মাঠে প্রমাণ করতে হবে আমরা সেরা: কেভিন ডি ব্রুইনা

>
কেভিন ডি ব্রুইনা
কেভিন ডি ব্রুইনা

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন। পেপ গার্দিওলার দল যে এই মৌসুমে অসাধারণ ফুটবল খেলেছে, সেটিও কেভিন ডি ব্রুইনা ছিলেন বলেই। ক্লাবের হয়ে আলো ছড়ানো বেলজিয়ান প্লেমেকার এবার দেশের হয়েও সেটা পারবেন?

প্রশ্ন: পানামা, তিউনিসিয়া ও ইংল্যান্ড—গ্রুপে আপনাদের সঙ্গী এই তিন দল। নকআউট পর্বে যেতে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
কেভিন ডি ব্রুইনা: যখন কেউ বিশ্বকাপে যায়, প্রথম লক্ষ্যটা অবশ্যই থাকে গ্রুপ পর্ব পেরোনো। যদি সম্ভব হয় গ্রুপের সেরা হয়েই। তবে কাজটা কঠিন। বিশ্বকাপে কোনো কিছুই সহজ নয়। গ্রুপে ইংল্যান্ডের মতো একটা দল থাকলে তো আরও নয়। ওদের দলটা তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে গড়া। ওদের বিপক্ষে জেতা খুব কঠিন হবে। তবে আমরা তৈরি। আশা করি, ম্যাচটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

প্রশ্ন: তার ওপর বেলজিয়ামের প্রতিভাবান ফুটবলারদের বেশির ভাগই তো ইংল্যান্ডেই খেলেন...
ডি ব্রুইনা: হ্যাঁ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন লিগগুলোর একটি। আর আমরা সেখানে নিয়মিতই খেলছি। এটা ফুটবলার হিসেবে আরও ভালো হতে সাহায্য করে। অনেক কিছুই শিখেছি সেখানে, আরও অনেক শেখার আছে। এই প্রক্রিয়াটা নিয়মিত চলতেই থাকবে। আর আমরা ইংল্যান্ডে খেলায় ওদের প্রায় সব খেলোয়াড়কেই চিনি, যেটা সুবিধা করে দিতে পারে। অবশ্য একইভাবে ওরাও তো আমাদের চেনে! তাই আমাদের মধ্যে ম্যাচটা শুধু গ্রুপের সেরাই ঠিক করে দেবে না, খুব আকর্ষণীয়ও হবে।

প্রশ্ন: অন্য দুই প্রতিপক্ষকে নিয়ে কী বলবেন?
ডি ব্রুইনা: পানামা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে। আর তিউনিসিয়া আফ্রিকার সেরা দলগুলোর একটি। প্রতিপক্ষ হিসেবে একটু ভিন্ন ঘরানার। নিজেদের দিনে তারা যেকোনো দলকেই চমকে দিতে পারে। তবে দল হিসেবে বেলজিয়ামও উন্নতি করেছে। চার বছর আগে আমরা এত বড় একটা মঞ্চের জন্য একটু বেশিই অনভিজ্ঞ ছিলাম। এখন আমরা আগের চেয়ে পরিণত। এই চার বছরে দল হিসেবে আমরা অনেক শক্তিশালী হয়েছি।

প্রশ্ন: ইংল্যান্ড তো বেলজিয়ামের সঙ্গে ২১ ম্যাচে মাত্র একবার হেরেছে...
ডি ব্রুইনা: সেটা ইতিহাস। এবার ইংল্যান্ডের দলটা বেশ ভালো। ২৮ জুন গ্রুপের শেষ ম্যাচে যখন ওদের বিপক্ষে খেলব, আমার মনে হয় সেই ম্যাচে সবকিছুর জন্যই লড়তে হবে। আর একবার মাঠে নেমে গেলে কিন্তু ইতিহাস আর খেলে না। তখন সবকিছু নির্ভর করে ওই নির্দিষ্ট দিনে আপনার পারফরম্যান্স কেমন হলো, সেটার ওপর। ইতিহাস বদলাতেই পারে, নতুন পাতাও লেখা হতে পারে। আমরা সামনের দিকেই তাকাতে চাই।

প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, বিশ্বকাপে সব দলের মধ্যে সেরা মিডফিল্ডটা বেলজিয়ামেরই। আপনি একমত?
ডি ব্রুইনা: বিশ্লেষকেরা এভাবে ভাবলে সেটা আমাদের জন্য বড় সম্মানের। তবে আমাদের মাঠে প্রমাণ করতে হবে যে আমরা সেরা। আর প্রমাণ করার জন্য, ম্যাচ জেতার জন্য দারুণ ফুটবল খেলতে হবে। এসব বিশেষণের চেয়ে আমরা অবশ্য দলের জন্য সেরা ফল এনে দেওয়া নিয়েই বেশি ভাবছি।

প্রশ্ন: ২০১৪ বিশ্বকাপে আপনারা কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছিলেন...
ডি ব্রুইনা: ১-০ গোলে হেরেছিলাম আমরা। সেবারের ফাইনালিস্টদের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোলটা করেছিল গঞ্জালো হিগুয়েইন, তাতেই আমাদের বাড়ির পথ ধরতে হলো। বিদায়টা বেদনাদায়কই ছিল, কারণ আমরা সবাই একেবারে শেষ পর্যন্ত এই ফুটবল উৎসবে থাকতে চেয়েছিলাম। সেটা হয়নি। আমরা তখন দল হিসেবে অনেক তরুণ ছিলাম।

প্রশ্ন: ২০১৬ ইউরোতে আবারও কোয়ার্টার ফাইনালেই হেরেছেন ওয়েলসের কাছে...
ডি ব্রুইনা: সেটা আমাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা হয়ে এসেছে, কারণ আমাদের সবাই শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলোর একটি মনে করেছিল। তবে ফুটবল এমনই, কেউ সব ম্যাচ জিততে পারে না। শিক্ষা হয়েছে সেদিন আমাদের। আপনাকে সব সময়ই নিজের সেরা অবস্থায় থাকতে হবে, বিশেষ করে নকআউট পর্বে। একটা দিন খারাপ গেলে সেটিই আপনাকে ভোগাতে পারে। ওয়েলস সেদিন অসাধারণ খেলেছিল, আর আমরা ভালো খেলিনি। এটা বদলানো দরকার আমাদের।

প্রশ্ন: নতুন কোচ রবার্তো মার্তিনেজকে নিয়ে কী বলবেন?
ডি ব্রুইনা: তিনি অসাধারণ একজন কোচ, তাঁর অধীনে আমরা ভালোও করছি। ১৩ ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরেছি। এভাবে ধারাবাহিকভাবে জিতে যাওয়া দলের জন্য ভালো। অনেক দূর যাওয়ার মতো প্রতিভা আমাদের আছে। এখন সেটা মাঠে প্রমাণ করতে হবে। কীভাবে খেললে আমরা সবচেয়ে ভালো ফুটবলটা খেলতে পারব, সেটা নিশ্চয়ই কোচ খুঁজে বের করবেন।

প্রশ্ন: নিচ থেকে খেলা গড়ে দেওয়া, নাকি গোল-স্কোরিং ফরোয়ার্ড—কোন ভূমিকাটা বেশি পছন্দ আপনার?
ডি ব্রুইনা: এমন কাউকে বলটা পাস দেওয়া, যাঁর কাছে বেলজিয়ামের পক্ষে বলটাকে জালে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না—এটা করতে পারলেই আমি বেশি খুশি। তবে কোচ ও তাঁর দল মিলে যে পরিকল্পনা ঠিক করে দেন, আমাদের সেটি মেনেই খেলতে হয়। আমার দায়িত্ব দলের অন্যদের জন্য খেলা, গোল গড়ে দেওয়া, পাশাপাশি দরকার পড়লে গোলও করা। আমার ভূমিকা কী হবে, সেটি কোচ ঠিক করে দেবেন। সেটা মাঠে ঠিকঠাক করতে পারলেই আমি খুশি।