নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেও পারছেন না সাকিব

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান
>নিজেকে আড়াল করতে পারছেন না সাকিব আল হাসান। দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ হেরে বড় অসহায়ই মনে হচ্ছে তাঁকে

আঙুলের স্পর্শে দ্রুত রং বদলে যাচ্ছে মোবাইল স্ক্রিনের। ফেসবুকই হবে। কখনো কারও স্ট্যাটাসে দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে, কখনো ছবিতে। একটু উঁকি দিয়ে মনে হলো কোনো বুটিক হাউসের ঈদপোশাকের ছবি হবে। তবে একটু পরই সাকিব আল হাসানের সব মনোযোগ কেড়ে নিল অত্যাধুনিক মডেলের সব গাড়ি।

আফগানিস্তানের কাছে হেরে দল ‘ভূত’ হচ্ছে, আর অধিনায়ক কিনা মশগুল ঈদের পোশাক এবং গাড়ির ছবি দেখাতে! কিন্তু ফেসবুকে গাড়ি, পোশাকের ছবি দেখতে দেখতে কি কখনো তাঁকে নিয়ে করা ট্রলগুলো সাকিবের চোখে পড়ে না? তাঁকে ‘অপরাধী’ করে বানানো গানটা কি শোনেননি সাকিব! তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে তোলা প্রশ্নও কি সাকিবকে স্পর্শ করছে না!

সাকিবই জানালেন, তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুব কঠিন নিরাপত্তায় শৃঙ্খলিত। ফেসবুক-বন্ধুজগতের বাইরে অন্য কারও কোনো কিছুই ভেসে ওঠে না সাকিবের অ্যাকাউন্টে। আর সাকিবের ফেসবুক-বন্ধু তালিকাটিও খুব ছোট। বন্ধুসংখ্যা নাকি দুই শর বেশি নয়।

কাল দুপুরের পর হোটেল লবিতে বাংলাদেশের দুই সাংবাদিকের সঙ্গে ঘণ্টা দেড়েকের আড্ডায় আফগানিস্তান সিরিজ প্রসঙ্গকে দারুণভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন সাকিব। যখনই রেকর্ডার অন করতে বা দু-একটি প্রশ্ন করতে চাওয়া হয়, ‘কথা তো বলছিই...’ বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন।

রুবেল ওই ওভারটা এত খারাপ বল করলেন! সাংবাদিকের পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে সাকিব বলেন, ‘এটা ওকেই জিজ্ঞেস করুন। ও ভালো বলতে পারবে কী হয়েছে। আমি কী করে বলব।’ কিন্তু পরে অন্য প্রসঙ্গে নিজেই বলেন, ‘আইপিএলের এক ম্যাচে আমাদের প্রতিপক্ষের ১২ বলে ১৭ রান দরকার ছিল। আমাদের দুই বোলার ১২টি বলই দিয়েছে ইয়র্কার’, তখন গোপন থাকে না তাঁর মনের ভেতর গুমোট পাকানো হতাশা।

ইংল্যান্ডের স্টিভ রোডস বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিতে চলেছেন। সাকিব তাঁর দলে কাউন্টি খেলেছেন। কেমন হবেন রোডস? সাকিব হেসে উত্তর দেন, ‘নিশ্চয়ই ভালো হবেন। নয়তো আমাকে কেন দলে নিয়েছিলেন!’ কিন্তু লক্ষ্যহীন এই দলকে নিয়ে কী করবেন রোডস? খেলোয়াড়েরা দায়িত্ব না নিলে কোচ দিয়ে কি আসলে কাজ হয়? সাকিব এবার বলে ফেলেন, ‘কেন হবে না! কোচের দরকার আছে। আপনি যখন বুঝবেন কোচ আপনাকে খেলার সুযোগ দিতে চান, আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আইপিএলে আমি এতগুলো ম্যাচ নইলে কীভাবে খেললাম!’

কথা বলতে বলতে মোবাইলে সিপিএলের দল বারবাডোজের কী একটা খবরে ঢুকে পড়লেন। দু-তিনজন খেলোয়াড়ের নাম বলে স্বগতোক্তি, ‘দলটা অনেক ভালো। আমার অবশ্য আইপিএলের হায়দরাবাদ, সিপিএলের বারবাডোজ দুটো দলই অনেক ভালো পড়েছে। অনেক আত্মবিশ্বাসী।’ আর বাংলাদেশ দল? সাকিব না শোনার ভান করে আরও নিবিষ্ট মুঠোফোনে। স্পর্শকাতর হতে পারে এমন বিষয়ে কিছু না বলার পণ! অধিনায়ক হিসেবে মাঠে তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সাকিব বলেন, ‘সিরিজ শেষ হোক। কাল (আজ) তো সব প্রশ্নের উত্তর দেবই।’

সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছে। শেষ ম্যাচ থেকে কিছু পাওয়ার আছে বাংলাদেশের? রুমে ফিরতে লিফটের দিকে এগোতে থাকা সাকিব থেমে যান, ‘কেন থাকবে না! কাল (আজ) তো আমাদের হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন।’ কথাটা বলেই হেসে ফেলেন সাকিব, ‘এই তো...লেখার একটা কিছু পেয়ে গেলেন।’

এত চেষ্টা করেও সাকিব লুকাতে পারলেন না নিজেকে। অধিনায়কের অসহায়ত্ব কতভাবেই না প্রকাশ পায়!