্যাডিডাস। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জার্সি বানানোর ক্ষেত্রে নাইকিকেই বেশি পছন্দ করেছে। এবার তার বদলা নিয়েছে অ্যাডিডাস। ৩২ দলের মধ্যে ১২টি দলই এবার অ্যাডিডাসের জার্সি গায়ে চাপাচ্ছে। যাদের মধ্যে রয়েছে জার্মানি, স্পেন, আর্জেন্টিনা ও রাশিয়া। আর নাইকি পেয়েছে ১০টি দলের দায়িত্ব। ব্রাজিল, ফ্রান্সইংল্যান্ডও আছে এদের মধ্যে।

২০১৪ বিশ্বকাপে ১ কোটি ৪০ লাখ বল বিক্রি করেছিল অ্যাডিডাস। আর জার্সি ৮০ লাখ। এবার নাইকিকে পেছনে ফেললেও ২০১৪ সালের মতো লাভের আশা করছে না অ্যাডিডাস। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ক্যাসপার ররস্টেড জানিয়েছেন, ‘আর্থিক দিক থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপ চার বছর আগের ব্রাজিল বিশ্বকাপের মতো লাভজনক হবে না। তবু আমরা এর অপেক্ষায় আছি। বিশ্বজুড়ে আমাদের ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়ানোর দুর্দান্ত উপায় এটা।’

জার্সির যুদ্ধে পিছিয়ে গেলেও হাল ছাড়ছে না নাইকি। নাইকির প্রধান নির্বাহী মার্ক পার্কার জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ খেলার জগতে অনেক শক্তিশালী একটা ঘটনা। আমরা চাচ্ছি এটা আরেকটু বাড়াতে। নাইকি সে আশা করতেই পারে। এ বিশ্বকাপে ফুটবলারদের ৬০ ভাগই পায়ে দেবেন নাইকির বুট। সবার আগেই আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। নেইমারও পায়ে দেবেন নাইকির বুট। লিওনেল মেসি আবার অ্যাডিডাসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।

জার্মানি ও স্পেন দলের জার্সি অ্যাডিডাসের হলেও অর্ধেকের বেশি খেলোয়াড়ই পায়ে দেবেন নাইকির বুট। শুধু মাত্র ইরান দলের কাউকেই মজাতে পারেনি নাইকি। পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপে খেপেছে ইরান। তাই ইরান দল নাইকির ক্রীড়া সামগ্রী ছাড়াই বিশ্বকাপে যাচ্ছে।

২০১৪ বিশ্বকাপে ফুটবল-পণ্য বিক্রি করে ২১০ কোটি ইউরো (২০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা) আয় করেছিল অ্যাডিডাস। ২০১৬ সালে ইউরো উপলক্ষে জার্মান প্রতিষ্ঠানের আয় আড়াই শ কোটি ডলার ছুঁয়েছিল। নাইকিও ফুটবল থেকে ২০০ কোটি ডলার আয় করেছে গত বছর। কিন্তু তাদের প্রবৃদ্ধিটা প্রতিষ্ঠানের মূল আয়ের তুলনায় অনেক কম। এবারের বিশ্বকাপ থেকে তাই ২০১৪ সালের মতো কিছু আশা করছে না দুই প্রতিষ্ঠানই। সে তুলনায় মাত্র ৪টি (২০১৪ সালে ছিল ৮টি) দলের জার্সি জানিয়েও তৃপ্ত জার্মান প্রতিষ্ঠান পিউমা।

তবে সবকিছুই নির্ভর করছে, জার্সি চাপানো দলগুলো বিশ্বকাপে কতটুকু যাচ্ছে তার ওপর। পাইরাল দাধানিয়া নামক এক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, ‘প্রতিযোগিতা চলার সময় কিংবা শেষ হওয়ার পর বিক্রি বাড়া কমা পুরোটাই নির্ভর করে কোন দল বিশ্বকাপে কত দূর গিয়েছিল।’ ২০১৪ সালে অ্যাডিডাসের বিক্রিবাট্টায় চ্যাম্পিয়ন জার্মানির ৩০ লাখ জার্সি বিক্রি বড় ভূমিকা রেখেছিল।