যে ৫ কারণে বিশ্বকাপ জিততে পারে আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার ব্যর্থতার দেয়াল এভাবেই ভাঙতে হবে মেসিকে। ছবি: এএফপি
আর্জেন্টিনার ব্যর্থতার দেয়াল এভাবেই ভাঙতে হবে মেসিকে। ছবি: এএফপি
>কে জিতবে বিশ্বকাপ? কার পক্ষে ধরতে চান বাজি? প্রথম আলো অনলাইনের নতুন ধারাবাহিক: যে ৫ কারণে। চতুর্থ পর্বে থাকছে, যে ৫ কারণে বিশ্বকাপ জিততে পারে আর্জেন্টিনা। লিখেছেন হাসান জামিলুর রহমান

১৯৭৮ ও ১৯৮৬—এই দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ রানার্স আপও তারা। কিন্তু ৩২ বছর ধরে বিশ্বমঞ্চে কোনো সাফল্য নেই আলবিসেলেস্তেদের। ১৯৯৩ সালের পর তাদের জাতীয় দল জেতেনি কোনো শিরোপাই। ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬—এই তিন বছরে টানা তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল হার সঙ্গী হয়েছে আর্জেন্টাইনদের। এবার কি পারবে তাঁরা ব্যর্থতার এই বৃত্ত ভাঙতে। অনেকে বলছেন আশা নেই। খোদ অধিনায়ক মেসি এই দলটাকে শিরোপার দাবিদার ভাবতে রাজি নন।
ফুটবলীয় অঙ্কের হিসেব কষলে আর্জেন্টিনা আসলেই এবার ফেবারিট নয়। দলটা এখনো গুছিয়েই উঠতে পারেনি নিজেদের। তবে শুধু ফুটবলীয় সমীকরণ মেনে তো সব হয় না। এটাই খেলার সৌন্দর্য। এখানে অনেক হিসাব ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। আর্জেন্টিনাও এবার অনেক বোদ্ধাদের ভুল প্রমাণ করে দিতে পারে।

পাঁচ কারণে বিশ্বকাপ জিততে পারে আর্জেন্টিনা

১. লিওনেল মেসি
যে দলে লিওনেল মেসি নামের একজন থাকেন, সেই দল মাঠে নামার আগেই প্রতিপক্ষ থেকে এগিয়ে থাকে। ফর্ম, বয়স অনুযায়ী এটাই হতে যাচ্ছে লিওনেল মেসির জন্য শেষ এবং সেরা সুযোগ জাতীয় দলের হয়ে কিছু জেতার। যদি নিজের সেরা ছন্দে থাকেন তিনি, তাহলে আর্জেন্টিনার ৩২ বছরের অপেক্ষা ঘুচতে যাচ্ছে এবারই।

২. ফরোয়ার্ড লাইন
নামগুলো একবার পড়ুন: গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, পাওলো দিবালা, লিওনেল মেসি। চোখের সামনে কেবল গোল আর গোলের দৃশ্য ভাসবে। সমস্যা হলো জাতীয় দলে এসে ক্লাবের পারফরম্যান্সটা ঠিকঠাক অনূদিত করতে পারেন না কেউই। তবে এবার বিশ্বকাপ জিততে চাইলে নিজেদের সেরা রূপটাই দেখাতে হবে আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ডের। কখনো পারেনি বলে পারবে না কখনো, এমনও তো নয়। যেকোনো দিন ঝলসে উঠলে এই আক্রমণভাগ তছনছ করে দিতে পারে চীনের মহাপ্রাচীরের মতো অটল রক্ষণও।

বিলিয়া-মাচেরানোদের নিবিড় অনুশীলন। এই দুজনের একজনকে সামলাতে হবে মাঝমাঠ আর রক্ষণের সেতুবন্ধ তৈরির ভার। ছবি: এএফপি
বিলিয়া-মাচেরানোদের নিবিড় অনুশীলন। এই দুজনের একজনকে সামলাতে হবে মাঝমাঠ আর রক্ষণের সেতুবন্ধ তৈরির ভার। ছবি: এএফপি


৩. ফেবারিট তকমা না থাকা

আর্জেন্টিনা যখনই বিশ্বকাপে ফেবারিটের তকমা নিয়ে গেছে, বেশি দূর এগোতে পারেনি। এবার যেমন বাছাইপর্বে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছে তারা। যার ফলে আর্জেন্টিনাকে ফেবারিটের তালিকায় রাখতে হচ্ছে পেছন দিকে; যা তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা। প্রত্যাশার চাপ কমিয়ে রাখছেন মেসি নিজেও। এবার আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে গেলেই খুশি হবে বাস্তববাদী সমর্থকেরা। এই চাপমুক্ত থাকাই মেসিদের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে সাহায্য করবে।

৪. পেপ গার্দিওলা ইফেক্ট
বিশ্বকাপের বছরগুলোতে পেপ গার্দিওলা যে দেশে কোচিং করিয়েছেন, সে দেশই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০১০ সালের স্পেন, ২০১৪ সালের জার্মানি। সে অনুযায়ী এবার ইংল্যান্ডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা। কিন্তু ভেতরের ব্যাপার হলো গার্দিওলার দলে যে দেশের খেলোয়াড়েরা বেশি ছিলেন, সে দেশই বিশ্বকাপে ভালো করেছে। সে হিসেবে গার্দিওলা কোচিং করিয়েছেন লিওনেল মেসি, হাভিয়ের মাচেরানো, নিকোলাস ওটামেন্ডি, সার্জিও আগুয়েরোদের। গার্দিওলার বর্তমান-সাবেক শিষ্যদের মেলা বসেছে আর্জেন্টিনা দলটায়।

৫. হোর্হে সাম্পাওলি
চিলিকে নিয়ে তাদের ফুটবল ইতিহাসের প্রথম বড় কোনো ট্রফি জিতিয়েছিলেন বর্তমান আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। সেটিও আবার আর্জেন্টিনাকেই হারিয়ে! স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়াতেও দারুণ পারফরম্যান্স ছিল তাঁর। জিতেছেন ইউরোপা লিগ। নিজস্ব একটি দর্শন সাম্পাওলির সবচেয়ে বড় শক্তি। যে দর্শন আর্জেন্টিনার খেলাকে বেশ প্রভাবিত করেছে। বিশ্বকাপে সাম্পাওলির দর্শন কাজ করলে আর্জেন্টিনাকে থামানো কঠিনই হতে যাচ্ছে। এমন একটি দল নিয়ে শিরোপা কী করে জেতা যায়, এটা সাম্পাওলির মতো কোচই সবচেয়ে ভালো জানেন।